চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চার কারণে আটকা নির্মাণকাজ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

হ পতেঙ্গা রিং রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড বন্দর এলাকায় নতুন করে ভূমি জটিলতা হ বিমানবন্দর সড়কে কাজের অনুমতি মেলেনি বঙ্গবন্ধু টানেল কর্তৃপক্ষের

ইমরান বিন ছবুর

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের’ নির্মাণ কাজ চার কারণে আটকে আছে। পতেঙ্গা রিং রোড, পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোড, বন্দর এলাকায় নতুন করে ভূমি জটিলতা এবং বিমানবন্দর সড়কে (জি ওয়ান রোড) কাজ করার জন্য বঙ্গবন্ধু ট্যানেল কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ের নির্মাণ কাজ আটকে আছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পাঁচ অংশে ভাগ করা হয়েছে। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম অংশ। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত তৃতীয় অংশ। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত চতুর্থ এবং কাটগড় থেকে বিমানবন্দর সড়ক পঞ্চম অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে।

জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানান, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এবং পিসি রোডের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং অংশে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং এর বন্দর অংশে ভূমি অধিগ্রহণ এবং সয়েল টেস্ট করতে হবে। এরপর সেখান থেকে থাকা স্থাপনা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে হবে। একাজগুলো শেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমরা কাজ শুরু করবো। এছাড়া, রিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে কাজ করা যাচ্ছে না। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প পরিচালক আমাদের জানিয়েছেন। একইভাবে কাটগড় থেকে বিমানবন্দর অংশে জি ওয়ান রোডে কাজ করার জন্য ট্যানেল কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো অনুমতি পায়নি।

মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি সড়কে কাজ করার সময় তার বিকল্প সড়ক আছে কিনা তা দেখতে হচ্ছে। বিকল্প সড়ক না তৈরি হওয়া এবং বিভিন্ন জটিলতার কারণে লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং এবং কাটগড় থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় অংশে কাজ চলছে বলে জানান মাহফুজুর রহমান।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, সিডিএ এখানে কখন এবং কীভাবে কাজ শুরু করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা গত মঙ্গলবারও তাদের সাথে বসেছি। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু এখানে ট্যানেলের কাজ চলছে, কাজের যাতে কোন বিঘœ না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে। সিডিএ কখন কাজ শুরু করতে পারবে তা এখন বলা যাচ্ছে না।

রিং রোড সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্স বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রিং রোডের কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। রিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছে না। তাই আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।

আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এবং পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের নির্মাণ কাজ সম্পর্কে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. তৈয়ব জানান, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। ৬ কিলোমিটারের পিসি রোডকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি অংশ (নিমতলা-তাসফিয়া সেন্টার) ডিসেম্বরে শেষ হবে। অন্য অংশ তাসফিয়া সেন্টার থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত সড়কের কাজ ২০২০ সালের এপ্রিলে শেষ হবে। তবে সাগরিকা থেকে অলংকার পর্যন্ত সড়কের অংশের এখনো নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, কাঠগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। এই অংশে ৫৭টি পিলার নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ৩৭টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে মোট প্রকল্পের মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যথাযথভাবে কাজ করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া এবং নকশা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ব্যয় এবং সময় দুটোয় বাড়বে বলে জানান তিনি। কখন প্রকল্পের মোট কাজ শেষ হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
সিডিএ সূত্র থেকে জানা যায়, ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৭টি পয়েন্টে ১৪টি র‌্যাম্প ও লুপ থাকার কথা রয়েছে। লালখান বাজার থেকে শুরু হওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টাইগারপাসে ১টি, আগ্রাবাদে ৪টি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে ১টি, কাস্টমস মোড়ে ২টি, সিইপিজেডে ২টি, কেইপিজেডে ২টি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২টি র‌্যাম্প থাকবে। র‌্যাম্প এবং লুপগুলোর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ২৪ টি কিলোমিটারের মত।

উল্লেখ্য, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট