চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া

গিয়াস-আলমের তৎপরতায় বিএনপির ৩ প্রার্থী টেনশনে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া

১ ডিসেম্বর, ২০১৮ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পরপর দু’বারের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদের সাথে ভোটের লড়াইয়ে নামতে ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি থেকে তিনজনকে মনোনয়নের চিঠি প্রদান করা হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর দলটির গুলশান কার্যালয় থেকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি কারান্তরীণ অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, অপরঅংশের আহবায়ক শওকত আলী নুর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ হাসনাতকে প্রার্থীরূপে চিঠি দেয়া হয়। তারা তিনজনই ২৯ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্থানীয় তিন বিএনপি নেতাকে মনোনয়নের চিঠি দেয়ায় এখনো অনিশ্চয়তার দোলাচলে থাকছে দলটির একক প্রার্থিতা। তিনজনের কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কার মনোনয়ন নিশ্চিত। এদিকে রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রাউজান উপজেলার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী এর পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে তিনি একবার রাঙ্গুনিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে নিজেদের দল এনডিপি’র বাঘ প্রতীকে নির্বাচন করে হারেন। এবার গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া থেকে মনোনয়ন জমা দেয়ায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া স্থানীয় তিন প্রার্থীর মাঝে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির পক্ষ থেকে রাঙ্গুনিয়া আসনটিতে তাদের প্রার্থী দিতে বিএনপিকে চাপে রেখেছেন কর্নেল অলি আহমদ। এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি মো. নুরুল আলম শেষ চেষ্ঠা করছেন ধানের শীষ ভাগিয়ে নিতে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নও জমা দিয়েছেন তিনি। বিএনপি ও এলডিপির কেন্দ্রিয় এই দুই নেতার তৎপরতায় টেনশন বাড়াচ্ছে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া তিন পার্থীর। মনোনয়ন পেয়েও শেষ পর্যন্ত হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে এমন ধারণায় তিনজনের কেউ মাঠে নামেনি এখনো। ভোটের প্রস্তুতিতে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ অনেক দূর এগুলেও বিএনপির তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েই তারা নীরব বসে আছেন। অবশ্য তাদের মধ্যে অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার জেলে রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কার কপালে ধানের শীষ প্রতীক জুটছে তার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে ধারণা করছেন দলীয় নেতারা।
বিএনপি সূত্র জানায় ত্রিধাবিভক্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির তিন নেতাকে দল থেকে প্রাথমিক ভাবে মনোনয়ন দেয়া হলেও গণেশ উল্টে দিতে তৎপর রয়েছেন রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির অন্যতম গোড়াপত্তনকারী বর্তমানে এলডিপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি মো. নুরুল আলম ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের সুপারিশেই শওকত আলী নুর ও আবু আহমেদ হাসনাতকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্র জানায়। অপর মনোনয়ন প্রাপ্ত কুতুব উদ্দিন বাহার মাঠে চৌধুরী পরিবারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি শওকত আলী নুর বলেন, কৌশলগত কারণে দল তিনজনকে মনোনয়নের চিঠি দিলেও তার প্রার্থীতা অনেকটা নিশ্চিত। কারাবন্দি কুতুব উদ্দিন বাহারের পক্ষে মনোনয়নের চিঠি গ্রহণকারী ছাত্রদল নেতা মোজাফ্ফর চৌধুরী বলেন, মাঠে শক্তিশালী প্রার্থী হলেন কুতুব ভাই। তাই তাকে ষড়যন্ত্র করে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তিনিই শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের প্রার্থী হবেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগের জয়জয়কার তখন প্রতিদ্বন্দি¦তাপূর্ণ ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ২০১৪ সালেও আমি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলাম। দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আঞ্চলিকতা ও জনপ্রিয়তার রিপোর্ট আছে।
স্থানীয়রা জানায়, রাউজানের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পরপর দু’বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি থেকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদের কাছে হেরে কারাবন্দি হবার পর থেকেই রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হতে শুরু হয়। এখন দলটির নেতারা কয়েক ভাগে বিভক্ত। দলটির এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি মো. নুরুল আলম। মাঠেও তিনি বেশ আলোচনায় রয়েছেন। আশির দশক থেকে রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি নিরলস কাজ করেছেন। রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিকে লড়েছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপির ক্ষমতার সময়ে তাঁর উদ্যোগে রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন ব্রিজসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কথা মানুষ ভুলেনি। রাঙ্গুনিয়া জুড়ে তার পরিচিতিও বিদ্যমান। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৯১ সালে এনডিপি থেকে রাঙ্গুনিয়ায় নির্বাচন করে হারলেও রাঙ্গুনিয়া বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর সাথে তার ঘনিষ্টতা ও যোগাযোগ আছে। বর্তমানে কারাগারে থাকা বিএনপির এই কেন্দ্রিয় নেতাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামাতে তৎপর রয়েছেন তার অনুসারিরা। তাদের দাবি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে লড়াইয়ে নামতে হলে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী না হলে এখন যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা দাঁড়াতেই পারবেন না। সব মিলিয়ে আদৌ কে বিএনপি জোটের প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া তিন প্রার্থী।
উপজেলা এলডিপির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের তালুকদার বলেন, বিএনপির কাছে রাঙ্গুনিয়া আসনটির জন্য জোর তদবির করছেন এলডিপি প্রধান কর্নেল অলি আহমেদ। চট্টগ্রামের মধ্যে এলডিপি ২টি আসন পেলেও চন্দনাইশের পর রাঙ্গুনিয়াকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জোটের সাথে আসন সমোঝোতার সময় এখনো শেষ হয়নি এবং সিদ্ধান্ত পাল্টে দেয়ার আভাস দিয়ে তিনি বলেন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নুরুল আলমকে মনোনয়ন জমা দানের জন্য বলা হয়েছে। সময়ই বলে দিবে প্রার্থীতা কার নিশ্চিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট