চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অপহরণ করে আটকে রেখে জমি রেজিষ্ট্রি, প্রধান আসামী কমিশনার তৈয়ব জামিনে মুক্ত

চন্দনাইশ সংবাদদাতা

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৫ অপরাহ্ণ

চন্দনাইশ পৌরসভার দক্ষিণ গাছবাড়িয়া এলাকার মৃদুল পালকে অপহরণ করে নিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করার মামলায় প্রধান আসামী কাউন্সিলর তৈয়ব আলী জামিনে মুক্তি লাভ করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আটককৃত ৩ আসামী ২০ দিন ধরে জেল হাজতে থাকলেও জামিন পাইনি।

গত ১৭ অক্টোবর মামলার ১নং আসামী চন্দনাইশ পৌরসভার কাউন্সিলর তৈয়ব আলী স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পনপূর্বক জামিনের আবেদন জানালে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমি ৫’শ টাকার বন্ডে জামিনে মুক্তি দেন। অন্যদিকে মামলার ২ ও ৩ নং আসামী গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে গত ১৭ অক্টোবর জামিন চাইলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেন।

মামলার অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, চন্দনাইশ পৌরসভা দক্ষিণ গাছবাড়িয়া পালপাড়া এলাকার মৃত নিখিল চন্দ্র পালের ছেলে মৃদুল পালকে গত ২৮ আগস্ট অপহরণ করে হাশিমপুর সোনাইছড়ি পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে গাছবাড়িয়া এলাকার ইদ্রিস মুন্সি ও গাছবাড়িয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারি প্রবীর কান্তি পাল উপস্থিত হয়ে মৃদুল পাল থেকে জোরপূর্বক জমি রেজিষ্ট্রির কাগজে স্বাক্ষর নেয়। সে থেকে মৃদুল পাল স্ব-পরিবারে এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়ায়। অবশেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মৃদুল পাল স্থানীয় কাউন্সিলর তৈয়ব আলীকে ১ নং আসামী করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অপহরণ, মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি দলিলে স্বাক্ষর নেয়াসহ হত্যা করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ মামলার সূত্র ধরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে দক্ষিণ গাছবাড়িয়া এলাকার কমল মিয়ার ছেলে মনির আহমদ (৫২), জাগির আহমদ (৩৬), মৃত নাদেরুজ্জামানের ছেলে মো. আলমগীরকে (৩৪) আটক করে।  তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মাহাবুবুল আলম আকন্দ বলেছেন, মৃদুল পালের সাথে স্থানীয় মনিরের জমি বিক্রয় নিয়ে বিরোধ হলে স্থানীয় কাউন্সিলরের নিকট বিচার-মীমাংসার জন্য যান। তিনি কাউন্সিলর হওয়ায় বিচার করার জন্য তর্কিত জমির পাওয়ার আলমগীরের নামে দেয়ার জন্য বলে ৩’শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। পরবর্তীতে স্ট্যাস্প পরিবর্তন করে আমোক্তারনামা নেন আলমগীরের নামে ২০১৭ সালে। এরপর কাউন্সিলর এ দীর্ঘ সময়ে আলমগীর থেকে ঐ জায়গা দেয়ার কথা বলে ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। মনির জায়গাটি ক্রয় করার জন্য পরবর্তীতে আলমগীরের শরণাপন্ন হন। এক পর্যায়ে জমির মূল্য ৮ লক্ষ টাকা ধার্য হয়। কিন্তু মনির আলমগীরকে বলে যে, জমির প্রকৃত মালিক মৃদুল পালকে রেজিস্ট্রি দিতে হবে। তখন আলমগীর কাউন্সিলরের নিকট তার দেয়া ৫ লক্ষ টাকা কিভাবে পাবে প্রশ্ন করে। এর প্রেক্ষিতে কাউন্সিলরের লোকজন গত ২৮ আগস্ট দুপুরে মৃদুলের বাড়িতে গিয়ে তাকে সিএনজি টেক্সি করে সোনাইছড়ি পাহাড়ে নিয়ে আটক করে রাখে। সেখানে রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারি প্রবীর কান্তি পাল ও দলিল লেখক ইদ্রিস মুন্সি উপস্থিত হয়। এর পূর্বে কাউন্সিলরের লোকজন মৃদুলের কাঁধে অস্ত্র দিয়ে ছবি তুলে বলে, দলিলে স্বাক্ষর না করলে অস্ত্র মামলা দিয়ে ফাঁসাবে বলে হুমকি দেয়। তাছাড়া তারা মৃদুলকে মারধর করে জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি দলিলে স্বাক্ষর নেয়। ২ ও ৩ নং আসামীর আইনজীবী শওকত হোসাইন বলেছেন,গতকাল ১৭ অক্টোবর মামলার প্রধান আসামী কাউন্সিলর তৈয়ব আলীকে জামিনে মুক্তি দেন বিচারক। অথচ জমির দলিল গ্রহীতা মনির আহমদ ও দলিলের সাক্ষী জাকির আহমদ গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হয়ে ২০ দিন জেলে থাকার পর ও জামিন পাইনি। বর্তমানে এ মামলার ৩ জন আসামী জেল হাজতে রয়েছে, ১ জন জামিনে আসলে ও অপর ৫ আসামী পলাতক রয়েছে বলে জানা যায়।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট