চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অভিযোগে বেশি উচ্চারিত ‘ঘুষ’

বন্দরে দুদকের গণশুনানি দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে : দুদক কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম বলেছেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের হয়রানি বন্ধ ও সেবা গ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বন্দর অডিটরিয়ামে দুদকের ১৩৭তম গণশুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি
বলেন, ২০০৪ সালে দুদক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গণশুনানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো

কেমন চলছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা
গণশুনানির কাজ এবং সরকারকে সে
বিষয়ে পরামর্শ দেওয়াই আমাদের
উদ্দেশ্য। বন্দর সেবা প্রদানকারী সংস্থা।

দুদকের কাজ কারো হয়রানি করা নয়। কাউকে
ছোট করার উদ্দেশ্যেও দুদক গণশুনানি করে না।

দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চট্টগ্রাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার উন্নয়ন মো. নুরুল আলম নিজামীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। এছাড়া মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম কুমুসহ বন্দরের বোর্ড সদস্য, বন্দর ও দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী, বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও সচেতন সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
গণশুনানিতে মোট ৫২টি অভিযোগ তুলে ধারা হয়। প্রথম অভিযোগ করেন বন্দরের প্রকৌশল বিভাগের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ ছালেহ। তিনি অভিযোগ করেন, পতেঙ্গাস্থ কয়লা ডিপো ও পাইলট জেটির পাশে রাখা কয়লা ডিপোতে ৩৬৩.১৪৭ ঘনমিটার পাথর থাকার কথা থাকলেও সেখানে ১২৭.৫০ ঘনমিটার পাথর রয়েছে। অর্থাৎ ২৩৫.৬১৭ ঘন মিটার পাথর অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যার মূল্য ১২,০৩,২০০/-টাকা।
তবে এই অভিযোগের পাল্টা জবাবে বন্দরের প্রকৌশলী ও আইন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগকারী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ ছালেহর কথা মত সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দুই দফায় কমিটি করে তদন্ত করা হয়। কিন্তু সেই অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি বন্দরের প্রতিষ্ঠানিক আইন বাদ দিয়ে হাইকোর্টের আশ্রয় নেন। যার কারণে বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারাধীন বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। গণশুনানিতে এ বিষয়ে দুদক থেকে বলা হয়, হাইকোর্টের বিচারাধীন বিষয় গণশুনানিতে সমাধান সম্ভব নয়।

বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে নথিপত্র যাচাইয়ের সময় রোটেশন লাইন নম্বর ও আমদানিকারকের নাম ঠিক থাকলেও অহেতুক বিন নম্বর দিয়ে ঝামেলা তৈরি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ বিজন কুমার খাস্তগীরের। বন্দর গেইট দিয়ে মালামাল বের করার সময় বন্দর সার্জেন্ট কর্তৃক ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করেন মোহাম্মদ ফয়সাল মিয়া। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ক্রেন অপারেটরগণ মালামাল নামার সময় ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দিলে হয়রানি করার অভিযোগ করেন নাছির আহমদ একজন। এছাড়া ইকুইপমেন্ট অপারেটর কর্তৃক হয়রানি এবং টাকা দিলে কাজ হয়, টাকা না দিলে কোন কন্টেইনার ডেলিভারি করে না বলে অভিযোগ করেন এশিয়া এন্টারপ্রাইজের জহিরুল ইসলাম।

দুদক একই রকম অনেক অভিযোগের জবাব জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, ঘুষ প্রথা চালু থাকার জন্য বন্দর ব্যবহারকারীরাও দায়ী। সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরেও ঘুষ না দিলে বন্দরে পণ্য পড়ে থাকে এমন কথা কেউ বলতে পারবে না। ঘুষ না দিলেও বন্দর কর্মকর্তারা সবার পণ্য ডেলিভারি দিতে বাধ্য। উপরন্তু বন্দর ব্যবহারকারীরা দ্রুত পণ্য ডেলিভারি পেতে ঘুষ দিয়ে তদবির করেন। এছাড়া অভিযোগ করেন বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল আলম জুয়েল এবং এসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সরওয়ার। তারা অভিযোগ করেন কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংকারী বার্থ অপারেটররা জাহাজ থেকে কন্টেইনার ওাঠা-নামা করার সময় জাহাজ ও কন্টেইনারের ক্ষতি করে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না। এ ব্যাপারে বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম জানান, বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংকারী আটটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যে জাহাজ ও কন্টেননারের ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দুই সংস্থাকেই সার্ভেয়ার নিয়োগের সুপারিশ করেছি। এটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস নাগাদ কার্যকর করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

শিপিং এজেন্টস পরিচালক অভিযোগ করেন, রেফার কন্টেইনারে তাদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে অনেক পণ্য নষ্ট হয় এবং বিপুল বৈদ্যুতিক বিল দিতে হয়। এ ব্যপারে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সব রেফার কন্টেইনারে বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দিতে পারি। সেটি খরচ কমাবে। আর আমদানীকারকরা কন্টেইনার ডেলিভারি না নেওয়ার কারণেই ভাড়া বেড়ে যায়। এজন্য শিপিং এজেন্টকে আমদানীকারককে চাপ দিতে হবে।

পাশাপাশি কয়েকজন বন্দর কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণ করায় ন্যায্য পাওনার দাবি জানান। বন্দর এস্টেট থেকে জানানো হয় বন্দর ভূমি অধিগ্রহণের পাওনা টাকা জেলা প্রশাসনকে দিয়ে দেয় এবং জেলা প্রশাসন থেকে সেই অর্থ বিতরণ করা হয়।
বিশেষ অতিথি বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। অটোমেশন চালু করা হয়েছে, এতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। পণ্য উঠা নামায় খরচ কমছে। বন্দরের নিরাপত্তা ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বে টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে বন্দরের সকল সমস্যা সমাধান হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট