চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাঁশখালী ও টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২

নিজস্ব সংবাদদাতা হ বাঁশখালী- টেকনাফ

৬ মে, ২০১৯ | ২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া কাদেরিয়া সড়কে পুঁইছড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আরবশাহ বাজারস্থ টানা ব্রিজ হাইদরী ঘোনা এলাকায় গত শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে র‌্যাব-৭ এর একটি টহল দল অবস্থান নেয়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জলদস্যুরা গুলি ছুঁড়তে থাকে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে বন্দুক যুদ্ধে সাগরের আতংক জলদস্যু বাইশ্যা বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড সোলতান বাহাদুর (৪৮) নামে এক জলদস্যু নিহত হয়েছে। নিহত ওই জলদস্যু ছনুয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তোতকখালী গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে। ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধে জলদস্যু বাহাদুর নিহত হওয়ার সংবাদে সহযোগীরা পালিয়ে যায়। র‌্যাব-৭ অভিযানকারী দল ঘটনাস্থল হতে ২টি দেশীয় এলজি ও ২০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে। এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জলদস্যু বাহাদুরের লাশের সুরুতহাল তৈরি করে গতকাল রবিবার সকালে বাঁশখালী থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।
এদিকে টেকনাফে বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে ১জন ইয়াবা পাচারকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিজিবির ২ জন সদস্য আহত এবং ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি দেশিয় তৈরি বন্দুক, ১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১টি রেজিস্টেশন বিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
বাঁশখালী সংবাদদাতা জানান, স্থানীয় ও র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর অভিযানকারী দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছনুয়া পুঁইছড়ি সীমান্তে জলদস্যুদের আস্তানার খবর পেয়ে গত শনিবার রাতে পুঁইছড়ি আরবশাহ ঘোনা টানা ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সাগরে জাল, মাছ ও ফিশিং ট্রলার ডাকাতি ও জেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কারী জলদস্যু বাহিনী র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব-৭ এর টহল দলও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সোলতান বাহাদুর নামে এক জলদস্যু নিহত হয়। এ সময় অন্যান্য জলদস্যুরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব সদস্যরা ২টি দেশীয় তৈরি এলজি ও ২০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। থানা পুলিশের এসআই আরিফুল ইসলাম গতকাল রবিবার সকালে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত জলদস্যুর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছেন। স্থানীয়রা জানান, বাঁশখালী উপজেলা ছনুয়া উপকূলীয় এলাকার চি‎িহ্নত জলদস্যু ও ইয়াবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোছাইন, নুরুল আলম, তালেব আলী, বার্মাইয়া আজম, কালু ডাকাত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। নিহতদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত বাইশ্যা ডাকাত, ইউনুছ, বাদশাসহ একাধিক জলদস্যু ও ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মগোপনে রয়েছে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, র‌্যাবের টহল দলের অভিযানে এক জলদস্যু নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে র‌্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে।
টেকানাফ সংবাদদাতা জানান, টেকনাফে বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে ১জন ইয়াবা পাচারকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিজিবির ২জন সদস্য আহত এবং ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি দেশিয় তৈরি বন্দুক, ১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১টি রেজিস্টেশন বিহীন মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়েছে। নিহত ইয়াবা পাচারকারী টেকনাফ পৌর এলাকা ২নং ওয়ার্ড পুরাতন পল্লানপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রশিদের পুত্র মো. আব্দুল্লাহ (২৪)। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর ৫ মে রবিবার বাদে মগরিব নামাজে জানাজার পর স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান জানান, ‘টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির অধীনস্থ খুরেরমুখ অস্থায়ী চেকপোস্টের দায়িত্বপূর্ণ মেরিন ড্রাইভ রোডে অবস্থিত খুরেরমুখ চেকপোস্টে কর্মরত টহল দল ৫ মে ভোররাতে ৩ জন ব্যক্তিকে দক্ষিণ দিকে হতে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে দেখে। চেকপোস্টে কর্তব্যরত টহল দল উক্ত ব্যক্তিদের থামার জন্য নির্দেশ দিলে মোটর সাইকেল না থামিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক টহল কমান্ডার কর্তৃক খুরেরমুখ চেকপোস্ট হতে আনুমানিক ২ কিলোমিটার উত্তর দিকে খোনকার পাড়া ৫নং ওয়ার্ড এলাকায় মেরিন ড্রাইভ রোডে স্থাপিত মাদক বিরোধী অস্থায়ী চেকপোস্টে কর্মরত টহল দলকে বিষয়টি সিগন্যাল সেটের মাধ্যমে জানানো হয়। মোটর সাইকেল আরোহী ব্যক্তিরা উক্ত চেকপোস্টের কাছাকাছি আসলে কর্তব্যরত টহল দল তাদের থামার জন্য সিগন্যাল দেয়। মোটর সাইকেল আরোহী ইয়াবা পাচারকারীরা বিজিবি চেকপোস্টের নিকটবর্তী হওয়া মাত্রই টহল দলের উপর এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এ সময় বিজিবি আত্নরক্ষার্থে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। এতে অস্ত্রধারী চোরাকারবারীরা গুলি করতে করতে মোটর সাইকেল নিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডের পূর্ব পাশে পড়ে যায় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৫-৭ মিনিট গুলি বিনিময় চলে। পরবর্তীতে গুলির শব্দ থামার পর টহল দলের সদস্যরা এলাকা তল্লাশি করে টেকনাফ পৌর এলাকা ২নং ওয়ার্ড পুরাতন পল্লানপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রশিদের পুত্র মো. আব্দুল্লাহকে (২৪) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মেরিন ড্রাইভ রোডের পাশে পড়ে থাকতে দেখতে পায় এবং ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি দেশিয় তৈরি বন্দুক, ১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১টি রেজিস্টেশন বিহীন মোটর সাইকেল জব্দ করে। উক্ত ঘটনায় বিজিবি’র টহল দলের ২ জন সদস্য সামান্য আহত হয়। পরবর্তীতে টেকনাফ মডেল থানায় খবর দেয়া হয় ও পুলিশের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উক্ত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির মানিব্যাগ হতে প্রাপ্ত কাগজপত্রে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। আহত বিজিবি সদস্য দুইজনকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট