চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিরসরাইয়ে হচ্ছে ট্যানারি পল্লী

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৮ অপরাহ্ণ

মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে ট্যানারিশিল্পের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ৩’শ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানায়, দেশে চামড়া শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে সাভারের পর আরো দুটি ট্যানারি পল্লী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ দুটির একটি রাজশাহীতে এবং অন্যটি মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আর্নেস্ট মানির টাকা জমা দেয়া হবে।

ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চেম্বার নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোন লেদার ভিলেজ না থাকা দুঃখজনক। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়নে অর্থনীতি তথা দেশের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সম্ভাবনাময় ট্যানারি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত ও গতিশীল করতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এ অঞ্চলে ট্যানারি শিল্প খুবই রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তাই এ শিল্প ও তৎসংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চল এ খাতকে আরো ত্বরান্বিত করবে।

এছাড়াও সরকার সারাদেশে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সুবিধা-সম্বলিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে ৩০টিরও অধিক বৃহত্তর চট্টগ্রামে বলে জানান তিনি। জানা যায়, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠে ১৬টি ট্যানারি। স্বাধীনতার পর গড়ে ওঠে আরো ৫টি। ২২টি ট্যানারির মধ্যে এখন টিকে আছে মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার। ইটিপি না থাকায় মদিনা ট্যানারির কার্যক্রম বন্ধ আছে।

ট্যানারিশিল্প মালিক ও চামড়া ব্যবসায় জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সুযোগ সুবিধার অভাবে এ শিল্পে ধস নেমেছে। বায়েজিদ বোস্তামী ও কালুরঘাট এলাকায় এক সময় ট্যানারি শিল্পের জমজমাট কর্মকাণ্ড চলতো। ব্যাংক ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ততা, পরিবেশ দূষণের অভিযোগ ও মৌসুমে প্রয়োজনীয় চামড়ার সরবরাহ না থাকাসহ বাজারমূল্য এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা এ শিল্পের দুর্দশার অন্যতম কারণ। অথচ প্রতিবছর বৃহত্তর চট্টগ্রামে পশুর চামড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এসব চামড়া বিভিন্নভাবে ঢাকায়  চলে যায়, চোরাপথে পাচার হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী দেশে। চট্টগ্রামে ১৯৯১ সালে সর্বশেষ টি কে গ্রুপ ট্যানারি স্থাপন করে। কালুরঘাট শিল্প এলাকায় রিফ লেদার নামের এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটিই বর্তমানে চট্টগ্রামের একমাত্র চামড়া ও চামড়াজাত কারখানা। রিফ লেদার ৫-৭ শতাংশ চামড়া কিনে থাকে। অবশিষ্ট চামড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয়।

বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্যানারিগুলো হলো; হিলটন (এইচআরসি), জামান রহমান, ওরিয়েন্ট, মন্টি, সিকো লেদার, কর্ণফুলী, জুবিলী ট্যানারি, এশিয়া, মেট্রোপলিটন, চিটাগাং ট্যানারি প্রভৃতি।রিফ লেদারের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) মুখলেসুর রহমান জানান, চট্টগ্রামের ট্যানারিগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার না হওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য বিপণনে আধুনিকতা আনতে না পারায় এ খাতে টিকে থাকা কঠিন। চামড়াশিল্পকে রক্ষা করতে হলে ট্যানারি মালিকদের মতো চামড়ার আড়তদারদেরকেও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকায় ‘৩য় বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৯’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প থেকে কাক্ষিত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে আগামী ৫ বছর এ খাতে আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, সকল রপ্তানি খাতের জন্য সমান সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। যেসব বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করা হবে। সরকার চামড়াজাত দ্রব্য ও পাদুকা রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বিশ্বের আমদানিকারকদের যোগাযোগ ঘটানোর জন্য ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির ওপর জোর দিচ্ছে। ফলে, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প গত এক দশকে পাট ও পাটজাত পণ্যকে রপ্তানি আয়ে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখন এ খাতের আয় তৈরি পোশাকের পরেই জায়গা করে নিয়েছে। একইসাথে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে চামড়া ও পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট