চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নিজ ঔরশজাত কন্যাকে ধর্ষণ : পিতা কারাগারে

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাতকানিয়া

২৯ জুন, ২০১৯ | ১০:৩৩ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ঔরশজাত সন্তান (ছদ্মনাম) রেহেনা আক্তার (২০) নামে এক যুবতীকে নীল ছবি (ব্লু ফ্লিম) দেখিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে তার পিতা। এ ঘটনায় ধর্ষক পিতা মো. মোস্তফা (৫৫) কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। ধর্ষক মোস্তফা ছদাহা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ছৈয়দাবাদ এলাকার মৃত আবদুচ ছোবহানের ছেলে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার বড় বোন বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে শুধুমাত্র পিতাকে আসামী করে সাতকানিয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।

অন্যদিকে, গতকালই (শনিবার) ধর্ষিতা কন্যাকে চমেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ড ছৈয়দাবাদ মোস্তফার বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণ মামলার বাদী ও ধর্ষিতার বড় বোন রুজিনা আক্তার বলেন, আমার আপন মা মারা যাওয়ার পর থেকে ধর্ষিতা ছোট বোন ও আমি স্বামী-সন্তানসহ পিতার সাথে একই পরিবারে বসবাস করতাম। মেঝ বোন স্বামী-সংসার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করে। বিগত ৬-৭মাস আগে থেকে ধর্ষিতা ছোট বোন ও আমার পিতার চাল-চলন নিয়ে সন্দেহ হলে ছোট বোনকে আমি শাসাই। এতে পিতা রাগ হয়ে আমাকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরে আমি ঘর ছেড়ে দিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে পিতার বাড়ির কাছাকাছি ছৈয়দাবাদ কাজীরখিল (আবদুল করিম মেম্বার বাড়ি) এলাকায় ভাড়া বাসায় চলে যাই। চলতি বছরের ২৬ জুন চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত মেঝ বোন মমতাজ বেগম আমাকে মোবাইল ফোনে জানায়, বিগত ৩ মাস যাবৎ ধর্ষিতা বোনের ঋতুস্রাব হচ্ছে না। সেজন্য পিতা ধর্ষিতা বোনকে নিয়ে ২১জুন মেঝ বোনের বাসায় যায়। সেখানে গাইনী চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি ধর্ষিতা বোন ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানান। পরে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হলে ছোট বোন সুস্থ হয় এবং ঋতুস্রাব নিয়মিত হয়।  এর মধ্যে মেঝ বোন ধর্ষিতা বোনকে কার সাথে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে জানতে চাইলে সে অস্বীকার করে। পরে এলাকার কিছু গণ্যমান্য লোক নিয়ে এ অপকর্ম হাতেনাতে ধরার জন্য আমিসহ (বাদী) প্রতিদিন পাহারা দিতে থাকি। ঘটনার দিন গত শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে আমার পিতা ঘরে প্রবেশ করে ছোট বোনকে জাপটে ধরে ধর্ষণ করার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় আগে থেকে পাহারা দেয়া লোকজন ঘরে প্রবেশ করে পিতা মোস্তফাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে খবর দিলে তিনি গ্রাম পুলিশ ইছহাককে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে পিতা ও বোন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। পরে সাতকানিয়া পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ধর্ষিতার বড় বোন রুজিনা আক্তার জানান, পিতা আমার বোনকে নীল ছবি দেখিয়ে ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ করতো। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে শুক্রবার ঘটনার দিন রাতেই পিতাকে একমাত্র আসামী করে সাতকানিয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করি।
মামলার বাদী  আরো জানান, আনুমানিক ১৩ বছর পূর্বে আমার মা মারা যান। আমরা ৩ বোন। আমার মা অসুস্থ হলে বেঁচে থাকা অবস্থায় ২০০১ সালে পিতা দ্বিতীয় বিয়ে করে। সে ঘরে ২ ভাই ও ২ বোন রয়েছে। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় মা মারা গেলে তিনি আর বিয়ে করেননি।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউ.পি সদস্য জাহেদুল ইসলাম রুবেল বলেন, তারা বিগত প্রায় ৪৫বছর আগে সিলেট থেকে এসে ছৈয়দাবাদে বসতি স্থাপন করে। এ রকম জঘন্য ঘটনাটি জানার পর স্থানীয় লোকজন ও মামলার বাদী বড় মেয়ে পাহারা বসিয়ে হাতে-নাতে বাবা-মেয়েকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। এ রকম ঘটনা যাতে আর হয়-সেজন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিউল কবীর বলেন,  ধর্ষিতা কন্যাকে মোবাইলে নীল ছবি (ব্লু ফ্লিম) দেখিয়ে তার পিতা চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে আসছিল। একসময় সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ২৬ জুন চট্টগ্রাম শহরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে মেয়ের গর্ভপাত করা হয়।

ওসি আরও জানান, ধর্ষণের অভিযোগে পিতাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ধর্ষিতাকে চমেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/ সুকান্ত- রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট