চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জেএসসি পরীক্ষা

কেন্দ্র সচিবদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

সন্দ্বীপ ২০১৮ সাল থেকে চৌদ্দটি পত্রের পরিবর্তে পরীক্ষা হয় সাতটি। তবে বোর্ড নির্ধারিত ফি দেড়শ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা করে।

নরোত্তম বনিক, সন্দ্বীপ

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অতিরিক্ত কেন্দ্র ফি আদায়ের অভিযোগ তুলে তা কমানোর দাবি জানিয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলার পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। সেইসঙ্গে কেন্দ্র সচিবদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের দূরবর্তী কেন্দ্রে ডিউটিতে পাঠিয়ে ভোগান্তির।

জানা যায়, জেএসসি পরীক্ষার শুরুতে কেন্দ্র ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল একশ টাকা। কেন্দ্র খরচ বিবেচনা করে পরে সবগুলো শিক্ষা বোর্ডে কেন্দ্র ফি আরো পঞ্চাশ টাকা বাড়িয়ে দেড়শ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু সন্দ্বীপে বোর্ড নির্ধারিত ফি অমান্য করে তার দ্বিগুণ ফি পরীক্ষার্থীপ্রতি ৩০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। শুরু থেকে মোট চৌদ্দটি পত্রের পরীক্ষা হলে নেয়া হলেও ২০১৮ সাল থেকে পরীক্ষা অর্ধেক কমিয়ে সাতটি করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা কমলেও কেন্দ্র ফি আদায় হচ্ছে আগের মতো। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় জেএসসি পরীক্ষার ৬টি কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৪ জন পুরাতন ও ২ জন নতুন কেন্দ্র সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা না করে সচিবরা নিজেদের সুবিধা আদায়ে এদের মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

সিন্ডিকেটে নতুন সচিবদের মতামতকে উপেক্ষা করে পুরাতনরা সবকিছু করছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রগুলোতে সমস্যা হবে, এই ভয়ে কেন্দ্র সচিবদের নির্ধারিত ফি নিয়ে কথা বলতে পারছেন না। কেউ তাদের মতামতে দ্বিমত পোষণ করলে তাকে বাকিরা বিভিন্নভাবে নাজেহাল করার প্রমাণ রয়েছে। প্রতিবছর পরীক্ষার পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে পরীক্ষা পরিচালনার বিষয়ে কেন্দ্র সচিবদের সভা হয়। সভায় পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ও পর্যবেক্ষকদের ডিউটি নির্ধারণ করা হয়। সহকারী শিক্ষক মো. আকতার হোসাইন বলেন, আমার স্কুলে কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু আমাদের পরীক্ষার্থীরা ভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। এরপরেও আমরা বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সাইকেল চালিয়ে ডিউটি করতে হচ্ছে। পরীক্ষার আগে পরে আসা-যাওয়াসহ সাড়ে ৫ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে ভাতা পাচ্ছি মাত্র ১৩০ টাকা। সাইকেল ছাড়া গাড়িতে আসা-যাওয়া করতে খরচ হয় ১৫০ টাকা। অন্য সহকারী শিক্ষকদেরও অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী অথবা নিজ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে তাদের কোন পরীক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে সেখানে ডিউটি দেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্র সচিবরা চাপে রাখতে তাদেরকে অনেক দূরের কেন্দ্রে ডিউটি দিচ্ছে।

জেএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে মতবিনিময় সভায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম এবং চট্টগ্রাম থেকে মালামাল আনা-নেয়ার খরচ বেশি হয়, এমন অজুহাত দেখিয়ে বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে ৩০০ টাকা করে কেন্দ্র ফি নির্ধারণ করা হয়। অতিরিক্ত কেন্দ্র ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুরুল হুদা বলেন, কেন্দ্র ফি কমানোর কোন সুযোগ নেই। আগে যা ছিল তা-ই নির্ধারণ করা হবে। তবে পরীক্ষার বিষয় অর্ধেক হওয়ার পরেও কেন্দ্র ফি কেন কমবে না, সেই বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান জানান, বোর্ড নির্ধারিত কেন্দ্র ফি’র অতিরিক্ত টাকা আদায় করার কোন সুযোগ নেই। এই বিষয়ে অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপের কেন্দ্রগুলোর মালামাল একইসাথে ট্রলারে করে সন্দ্বীপ আনা হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের গুদাম থেকে কেন্দ্র স্কুলের স্টোর রুমে এক বস্তা উত্তরপত্র আনতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। পরীক্ষার পর এক কেন্দ্রের উত্তরপত্র পোস্ট অফিসের মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডে পৌঁছাতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। প্রতিদিন একজন পর্যবেক্ষককে সম্মানী ভাতা দেয়া হয় মাত্র ১৩০ টাকা। কেন্দ্র স্কুলগুলোতে যাবতীয় অবকাঠামো ঠিক থাকায় পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এগুলোতে আলাদা করে কোন খরচ করার প্রয়োজন পড়ে না। সন্দ্বীপের একজন পরীক্ষার্থীর সাত বিষয়ে পরীক্ষা নিতে যাবতীয় খরচ হয় সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা করে।

সন্দ্বীপ এবি হাই স্কুল কেন্দ্র সচিব মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, পরীক্ষা পরিচালনা করতে অনেকগুলো খাতে খরচ হয়। এখানে ব্যবসা নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট