চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

হলদিয়া-ডাবুয়াবাসীর কষ্টের শেষ নেই

ভাঙা সেতুতে ঝুলে আছে ৮ গ্রামবাসীর ভাগ্য

রাউজান দুটি সেতু দু’ বছর ধরে ভাঙা, সংস্কারে বরাদ্দ দাবি

জাহেদুল আলম, রাউজান

১২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার হলদিয়া-ডাবুয়া ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় ডাবুয়া খালের ওপর দুটি সেতুই বিগত দুইবছর ধরে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে। এ কারণে ৭-৮টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষের কষ্টের শেষ নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ ভাঙা দুটি সেতু হলদিয়া-ডাবুয়া ইউনিয়নের সংযোগস্থলে। তবে দুটি ভঙ্গুর সেতুই হলদিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আলীখীল গ্রামে এবং দুটি সেতুর দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। জানা যায়, সেতু দুটি গত ২০১৭ সালের মে মাসের সৃষ্ট বন্যার স্রোতে ভেঙে পড়ে। এরপর আর কোন সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খালের ১২৫ ফুট দীর্ঘ ও ২৪ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণ করা হয় ২০০১ সালের শেষের দিকে। তখন এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৬০ লাখ টাকা। অপর স্লুইচ গেট সেতুটিও প্রায় ১০ বছর আগের। দুটি সেতুর সংস্কারে প্রকল্প বরাদ্দ চেয়েছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১২৫ ফুট দীর্ঘ সেতুটির ১০০ ফুট অংশ খালে ভেঙে পড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাকি অংশ ঝুলে আছে। আধা কিলোমিটার দূরত্বে অপর স্লুইচ গেটের ওপর নির্মিত সেতুটি সংযোগ সড়ক থেকে ৫০ ফুট অংশের মাটি সরে খাল হয়ে গেছে। এখানে স্থানীয়রা ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে কাঠের সেতু বানিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে কোন রকমে চলাচল করছে। কাঠের সেতুর গোড়ায় আসলে অটোরিকশা ও রিকশা, ভ্যানের যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। এই সেতু দিয়ে আগে মানুষ ক্ষেত-খামারে যেত। গাড়ি চলাচলের জায়গা ছিল না। এখন যাতায়াতের জন্য স্থানীয়রা সাময়িকভাবে তৈরি করেছে বিকল্প সড়ক। এই সড়ক দিয়ে কোন রকমে চলছে অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান ও মোটর সাইকেল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাবুয়া ইউনিয়নের পূর্ব ডাবুয়া, হলদিয়া ইউনিয়নের বৃক্ষভানুপুর, উত্তর আলীখীল, পাঁচ পুকুরিয়া, আলিখিল, বানারস, বালুখালী, কচুপাড়া গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ এই সড়ক ও সেতুর ওপর দিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করে। চালু ছিল অটোরিকশা সার্ভিস। এখন বন্ধ। এছাড়া এই এলাকার আলীখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইয়াছিন নগর উচ্চ বিদ্যালয়, হলদিয়া ইয়াছিন শাহ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, রাউজান সরকারি কলেজসহ ৭-৮টি স্কুল- কলেজপড়ুয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগে চলাচল করছে। এই এলাকায় রয়েছে শত শত একরের সবজির চাষ। এখানে চাষাবাদ করা সবজি নিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় ভোগান্তির শেষ থাকে না। কারণ গাড়িতে করে সবজি বহন করা যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি সেতু দুইবছর ধরে ভাঙা। তাই আমাদের কষ্টের সীমা নেই। এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসি। শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসে কাঠের সেতু পেরিয়ে ঝুঁকি নিয়ে।’

গাড়িচালক মো. ইয়াকুব বলেন, ‘দুইবছর ধরে কাঠের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। এখানে এলে যাত্রীদের নামিয়ে দিই।’ একা গাড়ি নিয়ে সেতু পার হতেও শরীর কাঁপে। কিন্তু উপায় নেই। হলদিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান বলেন, এই দুই স্থানের সেতু দুটি সংস্কার না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে আছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এখানে নতুন সেতু নির্মাণে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন।’

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ১২৫ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণের জন্য ৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আশা করছি, শিগগির প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে যাবে। স্লুইচ গেটের সেতুটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটিও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে সংস্কার করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট