চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাঙালির বেদনাঘন দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। একাত্তরের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছিল এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক তীব্র বেদনাঘন দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালায় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাজয় অনিবার্য। তারা আরো মনে করেছিল বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে। কিন্তু কী অপরাধ ছিল জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের? শুধু মেধাশূন্য করে বাঙালি জাতির মেরুদ- ভেঙে দিতেই এই গভীর এবং ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দু’দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। পরাজয় অনিবার্য বুঝতে পেরেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতেই দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকা- ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পান। বুদ্ধিজীবীদের শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই তাঁদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’র সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। বাঙালি জাতি বরাবরই বিজয়ের উৎসবের আগে এই দিনে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অগণিত মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া নানা আয়োজন থাকে দিনভর।

সিটি মেয়র : এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় খুলশী পাহাড়তলীস্থ বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সিটি মেয়র আলহাজ আ জ ম নাছির উদ্দীন পাহাড়তলীস্থ বধ্যভূমি শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া সকাল সাড়ে ১১টায় ইউএনডিপি’র ব্যবসা সহায়তা, শিক্ষা সহায়তা এবং শিক্ষানবীশ কার্যক্রমের অনুদান বিতরণ এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র আলহাজ আ জ ম নাছির উদ্দীন।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল এগারোটায় পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকালে প্রেস ক্লাব ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী অনুরোধ জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট