চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

দুই পক্ষের মারামারিতে যুবলীগের সমাবেশ প-

কাউন্সিলরসহ ১০ জন আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

লালদিঘি ময়দানে দুই পক্ষের মারামারির কারণে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভা প- হয়ে গেছে। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মোবারক আলীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নগর যুবলীগ এই সভার আয়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি শুরুর পর তিনি বক্তব্য না দিয়ে চলে যান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি লালদিঘি ময়দানের কাছে গিয়ে মারামারির ঘটনা দেখে ফিরে যান।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লালদিঘির ময়দানে বিকাল ৩টায় নগর যুবলীগ আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করেছিল। সভায় সভাপতিত্ব

করছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় সভা শুরুর পর বক্তব্য রাখেন সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন খোকা। আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুর বক্তব্য শুরু হওয়ার পর বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল মঞ্চে আসেন। তিনি মঞ্চে আসার প্রায় ১৫ মিনিট পর মারামারি শুরু হয়। তখন নগর যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু সবেমাত্র বক্তব্য শুরু করেছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সমাবেশ চলার মধ্যে একটি মিছিল লালদিঘি মাঠে প্রবেশ করলে এমইএস কলেজের সাবেক ছাত্রলীগনেতা ওয়াসিম উদ্দিন এবং সাত নম্বর ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলীর সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোঁড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। মারামারি শুরু হওয়ার পর মঞ্চ থেকে নগর যুবলীগের আহবায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু বারবার বিশৃঙ্খলা না করার আহবান জানাচ্ছিলেন। অন্য নেতারাও চেষ্টা করছিলেন চেয়ার ছোড়াছুড়ি থামাতে। তাতে মারামারি কিছুটা থামে। কিন্তু কাউন্সিলর মোবারক আলীর অনুসারীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফের আরো জোরালোভাবে মারামারি লেগে যায়। চেয়ারের পাশাপাশি ইট-পাটকেলও ছোঁড়াছুড়ি শুরু হয়। মারামারি মাঠজুড়ে ব্যাপক আকার ধারণ করলে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ একাধিক নেতা মাঠে নেমে থামানোর চেষ্টা করেন। তাতেও কাজ হয়নি। এসময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মাইকের সামনে যান। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে কোন কথা না বলে মঞ্চ ত্যাগ করেন। শেষে যখন পরিস্থিতি শান্ত হয়, ততক্ষণে বেশির ভাগ নেতাকর্মী মাঠ ত্যাগ করে। পরে সংক্ষিপ্তভাবে কোতোয়ালী থানা সামনে দিয়ে ঘুরে র‌্যালি শেষ করা হয়। তবে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে র‌্যালিটি নিউ মার্কেট মোড়, বোস ব্রাদার্স হয়ে আবার লালদিঘি ময়দানে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর মোবারক আলী পূর্বকোণকে জানান, তিনি সিনেমা প্যালেসের সামনে থেকে হাজারখানেক কর্মী নিয়ে মিছিল সহকারে লালদিঘি ময়দানে গেছেন। মিছিলের সামনে তাঁর অনুসারী অন্তত ৪০ জন মহিলা যুবলীগ কর্র্মী ছিল। সামনের মহিলা কর্মীরা যাতে ধাক্কা-ধাক্কির শিকার না হয়, সে লক্ষে যুবলীগ কর্মীরা নারীকর্মীদের সামনে যাওয়ার জায়গা করে দেয়ার চেষ্টা করছিল। তখন মিছিলের সামনে থাকা এমইএস কলেজের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিনের অনুসারীরা ভুল বুঝে। তারা মনে করছিল সামনে থেকে তাদের সরিয়ে আমার কর্মীরা সামনের জায়গায় অবস্থান নিতে চাইছে। তখনই তারা চেয়ার ছোঁড়া শুরু করে। একটি চেয়ার এসে তার নাকের উপর পড়লে তিনি আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। দুইজন মহিলা যুবলীগের কর্মীসহ তার আরো ছয়জন কর্মী আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানান, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের মারামারিতে অন্তত ১০ জন হালকা আহত হয়েছে। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। কর্মসূচিতে বহিরাগত কেউ এসে ঘটনার সূত্রপাত করেছে কিনা কিংবা সংগঠনের কেউ এই ঘটনায় জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা পূর্বকোণকে জানান, ঘটনাটি কেন ঘটেছে এবিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংগঠনের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংগঠনের বাইরের কেউ করলে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট