চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রথম দিনেই উধাও শতাধিক বাস

হ ডকুমেন্ট-পারমিট না থাকায় সড়কে নামেনি শতাধিক বাস হ কমেনি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামার প্রবণতা হ উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরো ৪ দিন সময় চেয়েছে মালিক-শ্রমিকরা

আল-আমিন সিকদার

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

 

প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, ‘ঠেলার নাম বাবাজি’। সম্প্রতি নগরীর গণপরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর ব্যস্ততম দুটি রুটের পরিবহণগুলোকে কঠোর এ পদক্ষেপের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেখানে নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে না বাসগুলো। চালকদের বাধ্যতামূলক পরিধান করতে হবে ইউনিফর্ম, সাথে রাখতে হবে লাইসেন্স। মাঝপথে ঘুরানো যাবে না গাড়ি। যাত্রীদের ভাড়া উল্লেখ করে বিতরণ করতে হবে টিকেট। আর এসব নিয়মের সাথে ট্রাফিক বিভাগ সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে গাড়ির ডকুমেন্ট ও রুট পারমিটের ওপর। যার প্রমাণ মিলেছে, ট্রাফিক বিভাগের এ উদ্যোগ কার্যক্রমের প্রথম দিনেই। মামলা ও আটকের ভয়ে প্রথম দিনেই সড়কে নামেনি ১০ ও ৬ নং রুটের প্রায় শতাধিক বাস।

ট্রাফিক বিভাগ ও মনিটরিং টিমের দেয়া তথ্যমতে নগরীর ১০ ও ৬ নম্বর রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন’শ। রুট পারমিট নেয়নি এমন গাড়ির সংখ্যাও এ রুটে শতাধিক। তবে গতকাল এই দুই রুটে চলাচল করেছে ২৬০টি গণপরিবহণ। পতেঙ্গা সি-বিচে থাকা মনিটরিং টিমের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে পৌঁছে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে ৬ নম্বর রুটের ১২০টি এবং ১০ নং রুটের ১৪০ টি বাস। ডকুমেন্ট ও রুট পারমিট না থাকায় সড়কে বাস চালকরা গাড়ি নামায়নি বলে জানান ট্রাফিক কর্মকর্তারা।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রথম দিনে নগরীর ৪টি স্থানে মনিটরিং টিম ও ৩টি স্থানে চেক পোস্ট বসিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। সি-বিচ, টাইগার পাস, লালদিঘি ও কালুরঘাটে মনিটরিং টিম এবং সিমেন্ট ক্রসিং, ইপিজেড ও বদ্দারহাটে এসব চেক পোস্ট বসিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। যার মাধ্যমে ডকুমেন্ট এবং রুট পারমিট পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ১০ ও ৬ নম্বর রুটের গণপরিবহনগুলোকে শেষ গন্তব্যে যাওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। দুই রুটের শেষ ও শুরুতে গিয়ে ডকুমেন্ট এবং রুট পারমিট দেখিয়ে মনিটরিং টিমের স্বাক্ষর নিতে হয়েছে গণপরিবহণগুলোকে। যা যাচাই করেছে টাইগার পাস মোড়ে অবস্থিত অন্য মনিটরিং টিম। তবে ট্রাফিকের এই কঠোর পদক্ষেপের ভয়ে যেমন সড়কে নামেনি রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়িগুলো তেমনি যেগুলো নেমেছে সেগুলোও মানেনি আইন। কোন গাড়িতেই ছিল না যাত্রীদের জন্য টিকেট ব্যবস্থা, চালকদের ইউনিফর্ম। এছাড়া যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামাও করাতে দেখা গেছে গণপরিবহণগুলোকে। তবে এক গাড়িতেই শেষ গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

বোরহান উদ্দিন জুয়েল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় ইশুকার পদে আমি কাজ করি। বাসা কালুরঘাট হওয়ায় প্রতিদিন ইপিজেড পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে দুই বার গাড়ি পরিবর্তন করতে হত। তবে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকালে এক বাসে করেই ইপিজেড পর্যন্ত গিয়েছি। আবার এক বাসে করেই কালুরঘাট এসেছি। এর আগে, কালুরঘাট থেকে ছোট গাড়িগুলোতে করে বদ্দারহাট এসে ১০ নম্বর বাসে উঠতাম। এতে অনেক সময় ব্যয় হতো। ট্রাফিক বিভাগের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, ট্রাফিক বিভাগ এই পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে’।
ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আমির জাফর পূর্বকোণকে বলেন, ‘এর আগেও ট্রাফিক বিভাগ এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তবে কোন না কোন কারণে তা সফল হয়নি। এবারও শুরুতে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের কয়েকজন রাজি না থাকলেও একপর্যায়ে তারাও ট্রাফিক বিভাগের এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। আমরা এবারের উদ্যোগ কার্যকর করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। প্রথম দিনেই আটক ও মামলার ভয়ে প্রচুর গণপরিবহণ সড়কে নামেনি। আমরাও অনেক অনিয়ম পেয়েছি, তবে কাউকে আটক বা মামলা দেয়নি। আমরা তাদের আরো ৩ থেকে ৪ দিন সময় দিচ্ছি। কারণ, গণপরিবহণের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো আমাদের কাছে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। তবে এরপরেও যারা আইন অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ট্রাফিক বিভাগের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি’।

অন্যদিকে, ট্রাফিক বিভাগের এ উদ্যোগ পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরের জন্য আরো ৪ দিন সময় চেয়েছে গণপরিবহণের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট