চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিএনপির অভিযোগ ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট

সাতকানিয়া উপজেলা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মারধর

সুকান্ত বিকাশ ধর, সাতকানিয়া

১৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কয়েকটি অভিযোগ ছাড়া সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন গতকাল সোমবার অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্র্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ১২৫টি ভোট কেন্দ্রে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সকালে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই নগন্য। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুপুরের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে সারাদিন বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের খোশ গল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি ভোট চলাকালীন সময়ে লাইনের মধ্যে কোন ভোটার উপস্থিতি না থাকায় অনেক কেন্দ্রে মধ্যহ্নভোজ সেরে ফেলতে দেখা যায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা এবং ওই কেন্দ্রে নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। তবে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও তেমন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে রিটার্নিং অফিসার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

অপরদিকে, সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফ্ফার চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও একই দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বশির উদ্দিন আহমদ জানান, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তার কোন অভিযোগ নাই। তিনি জানান, আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি। আমি নির্বাচন বর্জন করবো না।
অন্যদিকে, বিএনপি প্রার্থীর এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি জানান, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখুর পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সকাল থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটার শূন্য ছিল। আবার দুপুরের দিকে কিছু কিছু কেন্দ্রে সীমিত সংখ্যক ভোটারের লাইন দেখা যায়। সকাল ৯ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তেমুহনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ওই সময়ে কেন্দ্রে কোন ভোটার ছিল না। পুরো ভোট কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। অবশ্য কিছুক্ষণ পর ৮-১০ জন ভোটার কেন্দ্রে এসে ভোট দেন। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে জনার কেঁওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে লাইনে কোন ভোটার নাই। আধ ঘণ্টায় ৯টি বুথে মাত্র ১৫টি ভোট পড়েছে। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, অত্যন্ত সুশৃঙ্খল পরিবেশে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর এজেন্টরা উপস্থিত রয়েছে। তবে ভোটারের উপস্থিতি কম।

সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে কেঁওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একটি বুথে মাত্র ৪ জন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আর অন্যান্য বুথগুলোতে কোন ভোটার নাই। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ঢেমশা ইউপি কার্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের দীর্ঘ লাইন। ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী জানান, কেন্দ্রের ভেতরে বা বাইরে কোন ধরনের ঝামেলা নাই। সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও দুপুরের দিকে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

তবে পুরো সাতকানিয়ার বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি জানান, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের এক অনন্য নজির । প্রত্যেক কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। শুরু থেকেই বিএনপি প্রার্থী ভরাডুবির আশংকায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিল। ভোট গ্রহনের পরিবেশ নিয়ে সকাল থেকে কোন ধরনের অভিযোগ করেনি। দুপুরের দিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে খবরাখবর নিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি বুঝতে পেরে মনগড়া অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার যে অভিযোগ তিনি করছেন তা সঠিক নয়। তিনি জানান, ভোটারের উপস্থিতি কম হয়েছে। ভোটারের উপস্থিতি আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল।

এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট শেষ হওয়ার আড়াই ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন এ উপজেলা নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে প্রার্থীর সোনাকানিয়া ইউনিয়নস্থ নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হাজী রফিকুল আলম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি শেফায়েত উল্লাহ চক্ষু, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জান্নাতুল নাঈম রিকু ও সাধারণ সম্পাদক মুন্নি আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার। আশাও ছিল সরকার এ নির্বাচন অতীতের মত না করে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করবে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে ম্যানেজ করে আমার এজেন্ট ও দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে যে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আওয়ামীলীগ, তা ছিল নজিরবিহীন।

তিনি বলেন, ৬০-৭০টি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। যে ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দিবে মনে করছে, তাদের ইভিএম মেশিনে ফিঙ্গার নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। পরে যুবলীগ ও ছাত্রলীদের নেতাকর্মীরা ভোটদানের গোপন কক্ষে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছে। এ সময় ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত প্রশাসন ওই দলীয় নেতা-কর্মীদের বাঁধা প্রদান না করে উল্টো তাদের সহায়তা প্রদান করেছেন। তিনি আরো বলেন, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এম.এ মোতালেব নিজে আমার ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট মো. কাইছার ও মো. হুমায়ুনকে মারধর করেছে। এছাড়া ছদাহা কেফায়েত উল্ল্যাহ-কবির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপজেলা যুবদল সভাপতি শেফায়েত উল্লাহ চক্ষুকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ছেলে মো. ওয়াহিদ মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। অভিযোগে তিনি বলেন, ভোট শুরু হওয়ার কয়েকঘণ্টা পর আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট কেন্দ্র ও এর বাইরের বিভিন্ন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও টহল পুলিশ টিমদের অভিযোগ করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেছেন। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ প্রার্থী নিজেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ৭/৮টি গাড়ি নিয়ে নিজে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়। প্রশাসনিক কোন সহায়তাও পায়নি, সেখানে কিভাবে নির্বাচন করব। তিনি বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগ দেশ-বিদেশে সমালোচিত। মনে করেছিলাম আগামী যে সব নির্বাচন হবে, সেগুলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের এখনো বোধদয় হয়নি। এখন মনে হচ্ছে সরকার যে আগের জায়গায় রয়ে গেছে এ নির্বাচনই তা প্রমাণ করে। গণতন্ত্রকে হত্যা করতে করতে এ সরকার গণতন্ত্রের গ পর্যন্ত রাখবে বলে আমার মনে হয় না। তাই সব দিক বিবেচনা করে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জানিয়ে আমি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট