চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সভায় বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম

ট্যুরিজম ব্যবস্থা উন্নত করলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারকে সমন্বিত ট্যুরিজম ব্যবস্থা উন্নত করলে দেশের সামগ্রিক চেহারা পাল্টে যাবে। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। তিনি গতকাল রবিবার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিভাগীয় বিনিয়োগ ও ব্যবসার উন্নয়ন সহায়তা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের শিল্পের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। প্রধান সমুদ্রবন্দর এখানে। আমদানি-রপ্তানির ৯০ ভাগ এ বন্দর দিয়ে হয়। দেশের প্রধান শিল্প গার্মেন্টস। যখন পোশাক রপ্তানি করা হয়, এ বন্দরে আনতে হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম

বন্দরের বড় ভূমিকা রয়েছে। শীর্ষ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরও এগিয়ে আনতে হবে। বন্দরের লিড টাইম কমাতে হবে। ২০২১ সালে পদ্মা সেতু চালু হলে অর্থনীতির অদৃশ্য হাতে মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম বেড়ে যাবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর হলে লিড টাইম অনেক কমে যাবে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামীর সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক শংকর রঞ্জন সাহা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় সরকারের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, নুসরাত সুলতানা, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, বিডা’র পরিচালক সুমন চৌধুরী, কর অঞ্চল-২ চট্টগ্রামের যুগ্ম কর কমিশনার মো. কাওসার আলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ মহাপরিদর্শক মো. আল আমীন, ওমরগণি এম ই এস কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সরওয়ার আলম, বিভাগীয় তথ্য অফিস চট্টগ্রামের উপ পরিচালক মো. সাঈদ হাসান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ সহকারি পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রক অনুপ কুমার সাহা, জেলা রেজিস্ট্রার এ কে এম রায়হান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিষ্কৃতি চাকমা, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান প্রমুখ।

দেশে বেসরকারি খাতে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিভাগীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ফরেন ইনভেস্টমেন্টের চেয়ে লোকাল ইনভেস্টমেন্ট বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত। তবে লক্ষে

র্পৌছাতে হলে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট দরকার। ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেসে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় আমরা ১৬৮তম অবস্থানে এসেছি। ২০২১ সালে এটি ডাবল ডিজিটে নিয়ে আসতে চাই। এর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। গত বছর আফগানিস্তানের পেছনে ছিলাম। ভারতের চেয়ে ১০০ ধাপ, পাকিস্তান থেকে ৬০ ধাপ পিছিয়ে আছি’।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শামিল হতে হবে। স্পৃহা জাগানোই আমার ভিশন। শুধু নিজেরা কাজ করলে হবে না। অন্যদের দিয়েও কাজ করাতে হবে। বিনিয়োগে উৎসাহিত করা বিডার মূল কাজ। এর বাইরে বিনিয়োগকারীকে সহায়তা দেওয়া, পলিসি এডভোকেসি করি। বিডার দেশব্যাপী তেমন উপস্থিতি নেই, অফিস নেই। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। চট্টগ্রাম ও ঢাকার উন্নয়ন মানে সারাদেশের উন্নয়ন নয়।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ বিকাশ জাতীয় পর্যায়ে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ১০টি বিষয়ের একটি। তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি- এ কথার দৃষ্টিগ্রাহ্য যুক্তি আছে। উন্নত দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম, এমনকি নেগেটিভ। আমাদের ১৫-৪০ বছরের লোকসংখ্যা ৫ কোটির বেশি। এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। এটি বোঝা হবে যদি তাদের প্রশিক্ষিত করা, কাজে লাগানো না যায়।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। তার সামগ্রিক স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। এর অর্থ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ দেশ করে যাওয়া।

আমরা আসলেই দুর্ভাগা জাতি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। জাতির জনককে দেশ গড়ার সুযোগ দিইনি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব, সরকারি কর্মকর্তাদের কনট্রিবিউশনের কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা বিশেষ করে তরুণদের নেতৃত্বে আমি আশাবাদী।

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির হার্ডলাইন। এটি দ্রুত ১০০ শীর্ষ বন্দরের মধ্যে অনেক ধাপ এগিয়ে এসেছে। ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর হচ্ছে। ৮-৯ হাজার একর জমি প্রস্তুত। কর্ণফুলী নদীর নিচে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকায় টানেল হচ্ছে। মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে। গভীর সমুদ্র বন্দরের একোয়ার কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাজ চলছে। রেলস্টেশন হবে ঝিনুকের মতো। মিরসরাই থেকে টানেল দিয়ে চকরিয়া পেকুয়া দিয়ে লাবণী পয়েন্টে মিলিত হবে। ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। বে টার্মিনালের একোয়ারের কাজ সম্পন্ন। এটি হলে চট্টগ্রাম শহরে যানজট হবে না। দেশের শীর্ষ শিল্প মালিকরা চট্টগ্রামের। অনেক বড় শিল্পগ্রুপের কারখানা হচ্ছে চট্টগ্রামে। আমাদের তারুণ্যের শক্তিই বড়। তাদের দিয়েই বাস্তবায়িত হবে ডেল্টা প্ল্যান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট