চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

ভিতরে-বাইরে অবাধে ধূমপান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গ্রাহ্য করা হয় না রোগীকেও

ইমাম হোসাইন রাজু

১৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

রোগীর সামনেই অবাধে ধূমপান চলছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এর ফলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। আইন অনুসারে হাসপাতালে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে বৃহৎ এই সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন এমনটি চলে আসছে। তবে কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত হাসপাতালের ভেতরে পুরোপুরি ধূমপান বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও হাসপাতালের উপ-পরিচালক বলছেন, ধূমপান না করতে হাসপাতাল এলাকায় বিভিন্ন সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। এ বিষয়ে সকলকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

সরেজমিনে চমেক হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল এলাকার প্রধান ফটক থেকে শুরু করে সর্বত্রই চলছে ধূমপান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে, গাড়ি পার্কিং এলাকায়, বিভিন্ন মোড়ে দেদারসে ধূমপান করে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। হাসপাতালের বাইরে কিংবা ভেতরে ধূমপান করা থেকে বাদ নেই স্বয়ং হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও রোগীর স্বজন এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যও। বলা যায় সর্বত্রই চলে ধূমপান। এছাড়া হাসপাতাল এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ভ্রাম্যমান তামাকপন্যের বিক্রেতাও রয়েছে চোঁখে পড়ার মতো। এসব ভ্রাম্যমান তামাক বিক্রেতার অধিকাংশ আবার শিশু-কিশোর ও মহিলা।

অন্যদিকে হাসপাতালের ওয়ার্ড কিংবা ওয়ার্ডের সামনে ও অভ্যান্তরেই যে ধূমপান কিংবা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করা হয় তার চিত্র দেয়ালের পানের পিক দেখলেই বুঝা যায়। শুধু পানের পিক-ই নয়, দিনে বা রাতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে যে ধূমপান করা হয় তা বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে ও ভেতরে পরিত্যক্ত সিগারেটের উচ্ছিষ্টই বলে দেয়। এছাড়া পড়ে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেটের খালি প্যাকেটও বলে দেয় হাসপাতালের অভ্যন্তরেই চলে তামাক সেবন।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এ অনুসারে হাসপাতালসহ সকল পাবলিক প্লেসসমূহে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চমেক হাসপাতাল সম্পূর্ণ ঘুরে এসে কয়েকটি সতর্কতামূলক নোটিশ ও ধূমপান নিষিদ্ধ লিখা বিভিন্ন সাইনবোর্ড দেখা গেলেও তা ছিল হাতেগোনা। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

চট্টগ্রামকে তামাকমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা। এ প্রসঙ্গে ইপসার উপ-পরিচালক নাছিম বানু বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে জরুরি চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসে এবং বেশিরভাগই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।’

আয়তন অনুসারে চমেক হাসপাতালে সতর্কতামূলক নোটিশের সংখ্যা অপ্রতুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই সচেষ্ট হতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিটি স্পটে ধূমপান নিষিদ্ধসহ সচেতনমূলক একাধিক সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এরপরও যদি কেউ ধূমপান করে তাহলে আমি বলবো তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা চাইলেও কাউকে জরিমানা করতে পারবো না। এটা করার একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি চাইলে যে কোন মুহূর্তে মোবাইলকোট পরিচালনা করে এসব বন্ধ ও জরিমানা করতে পারেন’। তিনি বলেন, ‘যারা এখানে ধূমপান করেন তাদের সবাই কোনো না কোনো রোগীর স্বজন। তাদেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত- একজন রোগীর সামনে কিংবা তার পাশে যদি ধূমপান করা হয়, বেশিরভাগ ক্ষতির অংশটা হবে রোগী। তাই এ বিষয়ে সকলকেই অবশ্যই সচেতন হতে হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট