চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চার মাস ধরে বেতন মিলছে না

চমেক হাসপাতাল হ চরম হতাশ আউটসোর্সিং কর্মচারীরা হ ‘নীতিমালা পরিবর্তনের ‘মারপ্যাঁচে’ আটকে গেছে বেতন’

ইমাম হোসাইন রাজু

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

এসএসসি পাস করা নুরুল আমিন (ছদ্মনাম) কাজ করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের স্ট্রেচার বয় হিসেবে। যদিও তার মূল পদ অফিস সহায়ক (আউটসোর্সিং)। অভাবের দায়ে চলতি বছরে শুরুতে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিং হিসেবে হাসপাতালে যোগ দিতে গিয়েও কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে। তবুও কাজ করে যাচ্ছেন এই কর্মচারী। কিন্তু গত চারমাস থেকেই বেতন পাচ্ছেন না নুরুল আমিন।

শুধু নুরুল আমিন নয়, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া সর্বমোট ১০৯ জনের বেতন বন্ধ রয়েছে গত চারমাস থেকেই। এরমধ্যে অনেকেই বেতন না পেয়ে চাকরি ছেড়ে চলে গেলেও, অনেকেই নিজের প্রাপ্য পাওয়ার আশায় এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত অর্থ ছাড় না পাওয়ায় তাদের বেতন দিতে পারছে না তারা। তবে সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভুলে আটকে আছে এসব কর্মচারীর বেতন।

এর আগে গত বছরের শুরুতে বিভিন্ন অভিযোগে চমেক হাসপাতাল থেকে স্পেশাল-আয়া-বয়দের ছাঁটাইয়ের পর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রথম ধাপে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে

১০৯ জন অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না অফিস সহায়ক পদে থাকা এসব কর্মচারীরা।
তথ্য বলছে, গত বছরের জুন মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১০৯ জন অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নিয়োগ দিলেও দুই মাস গড়াতেই বন্ধ হয়ে যায় তাদের বেতন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ফান্ড থেকে জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করা হলেও পরবর্তী মাস থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ এবং তাদের বেতন দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নজরে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেটের মধ্যেই আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগকৃতদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার সবগুলোই হাসপাতালের নিজস্ব ফান্ডে রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়ার পরপরই ১০৯ জনের বেতন যেন না ছাড়া হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাতে উল্লেখ করা হয়, নীতিমালা বহির্ভূত হওয়ায় এসব টাকা ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। যার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই দুই মাসের বেতন নিজস্ব ফান্ড থেকে দিতে বাধ্য হয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, এ বিষয়ে একাধিকবার অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে একাধিকবার চিঠি চালাচালি করেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবুও দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে আছে ১০৯ জনের বেতন। এরমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবুও নীতিমালা বহির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তই দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পুরানো নীতিমালায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ‘অফিস সহায়ক’ পদে নিয়োগকৃতদের বেতন দেওয়ার বিষয়টি থাকলেও পরবর্তী নীতিমালায় তা অবৈধ করে দেয়া হয়। তাতে বলা হয় অফিস সহায়ক পদ আউটসোর্সিং না হয়ে তা স্থায়ী হবে। আর স্থায়ীদের বেতন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। নীতিমালা পরিবর্তনের ‘মারপ্যাঁচে’ আটকে গেছে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া অফিস সহায়কের বেতন।

এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এসব জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই অর্থ দিচ্ছে না। দুই মন্ত্রণালয়ে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। যার কারণে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। তবুও এ বিষয়ে যোগাযোগ চলছে। আশা করি একটি সুরাহা হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট