চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাতাস এলেই বিদ্যুৎ নাই !

বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে বোয়ালখালীবাসী

সরকারের সব সাফল্য ম্লান হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে

নিজস্ব সংবাদদাতা, বোয়ালখালী

৭ মে, ২০১৯ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

এস এম মোসাদ্দেক খরণদ্বীপের পল্লী বিদ্যুতের ৩নং ফিডারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এলাকায় রয়েছে কয়েকটি মুরগির ফার্ম। ৩ মে শুক্রবার সারাদিন বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখা হলো ওই ফিডারে। সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য আসলেও ফণীর অজুহাতে আবারো বন্ধ হলো বিদ্যুৎ। এরপর রাতে অন্তত ১০ বার আসা যাওয়া করলেও সব মিলিয়ে ২ঘণ্টা পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে ফণীর মৃদু প্রভাব, তাই আর দেখা নেই বিদ্যুতের। ঘূর্ণিঝড়ে বোয়ালখালীতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জোর দিয়ে বিদ্যুৎ কর্তারা বলছেন ক্ষতি হয়েছে। যেন সব রাগ বিদ্যুতের ওপর ঝেড়ে ফণী বিদায় নিলো ! রাত ১১টার পর ওই ফিডারের কিছু অংশে বিদ্যুৎ দেয়া হলো। ততক্ষণে খামারের যা ক্ষতি তাই হলো। মারা গেলো অন্তত ৫০ হাজার টাকার লেয়ার মুরগি। এরকম ঘটনা বোয়ালখালী বিদ্যুৎ বিতরণের এখন নিত্যসঙ্গী। মানুষ যেন কাউকে কিছু বলার অধিকার রাখে না। সব মিলিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে তারা। বিদ্যুৎ বিভাগের এ অনিয়ম আর খামখেয়ালিপনার দায় নিতে হচ্ছে সরকারকে। সরকারের সব সাফল্য ম্লান হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোয়ালখালীতে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহক। এ বিশাল গ্রাহকের সন্তুষ্টির জন্য জোনাল অফিস ছাড়াও রয়েছে কাুননগোপাড়া, সৈয়দ নগর, বেঙ্গুরা তিনটি বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্র। যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে অন্তত ২০ জন লাইনম্যান। ৭টি ফিডারে বিভক্ত করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা করা হয়েছে উপজেলাকে। এর মধ্যে ১নং ফিডারে সারোয়াতলী-কানুনগোপাড়া, ২নং ফিডারে কড়লডেঙ্গা-বেঙ্গুরা এলাকা, ৩নং ফিডারে শ্রীপুর-খরণদ্বীপ, চরণদ্বীপ-কধুরখীল, ৪নং ফিডারে গোমদ-ী-পশ্চিম কধুরখীল, ৫নং ফিডার ভিআইপি উল্লেখ করে উপজেলা সদর, ৬নং ফিডারে শাকপুরা ও ৭নং ফিডারে পশ্চিম গোমদ-ী ও তৎসংলগ্ন শিল্প এলাকাকে নিয়ে ভাগ করা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এত আয়োজন থাকলেও ঠিকমতো বিদ্যুৎ পায়না জনগণ। একটু বাতাস হলেই বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ। যাওয়ার পর আসার আর খবর থাকে না। একাধিকবার বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগের পর, রিসেপশনিস্টের দয়া হয়। জানিয়ে দেয়, সঞ্চালন লাইনে ফল্ট। চেষ্টা করছি। সন্ধ্যা হলেই বলে আজ আর বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। গ্রাহকের অভিযোগ এড়াতে ডিজিএম ছাড়া বিদ্যুৎ অফিসের সকল মোবাইল বিজি। এছাড়া রয়েছে এক শ্রেণির স্বেচ্ছাচারী কর্মকর্তার মর্জি। গরম বেশি পড়লে, শুক্রবার জুমার নামাজে, ওয়াক্ত নামাজ চলাকালীন সময়ে, মাগরিবের আজানের সময়, গভীর রাতে, অফ পিক আওয়ারে হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া। যা দীর্ঘ গত ১ যুগেও পরিবর্তন হয়নি। এছাড়া ৩৩ কেভি লাইনে ফল্ট, গাছ কাটা নিয়ে দিনের পর দিন লাইন বন্ধ করার রেওয়াজ। স্থানীয়দের ক্ষোভ হচ্ছে, অধিকাংশ সময়ে গাছ কাটা হলে বাতাসে আবার গাছ কোত্থেকে আসে? গাছ ভেঙ্গে পড়ার অজুহাতে কেন দিনের পর বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়?
গ্রাহকরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর একগুয়েমি, জবাবদিহিতার অভাব, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সাধারণ গ্রাহকদের। তাদের দাবি, সবসময় এ অনিয়ম মানা হলেও, রমজানে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে না পারলে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি সরকারের ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জিএম, এজিএমের সাথে কথা হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি নাই, তারপরও কেন গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাবে না এ প্রশ্ন আমারও। রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহে যাতে বিঘœ না হয় তা কঠোরভাবে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি অবাক হই, ঘূর্ণিঝড়ে বোয়ালখালীতে কোনো ক্ষতি হলো না, অথচ বিদ্যুৎ চালু হলো কোথাও কোথাও দু’দিন পর!
জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বোয়ালখালী ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার মো. রফিকুল আজাদ বলেন, রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখার জন্য আমরা ইতোমধ্যে তিন অভিযোগ কেন্দ্রে ২টি করে ৬টি, জোনাল অফিসে ৮টি টিম তৈরি করেছি। ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে এরা তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে কাজ করবে। এছাড়া আমরা কর্মকর্তারাও কঠোর নজরদারি রাখব, যাতে গ্রাহকদের কোনো কষ্ট না হয়। বিদ্যুৎ ঘণ্টার পর ঘণ্টা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কানুনগোপাড়া সাব স্টেশনটি হলে এ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান হবে। এছাড়া জনবলের অভাবে কাজে ব্যাঘাত ঘটে বলেও তিনি দাবি করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট