চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘গ্যাস লাইনে’ বিস্ফোরণে নিহত ৭

ধ্বংসস্তূপ পাথরঘাটার কুঞ্জমনি ভবন আহত ৯ হ গ্যাস লাইনের পাইপ লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ধারণা হ নিহত ছয়জনের মরদেহ হস্তান্তর হ ১ জনের পরিচয় মিলেনি হ আহত ১ জনের অবস্থা আশংকাজনক হ পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন।

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:০০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে শিশু ও নারীসহ সাতজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল আনুমানিক পৌনে নয়টায় বড়–য়া ভবনের নিচ তলায় এ ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা রান্নাঘরের গ্যাসের চুলা অথবা গ্যাস লাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে বের হওয়া গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া অর্পিতা রানী দেবী নামের এক কিশোরীর অবস্থা আশংকাজনক। তার শরীরের প্রায় ৩৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। মুমূর্ষু অর্পিতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্পিতা নগরীর সিটি কর্পোরেশন অপর্ণাচরণ স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গতকাল সকালে ব্রিকফিল্ড রোডে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা কুঞ্জমনি ভবনের (বড়–য়া ভবন) নিচতলার দেয়াল ভেঙে সড়কের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দুই রুমের এ বাসাতেই সন্তানদের নিয়ে থাকতেন মানিকছড়ির বাসিন্দা মৃতঅনুপ কুমার নাথের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী নাথ। শুধু সন্ধ্যা রানীর এ বাসা নয়। ভবনের দ্বিতীয় তলার দুটি বাসার জানালার গ্রিল, আসবাবপত্র ভেঙে চুরে তছনছ হয়ে গেছে। একই অবস্থা পাশের ভবনের আরো একটি বাসায়।

সন্ধ্যা রানীর ছেলে অর্ণব কুমার নাথ বলেন, ‘আমার দিদি ও মাসি বাসায় ছিলেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে নাস্তা আনতে আমি বাসা থেকে বের হই। কিছুদূর যেতেই আমাদের বাসায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপর দেখি রুমের ভেতরে আগুন জ্বলছে। আমার দিদির শরীরের অনেকাংশ পুড়ে গেছে।
পাশের ভবনের বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ জানান, বিকট শব্দে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি বড়ুয়া ভবনের সামনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সড়কের উপর পড়ে আছে বেশ কয়েকজন নারী পুরুষের মরদেহ। দুমড়ে মুচড়ে আছে রিকশা-বাইসাইকেল। সড়কের একপাশে পড়ে আছে একটি স্টিলের আলমিরা ও বাসায় ব্যবহৃত নানা সামগ্রী।

বড়ুয়া ভবনের ঠিক বিপরীতে রয়েছে জনতা ফার্মেসি। দুই-তিনজন মিলে দোকানের ভেতরে ভেঙে চুরে যাওয়া জিনিসপত্র সরানোর কাজ করছিলেন। ফার্মেসির কর্মচারী অনুপম ঘোষ জানান, সকাল সাড়ে সাতটার সময় প্রতিদিনের মতো দোকান খুলি। আনুমানিক পৌনে নয়টার দিকে আমি দোকান ঝাড়– দিচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে দোকানের সামনে অন্ধকার হয়ে যায়। দোকানের ভেতরে একটি লোহার গ্রিলের অংশ এসে পড়লে ওষুধের আলমিরা ও আসবাবপত্র ভেঙে যায়। একই সময়ে ওষুধের দোকানের পাশে থাকা ফটোরোমা নামে একটি ফটোকপির দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনুপম জানান, স্থানীয় লোকজন আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় লোকজন জানান, শুধু বড়–য়া ভবন নয়। আশেপাশের ভবনের অধিকাংশ জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় সাতজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার খরচও বহন করা হবে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে ওসি মহসীন বলেন, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে গ্যাস লাইনের লিকেজের কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বাসাটির ভেতরে গ্যাসের রাইজার বসানো ছিলো। তারপরও কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে তা তদন্ত করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত-আহত যারা : বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছে। নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গ্রামের রাশেদা বেগমের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম (৪০)। তিনি থাকেন নগরীর সিআরবি এলাকায়।
পটিয়ার হাইলদর আলী চৌধুরী বাড়ির মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে মো. আবদু শুক্কুর (৫০), উখিয়ার রাজাপালং তুতুরবিল গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে নুরুল ইসলাম (২৮)। তিনি নগরীর বাকলিয়ার নোমান কলেজ এলাকার কৃঞ্চমঞ্জিল সাগরের কলোনিতে থাকতেন। সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মাস্টার হাটের এডভোকেট আতাউর রহমানের ছেলে আজিজুর রহমান (১০)। স্ত্রী জুলেখা বেগম ফারজানা (৩০)। তারা নগরীর পাথারঘাটা নজু মিয়া লেইনে থাকতেন। পটিয়ার উলাইনপুরা গ্রামের জিন প্রসাদ বড়–য়া বাড়ির প্রকৌশলী পলাশ কান্তি বড়–য়ার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা এ্যানি বড়–য়া (৪০)। নিহত একজনের পরিচয় মেলেনি।

একই ঘটনায় আহত নয়জন হলেন, লক্ষ¥ীপুরের রামগতির আবদুল গণির ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল (৩০), পাথরঘাটার মৃত আবদুল রহমানের ছেলে আবদুল হামিদ (৪০), নোয়াখালীর দক্ষিণ শোলাকিয়ার আনিসুল হকের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (৪০), নোয়াখালীর (সদর) সুধারাম থানার মো. সিরাজের ছেলে আরিফ (১৫), পশ্চিম পটিয়ার মৃত খায়েরের ছেলে মোহাম্মদ নাজির (৬৫), আশরাফ আলী রোডের মুছা কলোনির অনিল গোমেজের ছেলে ডওরিন তিশা গোমেজ (২২), ঘটনা সংগঠিত ভবনের বাসিন্দা খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির মৃত অনুপ কুমার নাথের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী দেবী (৩৫), মেয়ে অর্পিতা রানী দেবী (১৬) ও ব্রিকফিল্ড রোডের মৃত হাজি আবদুর জব্বারের ছেলে মো. আবু তালেব (৪৫)।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, সুরতহালের পর নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আনুমানিক ১৪/১৫ বছর বয়সী একটি ছেলের পরিচয় না পাওয়ায় তাকে মর্গে রাখা হয়েছে।

দুটি তদন্ত কমিটি : পাথরঘাটায় গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বিস্ফোরণে হতাহতের খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে আসেন। পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর তিনি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা সাংবাদিকদের বলেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জে এম শরিফুল হাসানকে প্রধান করে কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, কর্ণফুলী গ্যাস, সিডিএ ও পুলিশের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য রাখা হয়েছে। আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, নগর পুলিশের পক্ষ থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মেহেদী হাসানকে প্রধান করে এ কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, নগর বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মঞ্জুর মোরশেদ এবং কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট