চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে বিড়ম্বনা

লোহাগাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, লোহাগাড়া

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়া উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখানে রয়েছেন একজন দাপ্তরিক কর্মকর্তা, ১ জন ভেটেনারি সার্জন। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে অনেক গবাদি পশু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সঙ্কটে অকালে মারা যায়। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে ডেইরি খামারের মালিকের সাথে আলাপকালে তাঁরা বিভিন্ন সমস্যা ও বিড়ম্বনার কথা বর্ণনা করেন। তারা আর্থিক সহায়তায় সরকারের পৃষ্টপোষকতা ও চিকিৎসাক্ষেত্রের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

প্রাপ্ত সূত্র মতে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট, বড়, মাঝারি ডেইরি খামার রয়েছে ৪৬টি, ছাগলের খামার ১৬টি, ভেড়ার খামার ২টি, হাঁসের খামার ১টি, মুরগির খামার ৫৫০টি। এতে গরুর সংখ্যা আনুমানিক ৫০ হাজার ৫শ ৪৮টি, মহিষ ৩৮৫টি, ছাগল ৩০ হাজার ২৭০টি, ভেড়া ১০৫টি, হাঁস ৭৮ হাজার ৪শ ৩৫টি, মুরগী ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬শ ৭৫টি, কবুতর ১ হাজার ৪শ, কোয়েল ৮ হাজার ২শ ২০টি। ৪৬টি ডেইরি খামারের মধ্যে উপজেলা সদর ইউনিয়ন লোহাগাড়ায় ১২টি, গবাদি পশুর সংখ্যা ২৯৩টি, তন্মধ্যে গাভীর সংখ্যা ১৩৩টি। প্রাপ্ত দুধ ১ হাজার ৩শ ৯৫ লিটার। চুনতিতে খামার সংখ্যা ১৩টি। গবাদি পশুর সংখ্যা ১শ ৫৭টি। গাভীর সংখ্যা ৫৫টি এবং প্রাপ্ত দুধ ৩শ ৬১ লিটার। আমিরাবাদে খামার সংখ্যা ৭টি, গবাদি পশুর সংখ্যা ৬৫টি এবং গাভীর সংখ্যা ৪৩টি, উৎপাদিত দুধ ১শ ৫৮ লিটার। পুটিবিলার খামার সংখ্যা ৯টি। গবাদি পশুর সংখ্যা ৯৬টি। গাভীর সংখ্যা ৩৮টি এবং উৎপাদিত দুধ ৯২ লিটার। কলাউজানে খামার সংখ্যা ৩টি। গবাদি পশুর সংখ্যা ২৩টি, গাভীর সংখ্যা ১০টি এবং উৎপাদিত দুধ ২৭ লিটার। চরম্বায় খামার সংখ্যা ২টি। গবাদি পশুর সংখ্যা ১৯টি, গাভী ১৩টি এবং উৎপাদিত দুধ ৩২ লিটার। এ’ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন জনপদের লোকালয়ের অসংখ্য পরিবার ঘরোয়া পরিবেশে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন। তন্মধ্যে পদুয়ার হানিফার চর ও চরম্বার রাজঘাটা এলাকার অনেকেই মহিষ পালন করেন। তাঁরা স্থানীয় নাফারটিলা বাজারে মহিষের দই বিক্রি করে অর্থ উপার্জনও করছেন। অনুরূপভাবে কলাউজানের নয়ারহাট এলাকার আশেপাশের অনেক পরিবার ঘরোয়াভাবে গাভী পালন করছেন। তাঁরাও নয়াবাজারে গরুর দই বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এ’ছাড়া প্রায় বাড়িতে মুরগি এবং কোন কোন বাড়িতে হাঁসও পালন করা হয়।

এদিকে প্রায় গবাদি পশু চুরি ঘটনায় আতংকে রয়েছেন খামারিরা। কোথাও না কোথাও গবাদি পশু চুরির ঘটনায় খামারি ও সাধারণ পশু পালনকারীরা নিঘুর্ম রাত কাটছেন। তবে পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় সহযোগিতায় খামারি ও সাধারণ পশু পালনকারীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি কাজ করছে। এছাড়াও অনেক খামারি খামারের জন্য চিকিৎসক রেখেছেন। উপজেলায় শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ লোক গরু, মহিষ ও ছাগল পালন করেন এবং ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ হাঁস, মুরগি পালন করেন। বছরে উক্ত সম্পদ হতে প্রচুর টাকা আয় হয়।
কলাউজানের খামার মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, তাঁর খামারে বর্তমানে উন্নতজাতের ১০টি গাভী ও ২টি বাচ্চা রয়েছে। দুধ উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক ১৭/১৮ লিটার। পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবায় কোন অবহেলা নেই। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর আন্তরিক সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রায় ২ মাস পূর্বে ২টি গরু গুটি বা ফোসকা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসাসেবায় আরোগ্য লাভ করেছে। তিনি আগামীতে ৫০/৬০টি গরুর খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

উপজেলার খাজা ডেইরি খামারের মালিক সুলতান আহমদ চৌধুরী বাদশা বলেন, তিনি প্রায় ২০ বছর পূর্বে শখ করে খাঁটি দুধ সরবরাহ করার জন্য ডেইরি খামার প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ৩০টি গাভী ও ১০টি ষাড় আছে এবং দুধ পান প্রায় ১শ লিটার। সরকারের প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা, চিকিৎসা ও উন্নতমানের ওষুধ সঙ্কট ও চুরির আতঙ্কে তিনি হতাশ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসাসেবা পেতে নানা বিড়ম্বনার কারণে তিনি খামারে পশু চিকিৎসায় মাসিক বেতনভুক্ত চিকিৎসক রেখেছেন। সাম্প্রতিককালে লাম্পি স্কীন রোগে তাঁর খামারে ৫টি গরু আক্রান্ত হয়েছিল। সঠিক চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করে। অনুরূপ মন্তব্য করেন চুনতির গ্রিন ভিউ ডেইরি খামারের মালিক অধ্যাপক হামিদুর রহমান। তাঁর খামারে গাভী আছে ১১টি, ষাঁড় আছে ৭টি। দুধ উৎপাদন প্রায় ৫০ লিটার। উন্নত চিকিৎসার জন্য মাসিক বেতনভূক্ত চিকিৎসক রেখেছেন। উল্লেখিত রোগে তাঁর খামারেও ৩টি গরু আক্রান্ত হয়েছিল। চিকিৎসার পর ভাল হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা পেতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম দেওয়ান জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বৃদ্ধিকরণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে তাঁর দপ্তর সার্বক্ষণিক আন্তরিক। কোন ধরনের অবহেলা না করে যখনই প্রয়োজন হয় তখনই তিনি চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য কর্মীদের প্রেরণ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট