চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এল এ শাখার দুর্নীতি তদন্তে দুদক

ভুয়া মালিক সাজিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ সার্ভেয়ার কামরুলের

ইমাম হোসাইন রাজু

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২১ পূর্বাহ্ণ

অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা মূল মালিককে পরিশোধ না করে ভুয়া মালিক সাজিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ৯ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার পরও বাকি টাকা উত্তোলনের সময় ১৭ শতাংশ হারে ঘুষ না দেয়ায় সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে এলএ শাখার সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম অন্যজনকে মালিক দেখিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন।
যার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-(দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে গতকাল রবিবার এ বিষয়ে দুদকের একটি টিম সাতকানিয়া উপজেলায় দোহাজারি-ঘুংধুম রেললাইন প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা খলিলুর রহমানের মালিকানাধীন ৫০ শতক জমিও অধিগ্রহণ হয় রেললাইন প্রকল্পে। যার ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনি ১ কোটি ২২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। এরমধ্যে গত ১৩ ফেরুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা থেকে ক্ষতিপূরণের ৫৯ লাখ টাকার চেক পান। ওই টাকা পেতে এলএ অফিসের সার্ভেয়ার কামরুল ইসলামকে ঘুষ বাবদ দুটি চেকে দিতে হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। বাকি ৬৩ লাখ টাকার জন্য এলএ অফিসের সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৭ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দেয়াতে অন্যজনকে ভুয়া মালিক সাজিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি জানাজানির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ ফেরত পেতে জমির মূল মালিক খলিলুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে দুদক অনুসন্ধানে নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দু’টি চেকের মাধ্যমে খলিলুর রহমানের জনতা ব্যাংক এইচএসএস রোড শাখার হিসাব নম্বর ১১৮১৫/৬ থেকে ৩৬১৫০০২ নম্বর চেক দিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২১৭২৩৩৬ নম্বর চেকের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়। এলএ অফিসের সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম এ চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয় বলে দুদকে অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগকারী খলিলুর রহমান বলেন, ‘৫৯ লাখ টাকার চেকে ১৬ শতাংশ হারে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। বাকি ৬৩ লাখ টাকার চেক পেতে ১৭ শতাংশ হারে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম। ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সার্ভেয়ার কামরুল ইসলামসহ এলএ অফিসের সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যজনকে ভুয়া মালিক সাজিয়ে এই টাকা দিয়ে দেন। এ ব্যাপারে আমি দুদকে অভিযোগ দিয়েছিলাম। দুদকে এখন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছে। গতকাল রবিবার দুদকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন’।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী পূর্বকোণকে বলেন, ‘এলএ শাখার ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমাদের একটি টিম সরেজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু বিষয়টি এখনো অনুসন্ধানাধীন, তাই এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এর আগেও এলএ শাখার বিষয়ে এমন অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছিল। যার অনেকগুলো বিষয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়েও যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

দুদক সূত্র জানায়, শুধুমাত্র এই প্রকল্পের টাকাই নয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে বিভিন্ন স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও বহু মালিকের টাকা পুর্ণাঙ্গ পরিশোধ করা হয়নি। আবার অনেক ব্যক্তি শতাংশ হিসেবে ঘুষ দিয়ে এসব টাকা তুলে নিলেও ওই টাকা পাওয়ার জন্য নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। যার বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকেই অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট