চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান

জালে রুই-কাতলা

৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতি করলে তাকে দুদকের বারান্দায় আসতেই হবে মন্তব্য করে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ক্যাসিনোকা-সহ অন্যান্য উপায়ে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে, যাদের মধ্যে বড় বড় লোকজনও রয়েছেন। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশনের (র‌্যাক) আয়োজনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।-বিডিনিউজ
ইকবাল মাহমুদ বলেন, “যদি আপনি দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে আপনাকে দুদকের বারান্দায় আসতেই হবে। দুর্নীতি করে কেউ ভাববেন না আপনি ছাড় পাবেন, অন্তত এই বার্তাটা আমরা দিতে চাই। “দুদকের জাল থেকে কেউ তদবির করে বেরিয়ে যাবেন, তা হবে না। তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।”

দুদক এখন আগের জায়গায় নেই এবং এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ক্যাসিনো বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ে যারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন, এমন ১৮৭ জনের নাম তাদের তালিকায় রয়েছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। “তাদের মধ্যে বড় বড় রুই-কাতলাও রয়েছে। তবে তাদের কারও নাম আমরা বলব না। ইতোমধ্যে ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হয়েছে। আরও অনেকে রিমান্ডে আসবে। তাদের কাছ থেকে অন্যদের বিষয়েও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, অর্থপাচার সংক্রান্ত দুদকের দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত সাজার হার শতভাগ। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত মামলা করার এখতিয়ার আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সিআইডি ৬০-৭০টি মামলা করেছে। আর এনবিআর দুই-একটা মামলা করেছে।

“আমাদের দেশে যে মানি লন্ডারিং হয় এর বেশিরভাগ ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং। আমাদের ধারণা, ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং নিয়ে এনবিআরের বেশি মামলা করার কথা। কেউ যদি মানি লন্ডারিং মামলা না করে তাদেরকে আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি।”
গত নভেম্ব^র পর্যন্ত দুদকে ২২ হাজার ২৩৬টি অভিযোগ এসেছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, “এর মধ্যে তিন হাজার অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানে নেওয়া হয়েছে। আমরা আহ্বান করব- দুর্নীতির তথ্য দেন, লোকের নাম না দিলেও কোনো সমস্যা নেই। অভিযোগের মধ্যে সারবত্তা থাকলেই হয়।”

পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে মানুষের অসন্তোষের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের কারও যদি অবৈধ সম্পদ থেকে থাকে তাহলে আমাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করার জন্য শুল্ক গোয়েন্দাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি বলেন, “দুর্নীতি কারও ভেতরে বা বাইরে থাকে না। দুর্নীতি থাকে মাথায়। এই জন্য মাইন্ডসেট পরিবর্তন দরকার। যে কারণে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব না।”
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “যারা ঘুষ গ্রহণ করেছেন, ২০১৯ সালে দুদক বেশ কিছু ফাঁদের মাধ্যমে সরকারি বহু কর্মকর্তা-কর্মকচারীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে ঘুষখোরদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। “এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের দুদকের গণশুনানিতে আনা হয়েছে। যারা এসব গণশুনানিতে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন হয়েছে। কিছু সমস্যা গণশুনানির মধ্যেই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।”

ইকবাল মাহমুদ বলেন, জনবল সংকটের কারণে দুর্নীতির মামলার অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ কাক্সিক্ষত মাত্রায় করা যায়নি। আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিশনে উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে সেই সমস্যার সমাধান হবে।
অনুষ্ঠানে র‌্যাকের সভাপতি মোর্শেদ নোমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন র‌্যাকের সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট