চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লালদিঘি মাঠে চিটাগাং ডেইরি ফার্ম এসো’র সমাবেশ

সম্ভাবনার ডেইরি শিল্পকে বাঁচান

১৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ মে, ২০১৯ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ডেইরি শিল্প বাংলাদেশের মানুষের জীবিকা ও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করছে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে এ শিল্প যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাঁচা-মরার লড়াই করছে খামারিরা। এমন পরিস্থিতি থাকলে সামনে ফার্ম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দেশীয় ডেইরি শিল্পরক্ষায় আমদানি করা গুঁড়ো দুধের উপর ২০১০ সালের মতো ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্কহার আরোপ করতে হবে।
গতকাল (রবিবার) সকালে নগরীর লালদিঘি মাঠে চিটাগাং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন আয়োজিত এক সমাবেশে খামারিরা একথা বলেন। এসোসিয়েশনের সভাপতি ও দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাঈম উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, নাহার ডেইরি ফার্মের জিএম ড. মো. আব্দুল হাই।
এতে ১৫ দফা দাবি পেশ করেন এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আরেফিন দোভাষ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশকে বলা হয় দুধে-ভাতের দেশ। সে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে স্বাধীনতার পর থেকে দেশে অসংখ্য ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠেছে। যা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক পথে এগিয়ে নিতে সাযাহ্য করেছে। গত পাঁচ বছরে দুধের উৎপাদন ৩ গুণ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেশে দিনদিন শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। তার সাথে গো-খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ ইত্যাদির খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তার ওপর দেশে ব্যাপক হারে গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের উৎপাদিত দুধের দাম এক টাকাও বাড়েনি। আজ খামারিরা বাঁচা-মরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশীয় এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে দুধের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ডেইরি ফার্মের বিদ্যুৎ বিল কৃষি রেটে নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া ডেইরি ফার্মে ৫% ঋণ সরবরাহ করার পাশাপাশি জেলা উপজেলায় পশু হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়ে ল্যাবরেটরি করতে হবে। এতে করে খামারিরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ডেইরি ফার্মের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আজ থেকে ২৬ বছর আগেও গরুসহ একত্রিত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের খামারিরা। একইভাবে আজও দাবি আদায়ের জন্য একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন খামারিরা। যে ডেইরি ফার্ম মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, কোরবানির পশুর অভাব মিটায়, সে শিল্পের সকল কিছুর খরচ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে দুধের দাম বাড়েনি। এক্ষেত্রে বড় সংকট তৈরি করেছে আমদানিকৃত নি¤œমানের গুঁড়ো দুধ। বর্তমানে আমাদের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের ফার্ম চালানোকে আরও অসম্ভব করে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে গো-খাদ্যের যৌক্তিক দাম ও প্রয়োজনে বিদেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে গো-খাদ্য আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খামারিরা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবে। সরকারের কাছে বলতে চাই, আমরা (গো-খামারিরা) বাঁচলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। তাই আমাদের এসব দাবি মেনে নিয়ে দেশের খামারিদের বাঁচার সুযোগ করে দিন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী ও নীতি-নির্ধারকদের বিষয়টি নজরে নিয়ে পশুপালনের সঙ্গে জড়িতদের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ র‌্যালিসহ ১৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে যান এবং অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
এসময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দকে বলেন, কিছুদিন আগে কোরবানির পশু নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়। সম্প্রতি ভারত থেকে পশু আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে আমাদের দেশে বিগত চার বছরে বহু ফার্ম গড়ে ওঠেছে। যারা কোরবানির সময় প্রয়োজনীয় পশু সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। তিনি আরও বলেন, কোরবানির পশুর মতো দুধও আমাদের দেশের বিদ্যমান শিল্পের মাধ্যমে বিকশিত হলে বিদেশ থেকে গুঁড়ো দুধ আমদানির প্রয়োজন হবে না। দেশিয় শিল্পকে বিকাশের জন্য সরকার নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।
সমাবেশে বিভিন্ন স্থান থেকে গরুসহ উপস্থিত হন খামারিরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট