চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শ্রীপুর-খরণদ্বীপে সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্ক

লোকালয়ে হাতি

সেকান্দর আলম বাবর হ বোয়ালখালী

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

শ্রীপুর-খরণদ্বীপ-জ্যৈষ্ঠপুরার লোকালয়ে হাতির আনাগোনায় আতঙ্কে দিন পার করছে স্থানীয়রা। গত কয়েকদিন জ্যৈষ্ঠপুরার পাহাড়ের পাদদেশে এদের বিচরণ থাকলেও গত বৃহস্পতিবার রাতে ফের হাতি নেমে আসে পাহাড় থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর বড়–য়া পাড়া ও খরণদ্বীপ মুনসীপাড়ার লোকালয়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে লোকজন বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করে এলাকাগুলোতে। সকালে মসজিদগুলোতে মুয়াজ্জিন বাধ্যগতভাবে আজান দিতে গেলেও, মুসল্লিশূন্য হয়ে পড়েছে মসজিদগুলো। হাতি আতংকে একপ্রকার অস্বস্তিকরভাবে জীবন পার করছে এলাকাবাসী।

খরণদ্বীপ মুন্সীপাড়ার বাসিন্দা মাশফিক সতেজ জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাহাড় থেকে নেমে দুটি হাতি খরণদ্বীপ মাওলানা মহিউদ্দিন হুজুরের বাড়ি, সিরাজের বাপের বাড়ি হয়ে হাশেমের বাপের বাড়িতে আসে। এসময় ওই বাড়ির আমানত উল্লাহ’র ঘর ক্ষতিগ্রস্ত করে। পুরোরাত হাতি দুটি মুন্সীপাড়া এলাকায় অবস্থান নেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়রা গভীর রাতে মশাল জ্বালিয়ে, পটকা ফুটিয়ে হাতি দুটি পাহাড়ের দিকে ফেরৎ পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে সফল হওয়া যায়নি। হাতির অবস্থানের কারণে খরণদ্বীপের দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সকালে মুসল্লিশূন্য ছিল মসজিদগুলো। হাতি দুটি শেষ পর্যন্ত পুরোরাত গুরা মিয়া মসজিদের সামনে হাশেমের বাপের বাড়ির উঠানে ছিল।

স্থানীয় মো. শাহেদ জানান, সকাল ৬টার দিকে হাতি দুটি তুলাতল দিয়ে শ্রীপুর বড়–য়া পাড়ার দিকে চলে যায়। এসময় মাঠের ধানের ব্যাপক ক্ষতি করে। শ্রীপুর ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সমদ্য মো. হাসান চৌধুরী জানান, সকালে হাতি দুটি যাওয়ার সময় শ্রীপুর বোধিস্বত্ব বিহারের ক্ষতি করে। এছাড়া অমর নাথ বড়–য়ার প্রায় ৩০ আড়ি ধান খেয়ে ফেলে। ধানী জমির মালিক শিমুল বড়–য়া, মলয় বড়–য়া, মন্টু বড়–য়া, গুনু বড়–য়া, ভর্ত বড়–য়া, শিপ্রা বড়–য়া, পুলক বড়–য়া ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া কানুর দিঘি এলাকায় নজরুলের ঘর ভেঙ্গে দেয়।
এদিকে লোকালয়ে হাতির উপস্থিতির খবরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তারা পাহাড়ে গাছ নিধন, দখল বন্ধ করে হাতির নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বন বিভাগের অফিসার (চুনতি রেঞ্জ) মো. ফোরকান বলেন, এটা প্রায়শঃ ঘটছে বোয়ালখালীতে। আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছি। এর মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় একাধিক টিম গঠন করা হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং বন বিভাগ থেকে আর্থিক সহযোগিতাও করা হবে। তাদের কাজ হবে হাতি লোকালয়ে আসলে আবার পাহাড়ে ফেরত পাঠানো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন জানান, বিষয়টি প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। লোকালয়ে হাতি চলে আসার কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুনভাবে যাতে পাহাড় উজার না হয়, দখল না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি বন বিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ও ২৪ নভেম্বর উপজেলার কধুরখীল, চরণদ্বীপ, খরণদ্বীপ, জ্যৈষ্ঠপুরায় ৯টি হাতির একটি পাল লোকালয়ে নেমে এসে তা-ব চালায়। এতে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট