চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুল : কে বলবে খেলার মাঠ

নালার পানিতে সয়লাব পুরো মাঠ

হুমায়ুন কবির কিরণ

৪ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১১:২৭ অপরাহ্ণ

সংখ্যা আর আয়তনের দিক থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে খোলা জায়গা দিন দিন কমছে। নগরীর জিইসি ও নাসিরাবাদ এলাকায় বড় অংশজুড়ে খোলা জায়গা বলতে ষোলশহর দুই নম্বর গেটস্থ বিপ্লব উদ্যান ও নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটি বড় ভরসা। বিপ্লব উদ্যানে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে অসংখ্য মানুষকে ভিড় করতে দেখা যায়। ফুটবল বা ক্রিকেট কিংবা অন্য কোন মাঠের ইভেন্টের জন্য এলাকার কিশোর-তরুণদের অন্যতম আশ্রয় নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটি।

কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করছেন, গত কয়েকবছর থেকে মাঠটিতে খেলাধুলা কার্যত বন্ধ। বর্তমানে যে অবস্থা, আসলে মাঠটি খেলাধুলার উপযোগীই নেই এখন। গতকাল সরেজমিনে মাঠটিতে ঘুরে দেখা যায় লম্বা লম্বা ঘাসের চাদরে আচ্ছাদিত এক সময়ে প্রাণবন্ত মাঠটি। প্রায় পুরো মাঠে নালার পানি জমে হাঁটারও অনুপযোগী, দুই পাশে নেই সাইড ওয়াল, স্কুল কর্তৃপক্ষ টিনের বেড়া দিয়ে বহিরাগত প্রবেশ রোধ করার চেষ্টা করছে। মাঠটি দেখে যে কারও মনে হতে পারে, বুঝি কোন পরিত্যক্ত ভূমি। দীর্ঘদিন হলো ক্রীড়াচারণে স্থবির স্কুল মাঠটি।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রীড়া এখন শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমান সরকার যেমন ক্রীড়ানুরাগী তেমনি আমরাও চেষ্টা করছি লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ইনডোর ও আউটডোর ক্রীড়া আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে।

তিনি আরও জানান, নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার দাবা টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। অন্যান্য ইনডোর ইভেন্টের মতো শিক্ষার্থীদের হকি খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণই আমাদের আছে। এখানে বছরে বার্ষিক ক্রীড়া দু’বার হয়, একটি শীতকালীন ও অন্যটি গ্রীষ্মকালীন।

তিনি জানান, সাইড ওয়াল থেকে শুরু করে মাঠের উন্নয়নে সার্বিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত। উন্নয়ন কাজশেষে স্কুল সময়ের পর মাঠটি খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নালায় জমে থাকা পানি অপসারণের উদ্যোগ নিলে মাঠটিও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে এবং এরপর চাইলেই স্কুল মাঠে যে কোন ধরনের খেলাধুলা করা যাবে এখনই। তবে সেটা করেনাকালীন এই সময়ে অবশ্যই সরকারে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা অনুসরণ করে।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (বালক) সাবেক ছাত্র আব্দুল হান্নান আকবর বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আমরা যেমন মাঠটিতে খেলাধুলা করেছি তেমনি নিরবচ্ছিন্নভাবে স্কুল মাঠটিতে কয়েকবছর পূর্ব পর্যন্ত খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হতো। হঠাৎ করেই যেন সব আয়োজন থমকে গেছে। চলমান সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে নগরীর সংশ্লিষ্টদের কাছে জলাবদ্ধতা নিরসন করে ও মাঠটি সংস্কার করে স্কুল সময়ের পর ও স্কুল ছুটি থাকাকালীন সময়ে খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পাক, মাঠটি আবার ক্রীড়ামুখর হয়ে উঠুক-এমন আহ্বান নাসিরাবাদ স্পোর্টিং ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিজেকেএস কাউন্সিলর মো. তৌফিকুল ইসলাম বাবুরও।

তিনি বলেন, অতীতের সব ভুল ত্রুটিগুলো দূর করে কারো দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করার চাইতে সবাইকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান যুব সমাজকে তার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে খেলার মাঠের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই কোন কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে এই সব খেলার মাঠগুলো খেলার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে যেমন অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি সহযোগিতাও প্রয়োজন। নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য স্কুলের খেলার মাঠগুলো যাতে যত দ্রুত সংস্কার হয় এ ব্যাপারে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন তৌফিক বাবু।

 

পূর্বকোণ/এন.এইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট