চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এক পেঁয়াজেই নাস্তানাবুদ

ইমরান বিন ছবুর

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ

লাগাম টানা যাচ্ছে না পেঁয়াজের। একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত বুধবার খুচরা বাজারে চীন, তুরস্ক, মিশর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। তবে অনেক খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে দোকানদাররা। এছাড়া, পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ না থাকলেও কিছু কিছু খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। যা অন্য পেঁয়াজের তুলনায় ছোট ও পচা।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, চীন, তুরস্ক, মিশর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। পেঁয়াজ কিনতে এসে দাম শুনেই অনেক ক্রেতা দোকানদারের সাথে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় ক্রেতাদের একটি-দুটি পেঁয়াজ নিয়ে তা মেপে মূল্য দিতে দেখা যায়। ক্রেতাদের সাথে কথা হলে জানান, অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে অল্প পেঁয়াজ কিনছেন তারা। অনেক ক্রেতা পেঁয়াজের দাম শুনেই দোকান থেকে চলে যান।

নগরীর বাকলিয়া থানাধীন রাহাত্তারপুল এলাকার এক মুদি দোকানদারের সাথে কথা হলে বলেন, ‘গত তিন চারদিন ধরে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছি। পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে কাস্টমারের সাথে ঝগড়া করতে হচ্ছে। এছাড়া, প্রতিদিন যে হারে লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আমাদের মত খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বিক্রি না করাই ভালো। আবার কখন হুট করে দাম কমে যায়।’

নগরীর বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার তুরস্কের পেঁয়াজ ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বুধবার ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। মিশর এবং চায়নার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। যা বুধবার ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায়। যা বুধবার ১৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের সামনে পচা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ হালিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. ইদ্রিস দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখন সারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীর চোখ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। চট্টগ্রাম থেকেই সারাদেশে পেঁয়াজ যাচ্ছে। টেকনাফ এবং চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন মাত্র ২০ থেকে ২৫ গাড়ি পেঁয়াজ আসছে। খাতুনগঞ্জ থেকে এসব পেঁয়াজ ২০, ৫০ ও ১০০ বস্তা করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাজার মনিটরিং এর পাশাপাশি সরকারের আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। বড় চালান না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সরকারি উদ্যোগে মিয়ানমারসহ যেসব দেশে পেঁয়াজের বাজার ভালো সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আনতে পারতো।’

কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সাথে যেসব সিন্ডিকেট বা ব্যবসায়ী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার এ অবস্থায়। প্রশাসন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কখনো ১২০ টাকার পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা হয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে জেলা প্রশাসন কয়েকদিন অভিযান চালিয়েছে। এরপর তারা কেন জানি নীরব ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আনা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার তা না করে ব্যবসায়ীদের থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে টিসিবি’র মাধ্যমে বিক্রি করছে। আগামী ২০ নভেম্বরের পর দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। এরপর পেঁয়াজের বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে আশা করছি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট