চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাউজান পরিবেশ নষ্ট, সবজি উৎপাদন হ্রাস

জমি ও পুকুর ভরাট করে যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ

জাহেদুল আলম, রাউজান

২২ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

রাউজানের বিভিন্নস্থানে একের পর এক পুকুর, জলাশয়, ডোবা, অব্যবহৃত হাজামজা পুকুর, ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে কৃষি জমি কমার পাশাপাশি হ্রাস পাচ্ছে সবি জবা খাদ্য উৎপাদন। অনেকে শত, অর্ধশত বছর পুরানো পুকুরও বালু আর মাটি দিয়ে ভরাট করে গড়ে তুলছে বাণিজ্যিক ভবন, বহুতল বাড়ি। অতি মুনাফার আশায় এসব পুকুর, জমি ভরাট করা হলেও পরিবেশসহ বিভিন্ন কিছুর ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। উপজেলার কোথাও আগুন লাগলে তাতে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। সহজে পাম্প মেশিন বসিয়ে অগ্নিদুর্গত বাড়িতে পানি ছিটাতে পারে না ফায়ার সার্ভিস এন্ড ডিফেন্সের কর্মী এবং আগুন নিভাতে এগিয়ে আসা সাধারণ মানুষ। এছাড়া সাঁতার শেখাসহ নানাকিছুর ওপর প্রভাব পড়ছে দিনদিন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুর, জলাশয়, ডোবা, ফসলী জমি ভরাটের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। আগামীতে এ অবস্থার আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বহু পুকুর, জলাশয়, ফসলী জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদরের ফকিরহাট বাজারের পশ্চিম পাশে বিশাল একটি পুকুর ছিল। এ পুকুরের পানি ব্যবসায়ীরা ও এলাকার লোকজন ব্যবহার করতো। পুকুরটি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে ডিউ বি.জি শপিং সেন্টার। তাহের প্লাজাও নির্মিত হয়েছে পুকুর ভরাট করে। তার পাশে বর্তমানে নির্মাণ করা হচ্ছে রাউজান সিটি সেন্টার নামের বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। উপজেলা ডাকঘরের পশ্চিম পাশে একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। রাউজান দাশ পাড়ায় একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দাইয়্যারঘাটা এলাকায় একটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বাণ্যিজিক ভবন। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাইন্যাপুকুর কুলাল পাড়া এলাকায় একটি শত বছরের পুরাতন পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে আবাসিক ভবন। উপজেলার পাহাড়তলী চৌমুহনী এলাকায় কয়েকটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি বাণিজ্যিক ভবন। নোয়াপাড়া পথেরহাটে কয়েকটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন। এ ইউনিয়নের উনসত্তর পাড়ার গৌরিশঙ্কর হাটের দক্ষিণ পাশে একটি অকৃষি নাল জমি ভরাট করা হচ্ছে। হলদিয়া ইউনিয়ন ও ডাবুয়া ইউনিয়নের সীমানায় আমীর হাটের পশ্চিম ডাবুয়া আমীর চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে শত বছরের পুরাতন পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘আল শরীফাইন ফিউচার পার্ক’ নামের একটি বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় প্রত্যেক এলাকার কোন না কোন স্থানে ফসলি জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা বাড়ি ও মার্কেট। এতে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। কমে যাচ্ছে ধান, সবজি উৎপাদন। এ প্রসঙ্গে হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘পশ্চিম ডাবুয়া আমীর চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে পুকুরটি ডাবুয়া ইউনিয়নের সীমানায়।’ তিনি বলেন, ‘স্কুলের পাশে শত বছরের পুরাতন পুকুর ভরাট করে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করায় স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন অস্বস্তিতে রয়েছে।’ ঊনসত্তরপাড়ায় অকৃষি নাল জমি ভরাটের ব্যাপারে মো. মনির ও ইসমাঈল হায়দার বলেন, ‘যেটি ভরাট করা হচ্ছে, তা কোন পুরনো পুকুর, জলাশয়, ডোবা নয়। এটি অকৃষি নাল জমি। এটি মাত্র কয়েকবছর আগে খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পানি জমে মশা মাছির উপদ্রব এবং পরিবেশগত সমস্যা দেখা দেয়ার এটি ভরাট করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবীর সোহাগ বলেন, ‘পুকুর জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ বে-আইনি। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করার পূর্বে পুকুর জলাশয় ভরাট করে বাণিজ্যিক ভবন ও আবাসিক ভবন নির্মাণকাজ করা হয়েছে। আমীর হাটে ও পুকুর ভরাট করে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার কাজ পূর্বে থেকে শুরু করা হয়েছিল। আমীর হাটে পুকুর ভরাট করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট