চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিএনপি: আলোচনায় বিবদমান গ্রুপ

মোহাম্মদ আলী

৩ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

নগর ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে নানা সমীকরণে সক্রিয় বিবদমান গ্রুপ। এ দুইটি কমিটিতে যথাক্রমে ডা. শাহাদাত হোসেন ও গোলাম আকবর খোন্দকার আহ্বায়ক হওয়া অনেকটা নিশ্চিত হলেও দলের একটি অংশ বিভিন্ন পদে আসতে তৎপর হয়ে ওঠেছে। ফলে এ নিয়ে চলছে নানা হিসেব-নিকেষ। বিএনপি সূত্র জানায়, গত ৯ অক্টোবর নেতাকর্মীদের সাথে লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠক করে নগর বিএনপির বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনে ঘোষণা দিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নতুন কমিটি এরইমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শীঘ্রই আসতে পারে ঘোষণা। অন্যদিকে, উত্তর জেলার নিষ্ক্রিয় আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেখানেও হচ্ছে আহ্বায়ক কমিটি।

কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হচ্ছেন তা অনেকটা নিশ্চিত। তবে দলের একটি গ্রুপ আহ্বায়কসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, উত্তর জেলা বিএনপিতে দলের আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী ও সদস্য সচিব মৃত কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে ঘিরে দুইটি গ্রুপ মাঠে আলাদাভাবে সক্রিয় রয়েছেন। কোন্দলের কারণে তারা দলের বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন পৃথকভাবে। কিন্তু গোলাম আকবর খোন্দকারকে নতুন কমিটির আহ্বায়ক করার সম্ভাবনার খবরে তৎপর হয়ে ওঠে বিবদমান গ্রুপ দুইটি। অভিযোগ রয়েছে, এতদিন দলের কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও গোলাম আকবর খোন্দকারের বিরুদ্ধে গ্রুপ দুইটি একত্রে তৎপরতা চালাচ্ছে।

একই অবস্থা মহানগর বিএনপিতেও। এ কমিটিতে আহ্বায়ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বর্তমান সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের। এরমধ্যে দলের আরেকটি গ্রুপ আহ্বায়কসহ অন্যান্য পদে আসতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে ‘সদস্য সচিব’ এর পদ থাকবে কিনা, থাকলে কার আসার সম্ভাবনা বেশি- এ নিয়ে চলছে জোর হিসেব-নিকেষ।

দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ‘সদস্য সচিব’ এর পদ থাকলে ওই পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ, বর্তমান নগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম, নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজিমুর রহমানের নামও ওঠে আসছে। অপরদিকে, সদস্য সচিব পদে এরশাদ উল্লাহ না আসলে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে তাঁর আসার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন দলের সূত্রটি।

সূত্র জানায়, দলের আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে না থাকলেও নতুন কমিটি ঘোষণার প্রাক্কালে দলের একাধিক গ্রুপ তৎপর হয়ে ওঠেছে।  এমনিতে নগর বিএনপিতে রয়েছে নানা মেরুকরণ। এ কারণে নতুন কমিটিতে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত এবং প্রতিপক্ষকে ঠেকানো এ দুই নীতি নিয়েই এগুচ্ছে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠা গ্রুপগুলো।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে ডা. শাহাদাত হোসেন সভাপতি, আবু সুফিয়ান সহসভাপতি ও আবুল হাসেম বক্কর সাধারণ সম্পাদক হন। এর এক বছর পর ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। দুই বছর মেয়াদের ওই কমিটির ইতোমধ্যে ৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে।

অপরদিকে, ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল আসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে সদস্য সচিব করে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৫ মে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বেও রয়েছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মারা যান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান। তার মৃত্যুর পর নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে ঝিমিয়ে পড়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা।

এদিকে, নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘মহানগর এবং উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটি একইদিন ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট