চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দুদকের নজরে চমেক হাসপাতাল

যতো অভিযোগ পদে পদে চলে রোগীদের হয়রানি টাকা দিলে মিলে সব ধরনের সেবা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় আনসার থেকে শুরু করে আয়াদের অর্থ বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বৃহত্তর চট্টগ্রাম মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে ভিড় জমায়। কিন্তু সেবা পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে টাকা দিলে পাওয়া যায় সকল সেবা। যেখানে টাকাই সব। হাসপাতালের গেইটম্যান থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে পদে সেবা পেতে অর্থ আদায়ের চিত্র এবার দুদকেরও নজরে এসেছে। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও নির্ধারিত অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের বিষয়টিও নজরে এসেছে দুদকের।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়,চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।

দুদক সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী এবং রোগীর স্বজনদের। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত টাকা ছাড়া সেবা পাওয়া খুবই দুষ্কর। আনসার সদস্যদের অর্থ আদায় থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের অর্থ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ রোগী-স্বজনরা। প্রতিটি পদে পদে তাদের টাকা দিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। টাকা ছাড়া অনেক সময় রোগী-স্বজনদের হয়রানিও করে থাকেন তারা।

এদিকে, দুদকের এই অভিযানে এক ওয়ার্ড বয়কে হাতেনাতে আটকও করে দুদক কর্মকর্তারা। পরে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। একই সাথে হাসপাতালের এক্স-রে, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় মর্মে দুদকে অভিযোগের বিষয়টিও সরেজমিনে দেখে আসেন দুদক টিম। এছাড়া হাসপাতালের পরিচালকের সাথেও কথা বলেন দুদক টিম।

অভিযানে বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান না করে হয়রানির অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুদক। মূলত ১০৬ এ অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযান চালানো হয়। এ বিষয়ে দুদক টিম প্রতিবেদন পাঠালে বিস্তারিত জানা যাবে।

দুদকের অভিযানের বিষয়টি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি অন্যত্র মিটিং থাকায় হাসপাতালে ছিলাম না। তবে এসে শুনেছি দুপুরে দুদকের একটি টিম এসেছে। তারা পরিচালকের সাথেও কথা বলেছেন বলে শুনেছি। তবে টেস্টের ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়। কেননা যারাই টাকা দিচ্ছেন তাদের রসিদ দেওয়া হচ্ছে। যদি অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানালে আমরা নিজেরাও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি’। তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে নার্সসহ সকল কর্মচারী রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। এজন্য কর্তৃপক্ষও সবসময় তাদের নজরদারিতে রাখেন। কিন্তু কিছু কিছু কর্মচারীর কারণে সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। তবে যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাবে, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট