চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভারতে রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধি

পেঁয়াজের বাজার ফের অস্থির, একদিনেই বেড়েছে ১৭ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৯ পূর্বাহ্ণ

ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫-১৭ টাকা পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫-৭০ টাকা দরে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ পূর্বকোণকে জানান, ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪০-৪৫ টাকা। সেই পেঁয়াজ গতকাল শনিবার বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে। তবে হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানিকারকেরা পেঁয়াজের দর নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন। দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজে সরবরাহ অনেক কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ থাকা পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন এলসি বা আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো বাজারে আসেনি। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। মধ্যম মানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে। সাউথ জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে তাও ৬০ টাকা দরে। বৃহস্পতিবার এই জাতের পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। পাটনা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকায়। তা হয়েছিল ৩৭-৩৮ টাকা দরে।

২নম্বর গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আলহাজ মো. এয়াকুব চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগের (বৃহস্পতিবার) কেনা ছিল বলে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে পাইকারি বাজার থেকে গতকাল যারা কিনেছেন, তারা ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।’
গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়তি ছিল। পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা থেকে কমে ৩৩-৩৫ টাকায় নেমে এসেছিল। গত মাসে ভারতে বন্যার কারণে কৃষিপণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে পেঁয়াজ চাষাবাদের উপর প্রভাব পড়ে। ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে ওঠে। ৩৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৩-৪৫ টাকায় পৌঁছে। পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠলে ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির নতুন বাজার খুঁজতে থাকে। মিয়ানমার থেকে সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানিও করা হয়। এরপর পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা থেকে কমে ৪০-৪২ টাকায় নেমে আসে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে ৫ হাজার বস্তায় দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের বাজার ভারতের উপর নির্ভরশীল। কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের মান ভালো। ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় পেঁয়াজের কদর বেশি।

সরকারি হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজ চাহিদা পূরণে ভারত থেকে ৭ থেকে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, বন্যার কারণে মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে পেঁয়াজের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে ভারত সরকার। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা গত শুক্রবার পেঁয়াজ রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে টনপ্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে রপ্তানিমূল্য ছিল ২৫০ থেকে ৩শ ডলার। রপ্তানিমূল্য বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্যের উপর বাধ্যবাধকতা ছিল না। এখন ভারত সরকার রপ্তানি বেঁধে দেয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে শনিবার থেকে নতুন দামে এলসি করার কথা থাকলেও আমদানিকারকেরা আগ থেকেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামে পেঁয়াজের আমদানিকারক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আমদানিকারকদের বেঁধে দেয়া দামেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। এখানকার ব্যবসায়ীদের কারসাজি করার কোন সুযোগ নেই।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানায়, ২০১৭ সালেও ভারত সরকার নিজেদের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।
ব্যবসায়ী নেতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২০১৭ সালে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর নতুন বাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল। দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। এরফলে দেশীয় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল। এবারও দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট