চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সহকারীদের বিকল্পের খোঁজে স্বাস্থ্যবিভাগ

সপ্তাহ পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর ­হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন

সহকারীদের বিকল্পের খোঁজে স্বাস্থ্যবিভাগ

ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে অংশ ­না নিলে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি

ইমাম হোসাইন রাজু

৫ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৪:২৬ অপরাহ্ণ

দফায় দফায় বৈঠকের পরও স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির বিষয়ে কোন সুরাহা মিলেনি। আন্দোলনের কারণে এমনিতেই টিকাদানসহ স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সেবাদানে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এরমধ্যেই আহুত এ কর্মবিরতি আঘাত হেনেছে হাম-রুবেলা (এমআর) ক্যাম্পেইনেও। ইতোমধ্যে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে হাম-রুবেলার টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এই কর্মসূচি আরও এক সপ্তাহ পিছিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। নতুন করে আগামী ১২ ডিসেম্বর এ ক্যাম্পেইন শুরুর কথা জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে।

এদিকে, বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচিতে অনড় থাকায় বেকায়দায় পড়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। টিকাদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য ক্যাম্পেইন কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, এ পর্যায়ে এসে সেই উপায় খুঁজছে স্বাস্থ্যবিভাগ। একইসঙ্গে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত আজ (৫ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল হাম-রুবেলা (এমআর) টিকাদান ক্যাম্পেইন। ৬ সপ্তাহব্যাপী এ ক্যাম্পেইন চলার কথা ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু গত ২৬ নভেম্বর থেকে নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে আসছে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা। যার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের এ টিকাদান কর্মসূচি।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে এ ক্যাম্পেইন শুরুর কথা জানানো হয়। ৬ সপ্তাহব্যাপী এ ক্যাম্পেইন আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলে, তা এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এ ক্যাম্পেইন। তবে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগ অনড়। যেভাবেই হোক তা বাস্তবায়ন করা হবে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশনা মেনে এ ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নের কাজ করবে বলেও জানান তিনি’।

বিকল্প পথ খুঁজছে স্বাস্থ্যবিভাগ : স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইপিআই তথা টিকাদান কর্মসূচি পালন করে থাকেন মাঠ পর্যায়ের একমাত্র এসব স্বাস্থ্য সহকারীরা। কিন্তু খুবই সুক্ষ্ম কাজ হওয়ায় স্বাস্থ্য সহকারী ছাড়া অন্য কর্মীদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন কঠিন। যার কারণে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে টিকাদান ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করতে একাধিক বৈঠকেও বসে স্বাস্থ্য দপ্তর। কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেল্থ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশন এখনও তাদের দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতি হওয়ায় বিকল্প পথ খুঁজছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে হাম-রুবেলার ক্যাম্পেইনে অংশ গ্রহণ না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। যদিও তাদের ওপর নির্ভর না করে নার্সদের দিয়ে বাস্তবায়ন করতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এরমধ্যেই চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাবরে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে। স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণকে প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। নির্দেশনা প্রদান করা সত্বেও যে সকল ব্যক্তি অংশ গ্রহণ করবেন না, তাদের তালিকা পাঠাতে বলা হয় চিঠিতে।

উল্লেখ্য চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার সাড়ে ২২ লাখ শিশুকে দেয়া হবে হাম-রুবেলার টিকা। এরমধ্যে ১৪ উপজেলার ৪ হাজার ৮৬১ টি কেন্দ্রে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮২৯ জন শিশুকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যাতে ৯ মাস থেকে ৫ বছরে নিচের বয়সী পর্যন্ত শিশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৭১ হাজার ১৩০ জন এবং ৫ বছর থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৯ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডের ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৫ জন।

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট