চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৬৭ হাজার অবৈধ চালকের হাতে বাস-ট্রাকের স্টিয়ারিং

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এর অন্যতম কারণ বেপরোয়া ও অদক্ষ চালক। সম্প্রতি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ‘স্বাধীন পরিবহন’র একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১০ নিহত হন। নির্মাণাধীন এ মহাসড়কটিতে যেখানে সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার থাকার কথা ছিলো সেখানে ‘স্বাধীন পরিবহন’র বাস চলছিল ১০০ কিলোমিটার গতিতে। বাসটি যদি এমন বেপরোয়া গতিতে না চলতো তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বাস ও ট্রাকসহ মোট দুই লাখ ৫০ হাজার ৮০৩টি ভারী যানবাহন রয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৩টিতে বৈধ চালক রয়েছে। অথচ ৬৭ হাজার ৩০টি বাস ও ট্রাকের স্টিয়ারিং অবৈধ চালকের হাতে। ভারী লাইসেন্স না থাকলেও তারা দিব্যি গাড়ি চালাচ্ছেন।-বাংলানিউজ। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ৬৭ হাজার ভারী যানবাহন এখন মৃত্যুকূপ। দ্রুত সময়ে ৬৭ হাজার ৩০টি যানবাহনে দক্ষ ও লাইসেন্সকৃত চালকের হাতে না দিলে দেশে ঘটতেই থাকবে সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমানে প্রতিটি যানবাহনে একজন করে চালক নিয়োজিত থাকলে ভারী যানবাহনের জন্য চালকের ঘাটতি রয়েছে ৬৭ হাজার ৩০ জন।

বিআরটিএ জানায়, প্রতিটি ভারী যানবাহনের জন্য দেড়জন চালক দরকার। তবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি ভারী যানবাহনের জন্য দুইজন করে চালক নিয়োজিত থাকার কথা। সে হিসেবে বর্তমানে রাস্তায় চলমান ভারী যানবাহন জন্য এক লাখ ৩৪ হাজার ৬০ জন চালকের ঘাটতি রয়েছে।
জানা যায়, অবৈধ ৬৭ হাজার চালকের হাতে বাস-ট্রাক তুলে দিতে ‘ভারী যানবাহন চালক তৈরির লক্ষে প্রশিক্ষণ প্রদান’ প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। এ প্রকল্পে ৯৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। পর্যায়ক্রমে তিন লাখ ভারী যানবাহনের চালক তৈরি করা হবে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬৭ হাজার ৩০টি ভারী যানবাহন বৈধ চালকের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে মোট তিন লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মূলত যেসব চালক হালকা যানবাহনের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাচ্ছেন তারাই এ সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণে শুধুমাত্র লাইসেন্স ফি নেওয়া হবে। তবে প্রশিক্ষণ বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হবে না। প্রশিক্ষণের জন্য দৈনিক ৮০০ টাকা ভাতা নেওয়া হবে, এরমধ্যে ৫০০ টাকা খাওয়া এবং ৩০০ টাকা টিএডিএ বাবদ। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রথম ধাপে দুই সপ্তাহ ও দ্বিতীয় ধাপে চার সপ্তাহ দীর্ঘ হবে। এ প্রশিক্ষণে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রথম ধাপে দুই লাখ এবং দ্বিতীয় ধাপে এক লাখ চালক অংশগ্রহণ করবে। দুই সপ্তাহ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীর জন্য ৭২ ঘণ্টা তাত্ত্বিক ক্লাসের পাশাপাশি ড্রাইভিং সম্পর্কে পরিচিত, ট্রাফিক আইন নিয়মনীতি বিষয়ে হাতে কলমে শেখানো হবে। এছাড়াও নিয়মনীতি-শাস্তি, মোটরযান চালনা, ভারী যানবাহনের প্রাথমিক সার্ভিসিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেখানো হবে। এছাড়া চার সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীর জন্য ১৪৪ ঘণ্টা ক্লাসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ড্রাইভিং সম্পর্কে পরিচিতি, ভারী যানবাহনের সার্ভিসিং অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ভারী ও হালকা যানবাহনের ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে প্রশিক্ষণ শেষে দ্রুততম সময়ে সঠিক ও যথাযথ লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি অধিবেশনে ৩০ জন করে চালক রাখা হবে। তাদের ভারী গাড়ির অ্যাডভান্স ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি নিরাপদ এবং রক্ষণাত্মক বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রকল্প প্রসঙ্গে বিআরটিসি’র ম্যানেজার (প্ল্যানিং) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে তিন লাখ দক্ষ চালক তৈরি করা হবে। যারা ইতোমধ্যেই মাঝারি ও হালকা লাইসেন্স দিয়ে ভারী গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভারি যানবাহন চালানো লাইসেন্স নেই তবু তারা এসব যানবাহন চালাচ্ছেন। তাদের নিয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। নিয়ম কানুন জানেন না। সারাদেশে এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সড়ককে নিরাপদ রাখতেই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবো সারাদেশে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট