চার দফা নামাজে জানাজাশেষে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, রাজনীতিবিদ ও চট্টলপ্রেমী মঈন উদ্দিন খান বাদল।
এর আগে বর্ষীয়ান রাজনীতিক চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদলের দ্বিতীয় নামাজের জানাজা চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব তাঁর নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন আওলাদে রাসুল (সা.) সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এর বড় শাহাজাদা হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ কাশেম শাহ (মা.জি.আ)। মঈন উদ্দিন খান বাদলের জানাজায় অংশ নিতে মাগরিবের নামাজের আগে থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারও মানুষ জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আসতে থাকেন। এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মসজিদের ভেতরে সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদের দ্বিতীয় ও নিচতলায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল মানুষ।
এতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী, মাহফুজুর রহমান মিতা, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনসহ বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
নামাজে জানাজাশেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাদলের মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন, পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বাদলের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বাদলকে শেষবারের মতো দেখতে জানাজায় আসা নেতা-কর্মীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মঈন উদ্দিন খান বাদলকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বোয়ালখালী : নিজস্ব সংবাদদাতা সেকান্দর আলম বাবর জানান, মঈন উদ্দিন খান বাদলের প্রথম জানাজা গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের টানেলে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের জানাজার পর তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সচিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরী। জানাজায় সংসদ সদস্যরা ছাড়াও সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন। পরে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মরহুমের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার সেখানে উপস্থিত থেকে তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষ থেকে ফখরুল ইমাম এমপি, ১৪ দলের পক্ষ থেকে মূখ্য সমন্বয়ক মো. নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দ মঈন উদ্দীন খান বাদলে কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। মরহুমের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বাদলের ছেলে তাইমুর নূর। এর আগে জানাজায় অংশ নেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, হুইপ ইকবালুর রহিম, হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক, মো. নাসিম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, এ বি তাজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নজরুল ইসলাম বাবু, শফিকুল ইসলাম শিমুল ও শিরীণ আখতার এমপি এবং দলীয় নেতৃবৃন্দ। পরে মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এদিকে নগরীতে নামাজের জানাজাশেষে বাদলের মরদেহ নিয়ে আসা হয় জন্মস্থান বোয়ালখালীতে। কালুরঘাটে হাজারো মানুষ প্রিয় নেতার লাশের বহর এক পলকে দেখার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাত সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিয়ে আসা হয়। এখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো জনতা একনজর প্রিয় নেতাকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মরদেহ উপজেলা শহীদ মিনারের পাদদেশে রাখলে মঈন উদ্দিন খান বাদলের ভাই মনির উদ্দিন খানের বুকফাটা কান্না প্রকৃতির কান্নার সাথে একাকার হয়ে যায়। বিউগলের করুন সূর এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি করে। এখানে উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সামাজিক সংগঠন ফুল দিয়ে প্রিয় এমপিকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। রাত ৭. ৪০টায় বাদলের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে। এখানে ইমামতি করেন শাকপুরা দারুছুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পীরে তরিকত শাহ্ মাওলানা নুর মুহাম্মদ (ম.)। এতে অংশ নেন দক্ষিণ জেলা আ. লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম, উপজেলা আ. লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. মোকারম, পৌর মেয়র হাজী আবুল কালাম আবু, প্রসাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। রাত ৮.২০টায় মরুহুমের মরদেহ নিজ বাড়ি সারোয়াতলীতে পৌঁছলে শতশত নারী-পুরুষের কান্নায় ভারী ওঠে পরিবেশ। পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয় মানুষটিকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। রাত সোয়া ৯টায় সারোয়াতলী ইব্রাহিম নুর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের চতুর্থ ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন খিতাপচর মাবুদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রহিম আলকাদেরী (মা.জি.আ)। এখানেও মানুষের ঢল নামে। রাত সাড়ে ৯.৪০টায় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলকে নিজ বাড়ির সম্মুখস্থ বাবা-মায়ের পাশে নতুন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়াইন্না…রাজিউন)। গত শুক্রবার রাতে ভারত থেকে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়।