চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচন

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঢাকামুখী

মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়নি প্রথমদিনে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে প্রথম দিন কোন মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় বা জোটের মনোনয়নের প্রত্যায় ঢাকায় ব্যস্ত রয়েছেন।

মহাজোটের শরিক দল জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হয়। উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের প্রত্যাশায় কোমর বেঁধে নেমেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এছাড়াও বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদলও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিন নেতার নামে পোস্টার, ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। দলীয় সমর্থনের প্রত্যাশায় ঢাকায় দৌড়ঝাঁপের ব্যস্ত রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও ব্যস্ত রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বলেন, ‘প্রথমদিন কোন মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় ৫ সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে প্রতিনিধিরা মনোয়নপত্র বিতরণের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি আসনটি ভাগে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দলের প্রেসিসিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই এখন ঢাকায় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ব্যস্ত রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দেশের বাইরে রয়েছে। তবে দল আগামী ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলীয় ফরম বিক্রি করবে। এরপরই দলীয় সমর্থন প্রদান করা হবে।
এদিকে, মোছলেম ও ছালাম ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগ সম্ভাব্য তিন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা হলেন, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও সাবেক কমিশনার আবু তাহের।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল এই আসন থেকে তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হন। গত ৭ নভেম্বর সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ইসি।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এলাকায় পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কয়েক জন সম্ভাব্য প্রার্থী। বাদ পড়েনি শরিক দলের নেতারাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে সরব প্রচারণা। ভোটের আগেই চলছে প্রার্থিতা লড়াইয়ের যুদ্ধ।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো নেতা এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জিতেছিলেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ তিন বার জয়ী হয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাসদের প্রার্থী হলেও নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বাদল।
বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল বলেন, ‘বাদল সাহেবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করানোর লক্ষ্যে মাননীয় নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে আমি নির্বাচন করবো। তবে স্বামীর রাজনীতি দল বাংলাদেশ জাসদ নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান তিনি।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, ১৯৭৩ এর নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ না থাকায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকটা বিরোধী দলের মতো ছিল দলীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়াও এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়নও হয়নি। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিলে দল শক্তিশালী হবে। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে।
মোছলেম উদ্দিন আহমদ ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পাশের উপজেলা পটিয়া সংসদীয় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দুইবারই বিএনপি প্রার্থীর কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।

মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে একনিষ্ঠভাবে দলের সঙ্গে ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসলেও সরকারি কোনো পদ-পদবিতে ছিলাম না। আশা করছি, নেত্রী এবার আমাকে মনোনয়ন দেবেন। নিরাশ করবেন না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বোয়ালখালীবাসীর সুখে-দুঃখে আপনজনের মতো সঙ্গে ছিলাম। বোয়ালখালীর কাক্সিক্ষত উন্নয়নে দলমতনির্বিশেষে মানুষ আমাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।
তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হচ্ছে আমাদের দলীয় সমর্থিত। তাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে আমার জন্য জয় পাওয়া সহজ হবে।

সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের শরিক দল জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম বলেন, ‘দল এবং নেত্রী জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য রাজনীতি করেন। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা পূরণ এবং আস্থাশীল হওয়া ক্যাটাগরিতে পড়লে দল আমাকে নমিনেশন দেবে।’
মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ জিয়াউদ্দিন বাবলুর নাম শোনা যাচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসন থেকে জোটের পক্ষে নির্বাচন করে জয় লাভ করেছিলেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলের পক্ষে রংপুর ও কক্সবাজারের রামু আসন থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই দুই আসনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাধার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি তিনি। মহাজোটের পক্ষে উপ-নির্বাচনে প্রার্থিতার ইঙ্গিত দিয়েছে তার ঘনিষ্টজনেরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট