চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আগামী মাসেই উৎপাদনে চীনা কোম্পানি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর দেশের বৃহত্তম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

এনায়েত হোসেন মিঠু হ মিরসরাই

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

চার বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞশেষে দেশের সর্ববৃহৎ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এখন বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসেই (ফেব্রুয়ারি) উৎপাদনে যাবে এখানকার প্রথম কারখানা চাইনিজ মালিকানাধীন জেনিয়ান কেমিকেল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে আগামী মাসেই চাইনিজ মালিকানাধীন কেমিকেল কারখানা জেনিয়ান কেমিকেল উৎপাদনে যাচ্ছে। এছাড়া বসুন্ধরা, এশিয়ান পেইন্ট, ম্যাগডোনাল স্টিল, মডার্ন সিনট্রেকসহ অন্তত ৯টি প্রতিষ্ঠান শীঘ্রই

উৎপাদনে যাবে।’ বেজা’র সহকারী প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস ওয়াহিদ (সিভিল) পূর্বকোণকে জানান, ইতোমধ্যে এখানে সম্পন্ন হয়েছে ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাকা সড়কের কাজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া বাজার থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ইপিজেড এলাকা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চার লেন সড়ক। যার দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এটির নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা এভিনিউ। আবার মেরিন ড্রাইভ সড়ক যুক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের সঙ্গে। তিনি আরো জানান, প্রায় ১২ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড, নেভি ও চাইনিজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার কোম্পানি সমুদ্র তীর ঘেঁষে তৈরি করছে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সুপার ড্রাইভ নামে নতুন একটি বেড়িবাঁধ যা যুক্ত হবে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে।

বেজার কর্মকর্তারা জানান, গত চার বছর সময়ে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় মোট ২ হাজার একর জমি মাটি ভরাট করে কারখানা তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশি বিদেশি ৫৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বেজা’র কাছ থেকে জমি নিয়েছে।

জানা গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর মিরসরাই অঞ্চলে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগাং পাওয়ার। বসুন্ধরা গ্রুপ এখানে সব

মিলিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। ২ শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১ শ’ কোটি টাকা, গ্যাস-১ লিমিটেড ২ শ’ কোটি টাকা, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২ শ’ কোটি টাকা, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫ শ’ কোটি টাকা, আরমান হক ডেনিমস ১ শ’ কোটি টাকা এবং অর্কিড এনার্জি ২ শ’ কোটি টাকা। পিএইচপি গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এদিকে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন স্থাপন করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করবে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে ৫০ একর জমি।

প্রকল্পের আদ্যোপান্ত :
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গভর্নিং বোর্ডের সভায় মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এখানে মোট ৩০ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। মোট ৫০টির মত বিশেষায়িত অঞ্চল এখানে স্থাপিত হবে। বর্তমানে ২ হাজার একর জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করে কারখানা গড়ে উঠছে। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এখানে বেপজা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৯ সালে মিরসরাই-সীতাকু- ও ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় বর্ধিত করা হয় দেশের বৃহত্তর এ শিল্পাঞ্চল। এটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। যার আওতায় থাকবে মিরসরাই, সীতাকু- ও সোনাগাজী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ‘মিরসরাইকে শিল্পনগরীতে রূপান্তর করতে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান নেওয়া হয়েছে। এখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। শিল্প-কারখানা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, বিমানবন্দর, আবাসিক এলাকা ও পর্যটন সুবিধাও রাখা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য এবং আমদানিকৃত পণ্য সহজে আনা নেয়ার সুবিধার্থে শাহেরখালী ও মুরাদপুর ইউনিয়ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সমুদ্র বন্দর।’
মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০১০ সালে মহামায়া সেচ প্রকল্প উদ্বোধন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিরসরাইয়ে আসলে সেখানে আমি ইছাখালী চরকে বিনিয়োগের উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানাই। প্রধানমন্ত্রী তখন বিষয়টিকে বেশ আগ্রহের সঙ্গে দেখেছিলেন। পরবর্তীতে প্রকল্পের একটি পরিকল্পনা আমি সরকারের কাছে তুলে ধরি। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী নিজে ইছাখালীতে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী গড়ে তোলার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট