মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ নভেম্বর। অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিল সফলে প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নীতিনির্ধারকরা।

দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের কাউন্সিলে মাঠের পরীক্ষিত অভিজ্ঞ নেতাদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে প্রত্যক্ষ ভোটে নয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে হতে পারে এবারকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন প্রক্রিয়া। এর কারণ হিসেবে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ফরিদ আহম্মদ আরজু পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে (মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য) বিএনপি জামায়াতের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছেন। আগামীতেও এ ধরনের সংকট আসতে পারে। তাই মাঠের আন্দোলন সংগ্রাম ও রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতা নির্বাচনের বিকল্প নেই।’

এদিকে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল প্রত্যক্ষ ভোটে অনুষ্ঠিত হলেও এবারকার নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমঝোতার ভিত্তিতে। এমন আভাস মিলেছে সোমবার শেষ হওয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায়। এখানকার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় দলটির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ছিল সমঝোতার ভিত্তিতে।
মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং দুইটি পৌরসভার মোট ১৬২ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এরপর গত ২৪ অক্টোবর উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া। অবশ্য এ সকল ইউনিটে ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয় সমঝোতার ভিত্তিতে।

এদিকে আগামী ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে মাঠের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদের মধ্যে সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক নুরুল মোস্তফা। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন মিরসরাই উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন, ধুম ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বিপ্লব।

সভাপতি প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার পূর্বকোণকে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে আজ অবধি আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি। যেহেতু আমি মিরসরাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল বিচরণ করছি তাই এবার দলের উপজেলা সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি।’

সভাপতি প্রার্থী মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় সততা নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার সাথে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার দায়িত্ব পালনকালে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলের পক্ষে সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি। উভয় নির্বাচনে আমাদের দলের প্রার্থী আমাদের অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আগামীতে দলের দায়িত্ব পেলে দলকে আরো সুসংগঠিত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখবো।’
দেখা গেছে, মিরসরাইয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সভাপতি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা বিলবোর্ড, পোস্টার, লিফলেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাধর্মী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে সমগ্র উপজেলায় নজর কাড়ছে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন ও একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার প্রচারণা। তারা উভয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে বড় বড় বিলবোর্ড টাঙিয়েছেন। এছাড়া সম্ভাব্য দলীয় কাউন্সিলরদের মন কাড়তে তাদের সাথে দেখা করছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মিরসরাই উপজেলা আ.লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান, নিজেদের রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মত একজন নেতার ছায়াতলে থেকে রাজনীতি করতে পারছি। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি।’

মিরসরাই উপজেলা আ.লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল কাউন্সিল অনুষ্ঠান আমরা শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। উপজেলা কাউন্সিলেও তার ব্যত্যয় হবে না। আশা করছি আমাদের জননন্দিত নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দলকে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দিতে পারবো।’