চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কাউখালীর বটতলী সড়কে দু’মাস ধরে ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ

বাৎসরিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চিঠি

নিজস্ব সংবাদদাতা হ কাউখালী

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ের একটি আঞ্চলিক শসস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় ও অব্যাহত হুমকির কারণে গত দুইমাস যাবত কাউখালী-কাশখালী ভায়া বটতলী সড়কে সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ এবং সিএনজি ট্যাক্সিচালকরা। এতোদিন বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবার চলতে থাকলেও কোন সুরাহা না হওয়ায় গতকাল (শুক্রবার) থেকে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। কাউখালী উপজেলা সদর থেকে কাশখালী মসজিদ পর্যন্ত সামান্য এলাকায় সিএনজি ট্যাক্সি চলাচলের সীমারেখা নির্ধারণ করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এর ব্যতিক্রম ঘটলে সরাসরি গুলির হুমকিও দিয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চালক জানিয়েছেন। এ যেন ভিন্ন কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমানা বা নো মেনসল্যান্ড। অপরদিকে কাউখালী, কাশখালী এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদা চেয়ে চিঠি দিয়েছে সশস্ত্র এ গ্রুপটি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। যেকোন মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। তবে কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদ উল্লাহ এ ধরনের কোন সংবাদ পাননি বলে জানান। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাউখালী সদর থেকে কাশখালী হয়ে দুর্গম বটতলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। পূর্বে কাশখালী মসজিদ

মার্কেট এলাকা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও পরবর্তীতে রাস্তা সম্প্রসারিত হওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত সিএনজি ট্যাক্সিসহ অন্যান্য যান চলাচল শুরু করে। কিন্তু বছরের শুরু থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শ্রেণী ভেদে প্রতি যানবাহনের চাঁদা নির্ধারণ করে দেয়। এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি ট্যাক্সি চালকদের ডেকে নিয়ে বিগত দু’বছর ও চলতি বকেয়াসহ মাথাপিছু তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে বিশেষ টোকেন নিতে বলে। এতে চালকরা রাজি না হওয়ায় বটতলী সড়কে গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কাউখালী উপজেলা সদর থেকে কাশখালী মসজিদ মার্কেট বাঙালিপাড়া পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও উপজাতীয় যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে নিষেধ করে দেয়। সন্ত্রাসীদের ভয় উপেক্ষা করে কাশখালী পর্যন্ত কিছু উপজাতি সিএনজিতে উঠলেও আতংকে থাকতে হয় তাদের। ফলে সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। সাপ্তাহিক হাটের দিনে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব অসহায় মানুষগুলোকে।

কাশখালী-বটতলী সড়কের সিএনজি চালক উচিংমং মারমা (৪০) জানান, সারাদিন গাড়ি চালিয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। তাদের এহেন হটকারী সিদ্ধান্তে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। বটতলীর কৃষক চাইহ্লাঅং মারমা (৪৫) জানান, গাড়ি না থাকায় ভোর ৫টায় তরকারি নিয়ে পায়ে হেঁটে বাজারে এসেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে। হাটহাজারীর একটি স্কুলে পড়–য়া বটতলীর মনু মারমা (১২) জানান, অনেকদিন পর বাড়ি এসেছি বেড়াতে। পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে হবে শুনে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও যেতে হবে কিছু করার নেই। যাত্রী না থাকায় এ সড়কের শতাধিক সিএনজি ট্যাক্সি চালকদের দিনভর বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

চালক বেলাল জানান, সন্ধ্যা হলেই মালিকের গাড়ির ভাড়া পরিশোধ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অব্যাহত অভিযানে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক শসস্ত্র সন্ত্রাসীরা। গত কয়েক মাসে কাউখালীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নগদ টাকাসহ বেশ কয়জন চাঁদাবাজ আটক হয়।
সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাৎসরিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে গত ৫ আগস্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চিঠি প্রেরণ করে। যেসব ব্যবসায়ী টাকা পরিশোধ করবে না তাদের দোকান থেকে কোন পাহাড়িকে বাজার করতে বারণ করা হয়েছে। এতে নির্যাতনের ভয়ে আতংকিত সাধারণ পাহাড়িরা।

কাউখালী স্থায়ী ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন জানান, ব্যবসা বাণিজ্যে এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এসব এলাকা থেকে প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জানান তিনি।
গতকাল রাতে এ রির্পোট লেখার সময় কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদ উল্লাহ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে খবরাখবর নিয়ে কেউ কোন প্রকার অভিযোগ দায়ের করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট