চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংবর্ধনার জবাবে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া

রাজনীতিতে পদ-পদবী নয় মানুষের আস্থাই বড় বিষয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া বলেছেন- রাজনীতিতে পদ-পদবী বড় বিষয় নয়। রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মানুষের আস্থা ও ভালবাসা অর্জন করা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে সম্মান ও ভালবাসা আমাকে দেখিয়েছেন সে সম্মান তিনি চট্টলার সাধারণ মানুষকেই দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়াকে সংবর্ধনা দিয়েছেন দলের চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা। এ সময় বক্তৃতাকালে বিপ্লব বড়ুয়া এ কথা বলেন। গতকাল বুধবার নগরীর পুরাতন রেলস্টেশনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ। সংবর্ধনায় বিপ্লব বড়–য়া বলেন, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে আমার একটি পদের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বে আমার মতো একজন নগন্য মানুষ নয়, শেখ হাসিনা বীর চট্টলার আটজন মানুষকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়

কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দিয়েছেন। শুধু সরকার পরিচালনায় নয়, দল পরিচালনায়ও চট্টগ্রাম যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আটজনকে সম্মান করে তারাই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি আরো বলেন- শেখ হাসিনা শুধু আমার রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি আমার ব্যক্তিগত শিক্ষক ও রাজনৈতিক অভিভাবক। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যিনি আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক করেছেন।’

বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, আমি কখনও নেতা হতে চাইনি, আমি রাজনীতি করেছিলাম অনুরাগের বিষয় হিসেবে। আমি কখনও পদ-পদবী চাইনি। দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি প্রতিটি কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। নামের আগে বিশেষণ, পদ-পদবী আমাকে বিব্রত করে।

সংবর্ধনার জবাবে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘মানুষের জীবনে বিশেষ কিছু মুহূর্ত থাকে, যখন ভাষা হারিয়ে যায়। আমি আজ আপনাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি, যে সম্মান পেয়েছি, আমি বাকরুদ্ধ, আমি অভিভূত। আমি জানি, আপনাদের এই ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা, উদ্দীপনা, সব আয়োজন আমাদের প্রাণপ্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। আমৃত্যু যাতে আপনাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে যেতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হতে পারি, কিন্তু আমি চট্টগ্রামের সন্তান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন আমি আমার শেকড়কে ভুলে না যাই। আপনাদের এ ভালোবাসা যাতে ভুলে না যাই, সেই কামনা করি। আমার কর্ম, সততা, সকল প্রচেষ্টা দিয়ে চট্টগ্রামের মুখ যেন আমি সবসময় উজ্জ্বল রাখতে পারি, সে কামনা করছি।’

পেশাগত জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করে আমি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম। ২০০১ সালে আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের প্রযোজক ছিলাম। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ছাত্রলীগ করার কারণে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন। আমি ক্ষোভে-ঘৃণায় লন্ডনে চলে যাই এবং সেখানে আইন বিভাগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনে আমার বন্ধুবান্ধবরা সবাই বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। আমি যখন রাজনীতি করার জন্য লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসছিলাম, বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে বাধা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি ভুল করছি। আজ আমি আমার বন্ধুদের বলতে চাই, আমি সেদিন ভুল করিনি।’ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের কথা উল্লেখ করে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘মানুষ হিসেবে ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করব।’ আমাদের রাজনৈতিক জীবনেও ভুলত্রুটি থাকতে পারে। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামী দিনে নিজেদের পরিচালনা করব। আমরা নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চলব।

সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র দেশে রয়েছে, দেশের বাইরেও রয়েছে। আমরা যারা নেত্রীকে ভালোবাসি, আওয়ামী লীগ করি, আমাদের সব ধরনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রের প্রতি, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। আমি আহ্বান জানাব, আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবন শৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করবেন।’

১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্র্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে জেতাতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বিপ্লব বড়–য়া। তিনি বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন আহমেদ যখন কচি-কাঁচার মেলার সংগঠক ছিলেন, তখন আমি এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তিনি ছাত্রলীগ করেছেন, যুবলীগ করেছেন, আওয়ামী লীগ করছেন। জীবনে কোনোদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কাউকে নেতা মানেননি। নেত্রী অনেক আশা করে মোছলেম ভাইকে নির্বাচন করার জন্য পাঠিয়েছেন।’

নেতাকর্মী ও ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মোছলেম ভাই শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি, চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের জন্যও রাজনীতি করেছেন। আপনারা নেত্রীকে নিরাশ করবেন না, মোছলেম ভাইকে আশাহত করবেন না। আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে মোছলেম ভাইকে জয়ী করবেন।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদত মফিজুর রহমান প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট