চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বী হাজারো নারী

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৩০ নভেম্বর, ২০২০ | ১:২৫ অপরাহ্ণ

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পাঁচ বছরে নগরীর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় প্রায় ৫শ জন নারী ও বিউটি পার্লারে ২ শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রশিক্ষিতদের ৪০ ভাগ নারী নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন।

একটা সময় নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করতে চাইতো না। কিন্তু এখন নারীরা আর ঘরে বসে থাকে না। তারাও নানামুখি প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তেমনি এখন নারীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে ২০১৩ সাল থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সংস্থাটি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তেমনি এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজের সুযোগ পেয়েছেন হ্যাপি দে, সুমা আক্তার, লিমা আক্তার। নিজেই সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন জান্নাতুল ফাহিমা নামের এক নারীসহ অনেকে।

নগরীর অক্সিজেন এলাকায় কেডিএস ফ্যাশন্সের সুয়িং অপারেটর হ্যাপি জানান, পাঁচ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম মহিলা অধিদপ্তর থেকে। সেলাইয়ের কাজ প্রথম সেখান থেকেই শিখেছি। তারপর ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্য্যরে সহায়তায় এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাই। এখন আমার প্রমোশন হয়েছে। প্রথমে খুব ছোট একটা পদের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছি। তখন মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতন পেলেও এখন বেতন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার টাকা। এখন আমি আমার পরিবারে অর্ধেক ভার বহন করি।

লিমা আক্তার নগরীর বাদুরতলা ‘ইফতি বিউটি পার্লার’ নামের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করছে। তিনি বলেন, ভালোবেসে বিয়ে করেছি ৭ বছর আগে। কিন্তু ভুল মানুষের হাত ধরায় বেশিদিন সংসার হয়নি আমার। সে প্রায় আমার গায়ে হাত তুলতো। একসময় আমাকে আর আমার সন্তানকে ফেলে আরেকটা বিয়েও করে। তখনি কাজের সন্ধানে এদিক-ওদিক খবর নিয়ে ২০১৪ সালের শেষের  দিকে আমি এ অধিদপ্তর থেকে ৩ মাসের একটা প্রশিক্ষণ নিই বিউটিফিকেশনের উপর। তখনই অধিদপ্তরের পরিচালক ছিলেন অঞ্জনা ম্যাডাম। তারই সুপারিশে মেহেদিভাগের একটা পার্লারে খুব অল্প বেতনে একটা চাকরি হয়। পরে আরো ছোট-বড় কিছু পার্লারে কাজ করেছি। আজ তিন বছর হলো ইফতিতে কাজ করছি। এখানে পুরো পার্লারটি আমার দায়িত্বে। আমি এখানে সিনিয়র বিউটিশিয়ান। এখন মা-বাবা ছোট ভাই ও সন্তানকে নিয়ে আমার সংসার। আমার মেয়ে ও ভাইকে পড়ালেখা করাচ্ছি।

জান্নাতুল ফাহিমা নামের এক নারী নিজেই হয়ে উঠেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা। তার নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ হয়েছে আরো চার নারীর।

ফাহিমা বলেন, আগে আমি চট্টগ্রামে থাকতাম। ২০১৫ সালে বিয়ের পরে শশুরবাড়ি কুমিল্লাতে চলে আসি। আমার স্বামী আর্থিকভাবে একটু অসচ্ছল। তাই সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতেই কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে আমি একটি সেলাইয়ের দোকান দিয়েছি। এখন আরো একটি দোকান নিয়েছি। আমার দুই দোকানে আরো চারজন মেয়ে কাজ করছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছি।

প্রথম থেকেই সংস্থাটি ৪শ সিট নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। যা এখনো চলমান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখানো পর্যন্ত যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে তাদের অনেকে কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানায় বর্তমান উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া।

অধিদপ্তরে বর্তমান উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া বলেন, আগে নারীরা ঘর থেকে  বের হত না। কিন্তু এখন নারীরা অনেক বেশি সচেতন। তারা নিজ দায়িত্বে এসব প্রশিক্ষণের জন্য আসেন। তাই এখন আমাদের সিটের তুলনায় প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যাই বেশি। প্রতিটি কোর্স তিন মাস মেয়াদের হয়ে থাকে। আমাদের প্রতি সিজনে ২ ব্যাচে ৫টা বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ১শ জন নারীকে। অনেকে সিটের অভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারছে না। তারা পরবর্তী মাসগুলোতে সুযোগ পায়। তাই আমাদের সিট আরো বৃদ্ধি করা দরকার।

তিনি আরো বলেন, প্রশিক্ষণশেষে অনেক নারী পোশাক কারখানায় চাকরির সুযোগ পায়। অনেকে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। অনেকে ঘরে বসে শো-পিস তৈরি করে অনলাইনে ব্যবসা করছে। নিজে সেলাই মেশিন নিয়ে ঘরে সেলাই কাজ করছে। এছাড়া নারীদের আমরা প্রতিদিন ১শ টাকা করে যাতায়াত খরচও দিই। জুলাই মাস থেকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়। তবে এবারে করোনার কারণে বছরের প্রথম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মিস হয়ে যায়। এখন দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এখানেও ১শ নারী ৫টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নারীদের সেলাই ও বিউটিফিকেশনের উপর বেশি আগ্রহ দেখা যায়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট