চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পরিচ্ছন্ন বিভাগের বিরুদ্ধে, চসিক হেল্প লাইন
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পরিচ্ছন্ন বিভাগের বিরুদ্ধে, চসিক হেল্প লাইন

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পরিচ্ছন্ন বিভাগের বিরুদ্ধে, চসিক হেল্প লাইন

ইফতেখারুল ইসলাম

২ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) হেল্পলাইন ১৬১০৪ নম্বরে গত আড়াই বছরে মোট কল আসে ১২ হাজার ৩৬০টি। ২০১৭ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে চালু করা এই হেল্প লাইনে প্রথম চার মাসে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে। যা মোট কলের প্রায় ৪৩ শতাংশ। এরপর ধীরে ধীরে কমে গেছে। মোট কলের মধ্যে ৫৪৫৯টি অভিযোগ। সবচেয়ে বেশি ৪০৭৩টি অভিযোগ পড়েছে পরিচ্ছন্ন বিভাগের বিরুদ্ধে। চসিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, হেল্পলাইনে কল আসা কমে গেলেও নগর ভবনে সিটি মেয়রের কক্ষ সারাক্ষণ লোকে লোকারণ্য থাকে। বেশিরভাগ সময় মেয়রের কক্ষের কোন চেয়ার খালি থাকে না। অনেক সময় অফিসের অতীব জরুরি কাজ থাকলে মেয়র পাশের রুমে গিয়ে করতে বাধ্য হন। এবিষয়ে জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বকোণকে বলেন, শুরুর দিকে হেল্প লাইনে বেশি কল আসার অনেক কারণ ছিল। এখন সেসব সমস্যার বেশিরভাগ লাঘব হয়ে গেছে। কারণ শহরের এমন কোন অলিগলি নেই যেখানে কাজ হয়নি। অতীতে মানুষ এসব নিয়েই তো অভিযোগ করতো। তাছাড়া পরিচ্ছন্ন বিভাগ নিয়েও অভিযোগ করতো। ডোর টু ডোর চালু করার পর এই বিভাগ নিয়েও অভিযোগ কমে গেছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য রাস্তা না কাটলে এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগই থাকতো না। নগর ভবনে তার কক্ষে মানুষের ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা দেখা করতে আসেন তাদের প্রায় সবাই ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে আসেন। কেউ পারিবারিক কিংবা প্রতিবেশির দ্বন্দ্বের মীমাংসা চান। কেউ চাকরির আশায় আসেন। কেউবা আর্থিক সাহায্য কিংবা চিকিৎসা সাহায্যের জন্য আসেন। আর স্কুল-কলেজে ভর্তির সময় ভর্তি এবং বেতন মওকুফের জন্য আসেন। নাগরিক সমস্যা নিয়ে নগর ভবনে লোকজন আসেনা বললেই চলে।

২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হেল্পলাইনে আসা কল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বশেষ কলটি করেছেন পশ্চিম বাকলিয়ার বাসিন্দা এবং চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র উচ্ছ্বাস দীপ্ত দাশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চসিকের হেল্পলাইনে ফোন করে ছোটবোনের ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। হেল্পলাইন থেকে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন চিকিৎসকের ফোন নম্বর দিলে তিনি ওই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিচ্ছন্ন বিভাগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পড়েছে তার মধ্যে সড়কে ঝাঁড়– না দেয়া, সড়ক এবং ডাস্টবিনে আবর্জনা পড়ে থাকার মত অভিযোগ সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৫৩৯টি। এছাড়া নালা বন্ধ থাকার অভিযোগ পড়েছে ৮০৭টি। বর্ষাকালে নালা উপচে পানি প্রবাহিত হওয়ার অভিযোগ পড়েছে ২২৫টি। পরিষ্কার না করার অভিযোগ পড়েছে ৫০২টি। এই বিভাগের কাছে বিশেষ সেবা চেয়ে অনুরোধ করে কল করেছেন ৭৮৯ জন। এছাড়া ডাস্টবিনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন ৩৪৭ জন। চসিক পরিচালিত বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কল এসেছে ১০০টি এবং বিশ^বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কল এসেছে ১০০টি। বিভিন্ন ধরনের তথ্য চেয়ে কল এসেছে ৪৮৪১টি। এর মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ৫৫৯ জন। গৃহকর বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ১০৬৪ জন। মৃত্যু সনদের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ২৫৫ জন। জন্ম সনদের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ৪৪১ জন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের ঠিকানা জানতে চেয়েছেন ৪৫৭। অন্যান্য অর্থাৎ নিয়োগ, মেয়র কখন অফিসে আসেন এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে কল এসেছে ১৬৮১টি। স্বাস্থ্য সেবা প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে কল করেছেন ১৬১ জন। সড়ক সংস্কারের জন্য অভিযোগ করেছেন ৬৩৫ জন এবং সড়ক বাতির জন্য অভিযোগ করেছেন ৭৫১ জন। তিনজন মেয়রের সাথে কথা বলতে চেয়েছেন কিংবা তাদের কথা মেয়রকে জানাতে বলেছেন। ৩২১টি কল ড্রপ হয়েছে। অর্থাৎ তারা কথা বলেননি বা বলতে পারেননি।

চসিকের আইটি অফিসার মো. ইকবাল হাসান পূর্বকোণকে জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ১৬১০৪ নম্বর দিয়ে একটি হেল্পলাইন খুলে চসিক। ওই মাসে কল এসেছিল ১২৩৭টি। এর পরের মাস অর্থাৎ মে’তে কল এসেছিল ৯৩৭টি। জুনে আসে ১৭২৮ টি এই মাসেই সর্বোচ্চ কল আসে। পরের মাস জুলাইয়ে কিছুটা কমে ১৩৬৯টি কল আসে। তার পরের মাস আগস্টে কলের সংখ্যা প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। আগস্ট মাসে কল আসে ৪৩৩টি। সেপ্টেম্বরে আরো কমে যায়। ওই মাসে ২৯৩টি কল আসে। অক্টোবরে কলের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ৪১৮টি হয়। নভেম্বর মাসেও প্রায় একই রকম অর্থাৎ ৪০৮টি কল আসে। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে কলের সংখ্যা একদম হ্রাস পায়। ওই মাসে কল আসে মাত্র ১৬৭টি। ২০১৮ জানুয়ারিতে কল আসে ২৬৩টি। ফেব্রুয়ারিতে কলের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে ৪১৭টি হয়। মার্চে কল আসে ৩০৪টি। এপ্রিলে আসে ২৯০টি। মে মাসেও প্রায় একই রকম অর্থাৎ ২৯৩টি কল আসে। জুনে আসে ২২৬টি কল। জুলাইয়ে ২৭৬টি। আগস্টে ২৫৬টি। সেপ্টেম্বরে ২১৭টি। অক্টোবরে ১৯৭টি। নভেম্বরে ১৭৭টি। ডিসেম্বরে ১৮৫টি কল আসে। ২০১৯ জানুয়ারিতে আসে ১৫৯টি। ফেব্রুয়ারিতেও সমসংখ্যক কল আসে। মার্চে ১৮০টি, এপ্রিলে ২৯৬টি, মে মাসে ৩০১টি, জুনে ২১২টি, জুলাইয়ে ৩০০টি, আগস্টে ৪১৮টি এবং সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে ২৪৪টি কল আসে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট