চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নগরীতে ১৫ দিনে ৯ অজ্ঞাতনামা মরদেহ : কারা মারছে কেন মারছে

নাজিম মুহাম্মদ

৪ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১০:৪৭ অপরাহ্ণ

একের পর এক লাশ পড়ছে নগরীতে। কখনো সাগরের তীরে আবার কখনো খালের পানিতে, আবার কখনো ডোবায় ফেলা হচ্ছে লাশ। বাদ যাচ্ছে না নারী ও শিশু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজ্ঞাতানামা এসব মৃতদেহের পরিচয়ও শনাক্ত হচ্ছে না। নগর পুলিশ জানিয়েছে, বড় কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- নয়-ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।

গত ১৫ নভেম্বর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত নগরীর বিভিন্নস্থানে নয়টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে এক নারী ও দুটি নবজাতকের লাশ রয়েছে। কোনটিরই পরিচয় মেলেনি।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মোস্তাক আহমেদ জানান, বড় কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে এসব হত্যাকা- সংগঠিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়। পারিবারিক কলহ কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এসব ঘটনা ঘটে থাকে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের আতংকিত হবার কারণ নেই। আমাদের ধারণা অন্য কোথাও হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হচ্ছে নগরীর বিভিন্নস্থানে। তবে অজ্ঞাত লাশ পাবার বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

পুলিশের অন্য একজন কর্মকর্তার মতে একের পর এক লাশ ফেললেও রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় অপরাধীদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। তাছাড়া নগরীতে লাশ ফেলে পালিয়ে যাবার নিরাপদ রুটও রয়েছে অনেক বেশি।

গত ২ ডিসেম্বর দুপুরে ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়া জোড় ডেবা থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সের এ যুবকের পরনে সবুজ রংয়ের শার্ট ও লুঙ্গি ছিল। ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানান, অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

একইদিন বুধবার বেলা আড়াইটার হালিশহর বড়পুল এলাকার জনৈক মামুনের পুকুর থেকে রাকিব (১০) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে হালিশহর থানা পুলিশ। নিহত রাকিব খুলনা ফিরোজপুর সাতহরদি গ্রামের আবদুল হালিমের ছেলে। সে নগরীর ছোটপুল ব্রিকফিল্ড এলাকায় মায়ের সাথে থাকতো।

হালিশহর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মায়ের সাথে তার বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগে। রাকিব মায়ের সাথে থাকতো। প্রাথমিক অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে হত্যা করার পরে তাকে পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

গত ১ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় পাঁচলাইশ থানা এলাকার শাহ আমানত আবাসিকের পেছনে চাক্তাই খাল থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তরুণীর হাত পা ওড়না দিয়ে বাধা ছিল। তরুণীর পরনে নীল রংয়ের থ্রিপিস ছিল।

পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক আবদুল মোতালেব জানান, আনুমানিক (২৫) বছর বয়সী মেয়েটির মৃতদেহ অনেকটা বিকৃত হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সুরতহালের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

গত ২৯ নভেম্বর বন্দর থানার আনন্দবাজার সাগর পাড় থেকে এক যুবকের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী এ যুবকের পরনে লুঙ্গি ও শার্ট ছিল। পুলিশের ধারণা তাকে অন্য কোথাও হত্যা করে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই দিন নিমতলা এলাকায় খালে ফেলে দেওয়া কার্টন থেকে দুই নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ২৪ নভেম্বর সকাল দশটায় বন্দরের ৫ নম্বর জেটির ১৩ নম্বর শেডের কাছে নদী তীর থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। আনুমানিক ৪০-৪২ বছর বয়সী পুরুষের লাশটি অর্ধগলিত ছিল।

গত ১৯ নভেম্বর নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকা সিডিএ এক নম্বর সড়কের মুখে এক যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এ যুবকের পরনে মেরুন ও খয়েরি রঙের টি শার্ট ও একটি নেভি ব্লু প্যান্ট ছিল। পুলিশের ধারণা কোন যানবাহনের ধাক্কায় মারা গেছে ওই যুবক। তার কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। ১৫ নভেম্বর নগরীর টাইগারপাস সংলগ্ন বাটালি হিল সিটি কর্পোরেশন সড়কের পাহাড়ের নিচ থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। 

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ জোন) পরিত্রাণ তালুকদার জানান, আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তিটির গায়ে জিন্স প্যান্ট ও টি শার্ট ছিল। শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে মৃত্যুর আগে তিনি বমি করেছিলেন।

 

পূর্বকোণ/এন.এইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট