চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গাইনি ডাক্তার না থাকায় প্রসূতি সেবা কার্যক্রম বন্ধ

৫০ শয্যার হাসপাতাল চলছে ৩১ শয্যার জনবলে

রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার ছয় বছর পরও পোস্টিং দেয়া হয়নি কোন ডাক্তার। বর্তমানে মাত্র দু’জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন। তারাও বিশেষ রোস্টার করে প্রত্যেক সপ্তাহে ৩-৪ দিন করে কর্মস্থলে থাকেন। এতে বাস্তবে একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারই কোন রকমে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীনে ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে ২০১৩ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের উদে¦াধন করেন। নতুন ভবন উদ্বোধন হলেও এখনো পর্যন্ত ডাক্তারসহ কোন জনবল পোস্টিং দেয়া হয়নি এখানে। সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচ এন্ড এফপিও), ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৯ জন মেডিকেল অফিসার ও একজন ডেন্টাল সার্জন থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে রামগড় হাসপাতালে ইউএইচ এন্ড এফপিও এবং দুইজন মেডিকেল অফিসার ও একজন ডেন্টাল সার্জন আছেন। এছাড়া উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার আছেন ৩ জন। সূত্র জানায়, কর্মরত দুজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে একজনের পোস্টিং থাকলেও অন্যজনকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে হাসপাতালে ডেপুটেশনে এনে চিকিৎসার কাজ চালানো হচ্ছে। তবে দুজন মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকেন না। তারা বিশেষ রোস্টার করে প্রত্যেকে সপ্তাহে ৩-৪ দিন করে কর্মস্থলে থাকেন। একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এ দুজন আউট ডোর এবং ইনডোরের চিকিৎসা দেন। এছাড়া ডেন্টাল সার্জনও সপ্তাহে ২-৩ দিন কর্মস্থলে থেকে আউটডোরে রোগী দেখেন। ডাক্তারের পদ শূন্য থাকায় কোন রকমে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এদিকে, গাইনি ডাক্তার না থাকায় প্রসূতি সেবা কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিনাত রেহানা জানান, হাসপাতালটি ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও জনবল পোস্টিং দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ৫০ শয্যার কাঠামো অনুযায়ী জনবল পদায়নের অনুমোদন এখনও দেয়নি মন্ত্রণালয়। এতে ৩১ শয্যা হাসপাতালের জনবলের কাঠামো অনুযায়ীই চলছে এটি। তিনি আরও বলেন, ৩১ শয্যার হাসপাতালের জনবল অনুযায়ী ইউএইচ এন্ড এফপিও, ৪ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ৩ জন মেডিকেল অফিসার, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), একজন সহকারী সার্জন ও একজন ডেন্টাল সার্জন থাকার কথা থাকলেও এখানে তাও নেই। শুধুমাত্র একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন ডেন্টাল সার্জন পোস্টিং রয়েছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন মেডিকেল অফিসারকে ডেপুটেশনে আনা হয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত দুজন মেডিকেল অফিসার ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের। ডা. জিনাত রেহানা আরও জানান, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিতই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিকেল অফিসার বলেন, পার্বত্য এলাকায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা সমতল জেলা থেকে ভিন্ন হওয়ায় এখানে ডাক্তাররা আসতে চান না। তিনি বলেন, এখানে (পার্বত্য জেলা) বদলি হয়ে আসার পর স্বাভাবিকভাবে পুনরায় সমতলে বদলি হয়ে যেতে না পারার কারণেই মূলত: কেউ আসতে চায় না। এদিকে সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী আকস্মিকভবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শনে এসে একজন মেডিকেল অফিসার ছাড়া ইউএইচ এন্ড এফপিওসহ অপর মেডিকেল অফিসারকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের অনেকগুলো পদ শূন্য পড়ে আছে। এ অবস্থায় যাদের পোস্টিং রয়েছে, তারাও যদি সবাই কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত না থাকেন মানুষ তো চিকিৎসা সেবা পাবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট