চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

স্মরণসভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি

আ. লীগে দূষিত রক্তের দরকার নেই

‘আখতারুজ্জামান বাবু রাজনীতিকে মানি মেকিং মেশিন করেননি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু শুধু ব্যবসা করলে দেশের এক নম্বর ধনী হতেন। রাজনীতিকে তিনি মানি মেকিং মেশিন করেননি। আজ অনেকে রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্য মনে করে। জনগণকে তিনি ভালোবাসতেন বলেই তার প্রতি জনগণের ভালোবাসা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। চট্টগ্রামের সমার্থক হয়ে গিয়েছিল দুই নাম বাবু ভাই ও মহিউদ্দিন চৌধুরী। গতকাল বুধবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগ আয়োজিত আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, দক্ষিণ জেলা সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস, সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি এডভোকেট এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি এম আবু সাঈদ, উত্তর জেলা সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট জহির উদ্দিন, প্রদীপ দাশ, মোছলেহ উদ্দিন মনসুর, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যখন তুচ্ছ কারণে অবাঞ্ছিত, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তখন মনে বড় কষ্ট লাগে। বড় দুঃখ পাই। সামান্য কারণে একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। মাঝে মাঝে যখন দেখি আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু, কষ্ট লাগে, দুঃখ পাই। মাঝে মাঝে যে কলহ দেখি, এটাই চট্টগ্রামের বড় দুর্বলতা। খারাপ আচরণ উন্নয়নকে ম্লান করে দিতে পারে। আমরা পরিবর্তন চাই। তবে সে পরিবর্তন চাই না যেটা আওয়ামী লীগের আদর্শের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন। ট্র্যাডিশন চাই, সেটা হচ্ছে সিনিয়র জুনিয়রদের স্নেহ করবে, জুনিয়র সিনিয়রকে সম্মান করবে। এখানে আমরা ডিজিটাল চাই না। আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র অক্ষুণœ রাখতে হবে, সেটাই ট্র্যাডিশন। মানুষের মাঝে থেকেই পরিবর্তনের ধারা এগিয়ে নিতে হবে।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের কথা উল্লেখ করে সেতু মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার একশন শুরু হয়ে গেছে। যারা অন্তর্কলহ করবে, অপকর্ম করবে, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা করবে, সেসব অপকর্মকারীদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। আমাদের দূষিত রক্তের দরকার নেই। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। গুটিকয়েক খারাপ লোকের জন্য গোটা আওয়ামী লীগ বদনামের ভাগিদার হবে না। গোটা আওয়ামী লীগের ভালো লোকদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাবু ভাই রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। অনেক বিত্ত-বৈভবের মালিক রাজনীতিতে এসে রাজনীতিকে কিনতে চায়। যারা রাজনীতিকে অর্থ দিয়ে কিনতে চান, তাদের বলব বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে শেখার জন্য, যার অর্থ বিত্ত থাকার পরও রাজনীতিকে কেনার চেষ্টা করেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে কখনো বেঈমানি করেননি।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমার বাবা ব্যবসার জন্য রাজনীতি করেননি। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ করার মানুষ পাওয়া যায়নি। আজ অনেকে দল করতে চায়। দেশ আজ গর্ব করার মতো জায়গায় পৌঁছেছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র চায় আমাদের ধ্বংস করতে, তারা বসে নেই। আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টিকে আছে দলীয় নেতাকর্মীর কারণে।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর দুঃসময়ে যখন অনেক বড় বড় নেতা আস্থার সংকটে ভুগেছিলেন, তখন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আস্থা হারাননি। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অনেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টের লোভে পড়েছিলেন। তখন তিনি দল ছেড়ে যাননি, বরং নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিলেন দলের জন্য। তাদের ত্যাগে আজ দল টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিত্তবানরা দলকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করে যাচ্ছেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে আখতারুজ্জামান বাবু ভাই নিরলসভাবে কাজ করেছেন। আমরা যারা এখন রাজনীতি করছি তাদের বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বাবু ভাই বিত্তশালী ছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে আপন করে কাছে টেনে নিতে পারতেন। যেটি এখন রাজনীতিতে হারিয়ে গেছে। বিত্তবানরা এখন দলকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করে যাচ্ছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট