চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়কে অরাজকতায় ভোগান্তি

পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট হ চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়নি দূর পাল্লার বাস হ গণপরিবহন চলাচলে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

ধর্মঘটের কারণে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বন্ধ ছিল সব ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল। নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন চালক ও শ্রমিকরা। নগরীর মাদারবাড়ি, কদমতলী, নিমতলাসহ বিভিন্ন সড়কের আশপাশে ভারী যানবাহনগুলোকে আর টার্মিনালে অলস অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে।

অন্যদিকে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া পণ্য পরিবহনের শ্রমিকরা নগরীর সড়কে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। দুপুরের দিকে উচ্ছৃঙ্খল কিছু পরিবহন শ্রমিক এ কে খান মোড় এলাকায় যান্ত্রিক সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ধর্মঘট শুধু ভারী যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য হলেও শ্রমিকেরা বাস, টেম্পো, ট্যাক্সি এমনকি মোটরসাইকেল চলাচলে বাধা দেয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তারা আকবর শাহ নিউ শহীদ লেন এলাকায় বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়। অফিস ফেরত যাত্রীসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া অর্ধশতাধিক গণ পরিবহনকে রাস্তায় আটকে দেয়ায় যাত্রীদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়।

নগরীর এ কে খান সড়কের দুইপাশে থাকা দূর পাল্লার বাস কাউন্টারগুলোও বন্ধ দেখা যায়। বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে বলে জানান। যাত্রীদের অভিযোগ দেশে একমাত্র খেলার পুতুল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাকে নিয়ে যে যখন যেমন ইচ্ছা, তেমন করে খেলে।

এ কে খান মোড়ে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় হাতে ব্যাগ নিয়ে। সাথে ছিল তার স্কুল পড়–য়া নাতনি। কতক্ষণ সময় ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন জানতে চাইলে ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে শরীরটা খুব খারাপ। আমার বাড়ি হচ্ছে কুমিরায়। আমার নাতনির স্কুল শেষে ওকে নিয়ে শহরে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে দেখি কোন গাড়ি নাই। গাড়ি আসবে কীভাবে। শ্রমিকরা সব কাউন্টারের সামনে আন্দোলন করছে। কোন গাড়ি এলে তা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এখন নিরুপায় হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কখন বাস আসবে আর কখন বাসায় যাবো সেটা নিয়ে ভাবছি। এ দেশে সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবারতো কেউ নাই। এ দেশে একমাত্র খেলার পুতুল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যার যখন ইচ্ছা তখন আমাদেরকে নিয়ে খেলে।’

এদিকে গণপরিবহন সংকটের ফায়দা লুটতে দেখা গেছে সিএনজি অটোরিকশা ও এপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারারদের। বাড়তি ভাড়ার জোয়ারে ভেসেছে রিকশাও। এ কে খান মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশার চালকরা ভাড়া চেয়েছেন দুইশ টাকা। অনেক সিএনজি চালক জন প্রতি ৫০ টাকা করে নিয়ে টেনেছেন লোকাল ভাড়া। সিএনজি চালকদের মত এপস ভিত্তিক রাইড শেয়াররাও তুলেছেন লোকাল যাত্রী। সাধারণত চালকসহ দুইজন যাত্রী থাকার কথা থাকলেও প্রতিটি মোটরসাইকেলে দেখা গেছে তিনজন যাত্রী। জন প্রতি ১০০ টাকা করে জিইসি থেকে এ কে খান ও এ কে খান থেকে জিইসি গেছে মোটরসাইকলেগুলো। যাত্রীদের দুর্ভোগ কাজে লাগিয়ে সারাদিন ভাড়া উৎসবে মেতে ছিল তারা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক জহুর আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে আমাদের দাবি দাওয়া পূরণ না হলে শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলবে। আগে আমরা মালিকরা পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিলে শ্রমিকদের খরচ দিতে হত। এখন শ্রমিকরা কোন খরচ ছাড়াই কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট