চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

’৭১ এর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ মুক্তিযুদ্ধে যেতে অনুপ্রেরণা যোগায়

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরী

’৭১ এর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ মুক্তিযুদ্ধে যেতে অনুপ্রেরণা যোগায়

খোরশেদ আলম শিমুল

৫ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৪:৩৬ অপরাহ্ণ

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসমাইল হোসেন মুহুরী কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। এ ভাষণ রেডিওতে শোনার পর দেশের দামাল ছেলেরা ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরীর বাড়ি ‘মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার’ বলে খ্যাত ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে। ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে দেশের আপামর জনগণ অজানা আতঙ্কে ভুগছিলেন। দেশে কখন কি অবস্থা হয় সে শংকা ছিল জনমনে। এরপর ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর নৃশংস বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে ঢাকায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে দেশের ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠে, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে।

খবর সারাদেশের মত হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ এলাকায় এসে পৌঁছালে ইসমাইল মুহুরীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠে। তার ইচ্ছার সাথে শফিউল আলম বাবু নামে এক বন্ধুও তাকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের কথা বললে পরনের লুঙ্গি, গায়ে ছিল গেঞ্জি আর তাঁর মা না দেখে মত শার্টটা বগলের নিচে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য ঘর থেকে বের হন। দুই বন্ধু ফরহাদবাদ ইউনিয়নের বংশাল এলাকার হালদা নদীর ঘাট পার হয়ে ফটিকছড়ি জাহানপুর এলাকার তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব বাঙালির ঘরে গিয়ে হাজির হন। সেখানে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর অনেক ছাত্র যুবক একত্রিত হতে থাকে, তারা সবাই ভারতে পাড়ি দেবেন। এর পূর্বে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে ধলই ফরহাদবাদের বেশ কিছু ছাত্র যুবক লাঠি ও মরিচের গুঁড়া নিয়ে শক্রর মোকাবেলা করার জন্য সংঘটিত হয়। কিন্তু তারা তখন ও বুঝতে পারেনি শক্তিশালি পাক বাহিনীর সামনে তাদের এ নগণ্য সংখ্যক লাঠি ও মরিচের গুঁড়া কিছইু নয়। এরপরেও দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের প্রস্তুতি ছিল।

মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরী ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ডিসেম্বর মাসে এসে দেশের বিভিন্ন স্থান পাকবাহিনীর শক্তি ক্ষয় হতে থাকে। পাকবাহিনী নিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের পরাজয়ের আশংকা। বিষয়টি জনমুখে ও রেডিওতে প্রচারিত হলে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরীর দল তার এলাকার বংশালের জমায়েত হন। এসময় পাকবাহিনী নাজিরহাট এলাকা থেকে সরে গিয়ে হাটহাজারী অদুদিয়া মাদ্রাসা ও চট্টগ্রাম সেনা নিবাসে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী নাজিরহাট এলাকা ছেড়ে চলে গেলে ৮ ডিসেম্বর মুক্তি পাগল জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা নাজিরহাট এলাকায় বিজয় উল্লাস শুরু করেন। বিষয়টি চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও অদুদিয়া মাদ্রাসায় পাক সেনা ক্যাম্পে পৌঁছালে তারা যাত্রীবাহী বাস নিয়ে এসে নাজিরহাট বর্তমান নতুন বাসস্টেশন এলাকায় উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ১১ জন শহীদ হন। নাজিরহাট এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনে বংশাল এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরীর দল অগ্রসর হতে থাকলে স্থানীয় জনতা তাদেরকে হালদার পাড়ে বাধা সৃষ্টি করে। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে পাকবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকেন। নাজিরহাট থেকে মুক্তিযোদ্ধা-জনতাকে হত্যা করে পাকবাহিনী চলে যায়। ১৩ ডিসেম্বর পুনরায় পাক সেনার দল নাজিরহাটের দিকে আসার পথে ইসমাইল মুহুরীর দল ও মুক্তিযোদ্ধারা কাটিরহাটে তাদেরকে বাধা সৃষ্টি করে। সেখান থেকে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে চট্টগ্রাম সেনা নিবাসের দিকে পিছু হটে যায়।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট