চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাদলের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া

অনলাইন ডেস্ক

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৩২ অপরাহ্ণ

মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মাঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেনে এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গণে।  আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে সাড়ে সাতটায় ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।  তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।  

ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন: তাঁর মৃত্যুতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন এর সহযোদ্ধা মইন উদ্দীন খান বাদল কে হারিয়ে শোকাভিভূত। তার বেহেশত কামনা করছি।’

ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল: নওফেল শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘মাঈনুদ্দিন খান বাদল। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, সংসদ সদস্য, বীর চট্টলার গৌরব, আরো অনেক কিছুতেই তাকে সম্বোধন করা যায়। না ফেরার দেশে তিনি আজ থেকে থাকবেন। ইন্না-লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজিউন। মনে হচ্ছে যেনো আবারো পিতৃহারা হলাম।’

দুবছর আগে হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়েছিলেন যখন, তখন তার বন্ধু মহিউদ্দিন চৌধুরীও গুরুতর ভাবে অসুস্থ, হাসপাতালে। খুব আফসোস করতেন বন্ধুকে দেখে যেতে পারেন নাই। অশ্রু সজল নয়নে স্মরণ করতেন। আজ থেকে আমরা তাকে স্মরণ করবো। চট্টগ্রামের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে কোথায় ছিলোনা তার গর্জন? প্রথম তার সাথে আমার পরিচয় শৈশবে। এরশাদের দোর্দণ্ড শাসনের সময়। তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রাজবন্দীদের কক্ষে। আমার বাবার প্রিজন সেলের সহবন্দী ছিলেন। এরশাদের সাথে আপস করে মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন বন্দী জীবন। আমাকে সমাজতন্ত্র শেখাতেন, দেখতেও ছিলেন স্টালিনের মত, ইম্পোজিং ব্যক্তিত্ব। আমার বাবার সাথে হাস্যরস আর গভীর রাজনৈতিক আলোচনায় মগ্ন থাকতেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কাছ থেকে শুনতাম। পরবর্তীতে যখনই দেখা হতো, প্রতিবার তার কাছ থেকে শিখেছি। রাজনৈতিক আলোচনা যে শুধুই পদবির আর ক্ষমতার রাজনীতি নয় এবং রাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, উন্নয়ন, এসবই হচ্ছে রাজনীতির মূল আলোচনা, বারবার তার সান্নিধ্যে এসে তা অনুভব করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে, তার সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে, সেই শৈশব থেকে দেখেছি অবিচল দৃঢ়তার সাথে তাকে বলতে।’

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন :চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন  চীন থেকে এক এ শোক প্রকাশ করেন। শোকবার্তায় মেয়র নাছির বলেন, ‘বাদল ভাইয়ের মৃত্যুতে চট্টগ্রামবাসী একজন সাহসী সন্তানকে হারালো। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেমন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি, ঠিক জীবনযুদ্ধেও আজীবন অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, য়া পূরণ করার মতো নয়।’

শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, ‘নগর উন্নয়নে বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও বিভিন্ন সহযোগিতা করেছিলেন বর্ষীয়ান এ নেতা। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর যেই ত্যাগ তা মানুষ আজীবন মনে রাখবে। ‘

এমপি মো. দিদারুল আলম: চট্টগ্রাম ৪ আসনের (সীতাকুণ্ড) সংসদ সদস্য (এমপি) মো. দিদারুল আলম শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘বাদলের মৃত্যুতে চট্রগ্রাম ৮ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মাইনুদ্দিন খান বাদল আর নেই। ইন্নালিল্লাহে অইন্নাইলাহে রাজেউন। শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভোরে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য মাঈন উদ্দীন খান বাদলের।

দুই বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল। হার্টেরও সমস্যা ছিল। দুই সপ্তাহ আগে নিয়মিত চেকআপের জন্য তাকে ভারতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের-(জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদে অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও বাদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

বাদলের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট