চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

র‌্যাবের ১৪ ঘণ্টা অভিযান পথেরহাটে জব্দ নকল ওষুধ পুড়িয়ে ধ্বংস

নিজস্ব সংবাদদাতা হ রাউজান

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৩ পূর্বাহ্ণ

রাউজানের নোয়াপাড়ায় পথেরহাটে যৌনসহ সর্বরোগের ইন্ডিয়ান নকল হারবাল ওষুধ তৈরীর কারখানা ও শো রুমে প্রায় ১৪ ঘণ্টাব্যাপী র‌্যাবের ব্যাপক অভিযানে উদ্ধারকৃত প্রায় দুই কোটি টাকার ওষুধ, কাগজপত্র পুড়িয়ে ধংস করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দেশ হারবালের ম্যানেজারসহ ৪জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও একজনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭’র চাঁন্দগাও ক্যাম্প

কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে র‌্যাব দেশ হারবালের মূল হোতা, দেশ-বিদেশের অন্যতম প্রতারক আবদুল হাকিমকে গ্রেপ্তার করতে হন্য হয়ে খুঁজছে। চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭’র চাঁন্দগাও ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, আমার নেতৃত্বে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সোমবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমীর মার্কেটের শো রুম, মার্কেটের পেছনে ওষুধ তৈরির গোডাউন, নাছির ভবন, ব্রাহ্মণ হাট গোডাউন ও কল সেন্টারে টানা অভিযান করা হয়। এতে দেশ হারবাল, কলিকাতা হারবাল, টেলিওয়ান কল সেন্টার নামক ইন্ডিয়ান নকল ওষুধ বিক্রি, তৈরী কারখানা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ জব্দ করে তা রাতেই পুড়িয়ে ধংস করা হয়েছে। এসময় এসবের সঙ্গে জড়িত ম্যানেজার জসিম উদ্দিন প্রকাশ ইউছুপকে ৬ মাস জেল দেয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত ইমরান আলী, মো. হাসান, মো. নাঈমকে দুই, একমাস, পনের দিন করে কারাদ- দেয়া হয়। এছাড়া অপর এক ব্যক্তিকে ৩০ হাজার জরিমানা দেন র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট নেজাম উদ্দিন আহমেদ। র‌্যাব জানায়, এই নকল ওষুধ তৈরির কারখানার মালিককে খোঁজা হচ্ছে। তাকে ধরতে পারলেই এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে।

এদিকে র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি এলাকায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি আলোচনা করেন। কিভাবে সেখানে ওই প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র ফারাজ করিম চৌধুরীও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ওইসব ব্যবসা কিভাবে চলে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত বাগোয়ান ইউনিনের পাঁচখাইন গ্রামের আলী মদনের ছেলে লম্পট, দুস্কৃতিকারী, মাদকসেবী আবদুল হাকিম দেশ হারবাল, কলিকাতা হারবাল, টেলিওয়ান কল সেন্টার নাম ব্যবহার করে ওষুধের মোড়কে ইন্ডিয়ান ওষুধ বলে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি টিভি, ক্যাবল চ্যানেলে গুণাগুণ প্রচার করে আসছিল। মোবাইলে, অনলাইনেসহ বিভিন্নভাবে অর্ডার নিয়ে রোগীদের কাছে ওইসব ভেজাল ওষুধ চট্টগ্রাম নগরী ও হাটহাজারীর বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীদের ওষুধ পাঠায়। তার বিনিময়ে সে বিকাশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। গত এপ্রিল মাসে তার ওই ব্রাহ্মণহাটস্থ গোডাউনে র‌্যাব ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান করে অর্ধ কোটি টাকার নকল ওষুধ ধংস, ৪০ কর্মচারীকে জরিমানা ও সাড়ে ৫ লাখ টাকা টাকা আদায় করে ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু কয়েকমাস না যেতেই সে একই ধরণের কারখানা শুরু করেছে পথের হাটে।

উল্লেখ্য যে, প্রতারক আবদুল হাকিম কয়েক বছর আগে চলচ্চিত্র শিল্পে ভিডিও পাইরেসি করার অপরাধে র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছিল। কিন্তু এরপর সে আবারও নকল ওষুধ তৈরি, বিক্রি করে প্রতারণা করে আসছে। এ ব্যবসার সঙ্গে সে তার বড়-ছোট ভাই এবং আত্মীয় স্বজন ও এলাকার কিছু যুবককে ব্যবহার করছে। ওই ব্যবসা করে হাকিম এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার আছে বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেককিছু।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট