চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কোচিং এ যাওয়ার পথে লাশ হতে হলো মা-ছেলেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন এডভোকেট আতাউর রহমান। একটু পরপর ছোট ছেলে আতিফুর রহমান (৫) বাবার বুকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সকাল ৯টায় যাদের বিদায় জানিয়ে অফিসে গিয়েছেন, কে জানতো তিন ঘণ্টা পর লাশ ঘরে তাদের নিথর দেহ দেখতে হবে। স্ত্রী ও বড় ছেলের মরদেহ দেখে মেনে নিতে পারছেন না আতাউর। কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার কান্নায় মেডিকেলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। সান্ত¡না দিতে আসা লোকজনও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

প্রতিদিনের মত অফিস যাওয়ার পথে স্ত্রী-সন্তানদের বিদায় জানান আইনজীবী আতাউর রহমান। জানতেন না এটাই হবে চিরবিদায়। অফিসে পৌঁছেই কিছুক্ষণের মধ্যে খবর পান স্ত্রী জুলেখা বেগম ফারজানা (৩২) ও বড় ছেলে আতিকুর রহমান শুভ (১০) দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। সংবাদ পেয়ে দ্রুত ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। লাশ ঘরে অন্য ৫টি লাশের পাশে দেখতে পান নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে।
জুলেখা বেগম ফারজানা ও আইনজীবী আতাউর রহমান দম্পতি পাথরঘাটার নজুমিয়া লেইন এলাকার চার নং গলির ফারুক বিল্ডি-এ ভাড়া থাকতেন। আতাউর রহমানের গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মাস্টার হাট এলাকায়। তাদের দুই ছেলের মধ্যে আতিকুর রহমান শুভ (১০) সেন্ট প্লাসিড হাই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং ছোট ছেলে আতিফুর রহমান (৫) পাথরঘাটার ব্রাদার ফ্লেভিয়ান কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী।

ছোট ছেলে আতিফুর রহমানকে (৫) পাথরঘাটার ব্রাদার ফ্লেভিয়ান কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসেন জোলেখা বেগম ফারজানা। এরপর বড় ছেলে আতিকুর রহমান শুভকে (১০) নিয়ে কোচিং এর উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। যাওয়ার পথে পাথরঘাটার ব্রিকফিল্ড রোডে এলেই দেয়াল ধ্বসে ঘটনাস্থলেই মারা যান জোলেখা বেগম ফারজানা ও ছেলে আতিকুর রহমান শুভ (১০)।

আতিফুর রহমানের গৃহ শিক্ষিকা এলিনা বিশ^াস দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, জুলেখা বেগম ফারজানা ও আইনজীবী আতাউর রহমানের ছোট ছেলে আতিফুর রহমানকে আমি পড়াই। তাদের বাসা পাথরঘাটা নজু মিয়ার লেইনের চার নং গলিতে। প্রতিদিন সকালে মা জুলেখা বেগম ফারজানা তাদের স্কুলে নিয়ে যেতেন। রবিবার সকালে মা ফারজানা প্রথমে আতিফুর রহমানকে স্কুলে দিয়ে আসেন। এরপর শুভকে কোচিং নিয়ে যাওয়ার পথে ব্রিকফিল্ড রোড এলাকায় দুর্ঘটনায় মা-ছেলে দু’জনই প্রাণ হারায়।

লাশ ঘর থেকে বের হয়েই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন আতাউর। এসময় উপস্থিত থাকা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সান্ত¡না দিতে থাকেন। এসময় তারা বলেন, আপনার ছোট সন্তানের জন্য হলেও আপনাকে বাঁচতে হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। তবু কোন সান্ত¡না আতাউর রহমানের কান্না থামাতে পারছে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট