চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আর নয় হাতের ইশারা

কার্যক্রম শুরু আজ নগরীর পাঁচটি মোড়ে বসানো হয়েছে ট্রাফিক সিগনাল লাইট পর্যায়ক্রমে বসবে প্রতিটি মোড়ে হ সিগনাল নিয়ন্ত্রণে মোড়গুলোতে বসানো হবে ট্রাফিক বক্স

আল-আমিন সিকদার হ

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৭ পূর্বাহ্ণ

রোদ কিংবা বৃষ্টি, মৌসুম যাই হোক। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তার এপাশ ওপাশে দৌড়ে গাড়ি থামাতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। মুখে বাঁশি, লাঠি কিংবা হাতের ইশারায় ট্রাফিক পুলিশের গাড়ি থামানোর এ চেষ্টা কখনও সফল হলেও বেশিরভাগ সময়ই তা অমান্য করে চলে যায় যানবাহন চালকরা। এতে সড়ক জুড়ে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট ও চরম বিশৃঙ্খলা। ট্রাফিক পুলিশকে এই রাখালের ভূমিকা থেকে রেহাই দিতে ২০১০ সালে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ২৫টি স্পটে বসানো হয় আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় সিগনাল বাতি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব সিগনাল বাতি শহরের বুকে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। পড়ে থাকে অকেজো হয়ে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকা- ছিল অনকেটা রাখালের মত।

তবে এবার পরিবর্তন আসছে চট্টগ্রামের ট্রাফিক ব্যস্থায়। প্রায় এক যুগ পর স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনাল লাইট বসানো হয়েছে নগরীর পাঁচটি মোড়ে। প্রতিটি মোড়ে যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে একজন ট্রাফিক পুলিশ। বসানো হবে ট্রাফিক বক্স। নগর ট্রাফিক সূত্র জানায়, যানজট নিরসনে ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইস্পাহানি, টাইগারপাস, চৌমুহনী, বাদামতলী ও বারিক বিল্ডিং মোড়ে বসানো হয়েছে সিগনাল বাতি। প্রতিটি মোড়ে এসব বাতির নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে পুলিশ সদস্যদের জন্য মোড়গুলোতে বসানো হবে ট্রাফিক বক্স।নগর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) এস এম শওকত হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের সহযোগীতায় নগরীর পাঁচটি মোড়ে সক্রিয় করা হয়েছে ট্রাফিক ‘সিগনাল লাইট সিসটেম’। তবে এবার এই সিগনাল লাইটগুলোর নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। প্রতিটি মোড়ে এর নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে পুলিশ সদস্য। নিয়ন্ত্রণের কাজে থাকা পুলিশ সদস্য চাইলেই সিগনাল পরিবর্তন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সড়কে গাড়ির চাপ দেখে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন পুলিশ সদস্য। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মোড়ে বসানো হবে এ ‘সিগনাল লাইট সিসটেম। আজ থেকে শুরু হচ্ছে কার্যক্রম বলে জানান তিনি’।

এদিকে কয়েকবার অযত্ন আর অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এ সিগনাল লাইট প্রকল্প নিয়ে এবারও ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন সড়ক সংশ্লিষ্টরা। তাদের মন্তব্য, ‘বিশ্বের সবগুলো উন্নত রাষ্ট্রে ট্রাফিক সিস্টেম খুবই আধুনিক। সেখানে ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তায় গাড়ি থামাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করে অটোমেটিক ট্রাফিক সিগনাল লাইট সিস্টেম। চালকরা সচেতন বলেই সেখানে দুর্ঘটনার পরিমাণও অনেক কম। আমরাও আশাবাদি চট্টগ্রামের ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বের আদলেই হবে। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে এটা খুবই চ্যালিঞ্জিং। কারণ, বন্দরনগরীর যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১৯৮৯ সালে প্রথম সিগনাল লাইট পোস্ট ও বাতি সংযোজন করে সিটি করপোরেশন। এরপর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০১০ সালে ২৫টি মোড়ে স্থাপন করা হয় আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় সিগনাল বাতি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণর অভাবে এসব সিগনাল বাতির বেশিরভাগই এখন নষ্ট। এছাড়া যানবাহন চালকরাও অভ্যস্ত নয়। এতে করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে হিমশিম খেতে হবে প্রশাসনকে। আমরা আশাবাদি এবার লাঠিমুক্ত হবে ট্রাফিক বিভাগ।’

বিষয়টি সত্যিই চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন নগর ট্রাফিকের বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার তারেক আহমেদ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার অভাবে এ সিস্টেমটি আগেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে সহযোগিতা পেয়ে এবার পাঁচটি মোড়ে নতুন করে ট্রাফিক সিগনাল বাতি লাগিয়েছি। এটা সফলভাবে সড়কে প্রয়োগ করতে আমরা যানবাহন চালকদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছি। আমরা প্রথম পর্যায়ে এই সিগনাল বাতিগুলোর মাধ্যমে চালকদের অভ্যস্ত করার চেষ্টা করছি। আশাকরছি, সকলের প্রচেষ্টায় আমরা সফল হব।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট