চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংবাদ সম্মেলনে অস্বীকার, তদন্তে দুদক

রাউজানে দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

দুদকের তদন্ত, মাদরাসার সভাপতি-অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারীদের বিরোধে এলাকায় তোলপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাউজান

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ

 

রাউজানের উরকিরচর মোহাম্মদীয়া গাউছিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাছান রেজার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন একই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস এম ইউছুপ। এ কারণে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুদক।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ভুয়া শিক্ষকের নামে সরকারের অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি-অধ্যক্ষ দ্বন্দ্ব ও পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানকারীদের বিরোধে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ অবস্থায় গত ১৫ অক্টোবর মদুনাঘাট এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাওলানা হাছান রেজা। তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অসত্য ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন। আয়োজিত সম্মেলনে মাদ্রাসার সাবেক সদস্য ও বর্তমান এতিমখানা কমিটির সদস্য আনোয়ার আজম অভিযোগটি মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘অধ্যক্ষের সম্মান ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উরকিরচর মোহাম্মদীয়া গাউছিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস.এম ইউছুপ তারই মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সম্পাদক মাওলানা হাছান রেজার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রামস্থ উপ-পরিচালকের দপ্তরে অভিযোগ করেন। অভিযোগটি হলো, অধ্যক্ষ ভুয়া শিক্ষকের নামে সরকারের প্রায় ৪ লক্ষ ১০ হাজার ৫৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও একই অভিযোগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরো বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। এরমধ্যে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে সরকারি কোষাগারের টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে এতিমখানা ও মাদরাসার ফান্ডের টাকা তছরুপ, মাদরাসার ভিতরে অবৈধভাবে কে.জি স্কুল পরিচালনা, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ঘন ঘন বিদেশ সফর, এতিমখানার মালিকানাধীন জায়গায় ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনে মহিষের খামার গড়ে তোলা, এতিমখানার নামে ওয়াজ মাহফিল থেকে মানুষের দান আদায় করে সম্পূর্ণ টাকা ফান্ডে জমা না করা, মাদরাসা ভবনের একটি কক্ষ কাজী অফিসের কর্মকা- পরিচালনায় নিজের ভাইকে দেয়াসহ আরো নানা অনিয়মের অভিযোগ। তবে দুদক এতসব অভিযোগের মধ্যে শুধুমাত্র ৪ লক্ষ ১০ হাজার ৫৩৪ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে স্মারকমূলে পাঠানো পত্রের সূত্র ধরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দুদক অভিযোগটি তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবীর সোহাগ গত ১ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদ তালুকদার।

এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদ তালুকদার বলেন, ‘উভয়পক্ষের কাগজপত্র নেয়া হয়েছে। আরো কিছু কাগজপত্রের দরকার হবে। তবে আমি ঢাকায় ট্রেনিংয়ে থাকায় সবকিছু এখনো ভালোভাবে দেখতে পারিনি।’

এদিকে মাদরাসা সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় তোলপাড় চলছে। সম্প্রতি মাদরাসা সভাপতি এস.এম ইউছুপ অধ্যক্ষ হাছান রেজার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে স্থানীয় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দেন অধ্যক্ষ। এ নিয়ে এলাকার কিছু লোক সভাপতি ও অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় অধ্যক্ষ হাছান রেজা গত মঙ্গলবার দুপুরে রাউজানের সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ সময় তিনি বলেন ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তার প্রত্যকটি অসত্য। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ায়েজীন আর সুবক্তা হিসেবে আমার অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া মাদরাসাটি আমার বাবা মাওলানা আবদুল মালেক প্রতিষ্ঠিত। সে হিসেবে আমি উক্ত মাদরাসার খেতমত করছি। প্রতিষ্ঠাতাকালীন আমার বাবার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করেছে, তারাই মাদরাসাকে ধংস করার লক্ষ্যে পুনরায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাদরাসা কমিটির অনুমোদন নিয়ে সব কাজ করা হয়েছে। অনিয়ম হলে শুধু দায়ী আমি হবো কেন, এর দায় নিতে হবে সভাপতিকেও।’

উল্লে­খ্য, ২০১৭ সালের ২৪ মে রাউজান উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজাও অধ্যক্ষ হাসান রেজার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন। এতে সত্যতা প্রমাণিত হলে শামীম হোসেন রেজা পুনরায় তদন্তে পাঠানো হয়, যা এখনো চলমান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট