চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

চট্টগ্রামের কান্না ঢাকাকে শোনাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ নভেম্বর, ২০২০ | ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরামর্শক কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা বলেছেন, প্রশাসনিক, জনবল এবং অর্থ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। সংস্থাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে ভবিষ্যতে যারা দায়িত্বে আসবেন তারাও সফলভাবে চালাতে পারবেন। প্রতিটি দেশে একটি লবিস্ট গ্রুপ থাকে। ঢাকা শহরে চট্টগ্রামের অনেকেই আছেন যারা অবসরপ্রাপ্ত কিন্তু প্রভাবশালী। তাদেরকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের লবিস্ট হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা লবিস্ট হিসেবে কাজ করলে যেকোন সরকারি সংস্থা থেকে উন্নয়ন ফি বা সারচার্জ আদায় করা অনেক সহজ হবে। এককথায় চট্টগ্রামের মানুষের অন্তরের রক্তক্ষরণের কথা ঢাকাকে শোনাতে হবে। গতকাল রবিবার চসিকের পরামর্শক কমিটির দ্বিতীয় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, ঢাকায় অনেক খেলার মাঠ আছে। চট্টগ্রামে সেই তুলনায় নেই বললেই চলে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রামকে আমরা কোন জায়গায় দেখতে চাই তার একটা মাস্টারপ্ল্যান করা দরকার। কোন কোন সুবিধাগুলো নগরবাসী পাবে। তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। চসিককে আয়ের আরো নতুন খাত খুঁজতে পারে। কারণ টানেল এবং মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোনসহ যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে তা সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম হবে রিয়েল অর্থনৈতিক হাব। সুতরাং প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। বন্দরকে নিয়ে চিন্তা করলে, বন্দরের শহরকে নিয়েও চিন্তা করতে হবে। ট্রান্সশিপমেন্ট তো আছেই। ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যাচ্ছে সেখান থেকে বন্দর রাজস্ব পাচ্ছে। অথচ সড়ক বানাচ্ছে চসিক। এই ট্রানজিট থেকেও চসিক রাজস্ব পেতে পারে। কর্ণফুলী ও হালদা নদী নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিকে বুঝাতে হবে চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব, ব্র্যাকের সিনিয়র এডভাইজার মো. আবদুল করিম, চসিকের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. নুরুল আলম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য, (বিএন,এনডিসি) কমডোর (অবসরপ্রাপ্ত) জোবায়ের আহমদ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া, নগর পরিকল্পনাবিদ ও রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও আইইবি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন। সঞ্চালনা করেন চসিকের সচিব আবু সাহেদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ ও প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন
সরকারি, আধা সরকার বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কঠিন। এখানে নানা শৃঙ্খলা যেমন আছে, তেমনি বিশৃঙ্খলাও আছে। আমি চেষ্টা করছি এই শহরকে একটি মানবিক এবং পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলার। কর্পোরেশনে প্রথমে দেখলাম এক হাজার কোটি টাকা দেনা। এখন দেখছি প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন দিতে হয় প্রতিমাসে ১৮ কোটি টাকা। এই বেতন আরো বাড়তে পারে। কারণ সরকার অদক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক বেতন ১০০ টাকা বাড়িয়েছে। অথচ গৃহকরই আমাদের আয়ের প্রধান উৎস। এছাড়া কিছু দোকান ও মার্কেট আছে। সেখান থেকে সামান্য আয় আসে। সরকার বছরে ৩০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়। এডিবি এবং জাইকা কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব নিয়েই হচ্ছে চসিকের উন্নয়ন। কমিটির পরামর্শমতে শহরের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সংস্থা বন্দর, কাস্টমসহ বিভিন্ন সংস্থা যদি এগিয়ে আসে তাহলে সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত করারোপ না করে উন্নয়ন করতে পারি। বন্দরের সাথে কথা বলেছি। নতুন এসেসমেন্ট শুধুমাত্র সরকারি অফিসে কার্যকর করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সব সরকারি অফিসে এবিষয়ে চিঠি দিয়েছি। নতুন ধার্যকৃত কর অনুযায়ী বন্দরের কাছে পাওনা ১৬০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৩৯ কোটি টাকা তারা দিয়েছে। বাকি টাকা পাওনা আছে। এর বাইরেও নৌমন্ত্রী, সচিব, বন্দর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি। শহরের কয়েকটি সড়ক বন্দরের যানবাহন চলাচলের উপযোগি করে গড়ে দেয়া এবং বন্দরের আয় থেকে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসেবে দেয়ার জন্য। কাস্টমস থেকেও একইভাবে আয়ের এক শতাংশ সহযোগিতা ফি হিসেবে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। কথা উঠতে পারে সরকার তো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দিচ্ছে। তাহলে আবার আলাদা সার্ভিস চার্জ বা উন্নয়ন ফি কেন। এর জবাবে আমি বলব। এই ধরনের উন্নয়ন তো সারাদেশে হচ্ছে। এখানে তিনটি ইপিজেড আছে। মাত্র ১৩টি কারখানার ট্রেড লাইসেন্স আছে। তারা বলছে সরকারের সাথে চুক্তি আছে তাই তাদের লাইসেন্স লাগবে না। এবিষয়ে তাদের বলেছি। আপনারা গৃহকর না দিলেও অন্তত সার্ভিস চার্জ দিন। একেকটি কারখানায় বছরে ১০ হাজার টাকা ট্রেড লাইসেন্স ফি আসে। তাদের বলেছি তারা কত চার্জ দেবেন তা যেন তারাই ঠিক করে দেন। তারা এখনো কোন উত্তর দেননি। ভারী শিল্পগুলোরও একই অবস্থা। তারা ওভারলোডেড গাড়ি চালায়। রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং করে। এজন্য একটি সার্ভিস চার্জ দিতে বলেছি। চসিক অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে এটা বিস্তার লাভ করেছিল। এই খাতে আর্থিক সংকট আছে। এবিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি’র সাথে আলাপ করবো। আমাদের আরেকটি সমস্যা মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল। এটি মেরামত করতেই দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা লাগবে। বাথরুমগুলো ব্যবহার অযোগ্য। বিভিন্ন জনকে অনুরোধ করেছি এই হাসপাতালের সংস্কারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। আমাদের মেডিকেল টেকনোলজি কলেজ আছে। এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যা লুজিং অবস্থায় চলছে। বর্ষাকালে শহরের রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। এনিয়ে সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করে। পোর্ট কানেকটিং রোডের একটি অংশ নভেম্বরের মধ্যে একটি অংশ খুলে দেয়ার কথা দিয়েছিল ঠিকাদার। কিন্তু পারেনি। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে পারবে। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। স্ট্র্যান্ড রোড তিন লেয়ারের মধ্যে এক লেয়ারের কাজ শেষ। এটিরও ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকলিয়ায় একটি স্টেডিয়াম করতে চেয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেখানে অবকাঠামো করে দিতে পারছি না। আকরাম খানকে অনুরোধ করবো সেটি দেখে এসে সেখানে একটি ক্রিকেট একাডেমি চালু করার জন্য। চট্টগ্রামে আরো কয়েকটি খেলার মাঠ করতে চাই। আমাদের সন্তানেরা যদি খেলতে না পারে তাহলে তারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতে পরিণত হবে। আকরাম খান আউটার স্টেডিয়ামে খেলে বড় হয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যারা মাঠ পরিচালনা করছে তারা চারদিকে চা এর দোকান বসিয়েছে। দোকানের বর্জ্য মাঠে পড়ে। নিচে একটি টয়লেট দিয়েছে। তাতে মাঠের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। একাংশে তথাকথিত সুইমিংপুল করে মাঠ দখল করেছে। এই সুইমিংপুল এখন আর চলে না। এই মাঠকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিতে তিনি আকরাম খানের প্রতি আহবান জানান। সংবাদপত্রের প্রশংসা করে বলেন, চট্টগ্রামের মূলধারার পত্রিকাগুলো প্রতিনিয়ত যেসব তথ্য তুলে ধরছে তাতে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে। আরো সহযোগিতা চাই তাদের কাছে। যোগাযোগ সমস্যা নিরসনে ১৫ নম্বর জেটি থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ওয়াটার বাস চালু করার জন্য নৌমন্ত্রীকে বলেছি। বর্তমানে একটা চালু আছে। ভাড়া ৪০০ টাকা। এটা ১০০ টাকার মধ্যে হলে মানুষ যাতায়াত করবে। একটি নতুন বাইপাস চালু করার চেষ্টা করছি ওয়াসার সাথে সিডিএ’র একটা বিরোধ আছে। আশা করি তা নিরসন হবে। ফতেয়াবাদ ঠা-াছড়িতে বড় জায়গা আছে। একটি শিল্প গ্রুপ সেখানে কাজ করতে দিচ্ছে না। কেউ যদি মনে করে আমি রাষ্ট্রের চেয়ে বড়। তাহলে দুঃখজনক। তবে কলেজিয়েট স্কুল, নাসিরাবাদ স্কুল, মহসিন কলেজ, বাকলিয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠ আছে। তাদের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করব তাদের মাঠ কিভাবে ব্যবহার করা যায়। নতুন কিছু বিদ্যালয় হয়েছে ফার্মের খাঁচার মত। কোন মাঠ নেই। স্কুলে শিক্ষার্থীদের বাসে আনা-নেয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়েও তাদের সাথে আলোচনা করব। আলোচনায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। আইনে আছে অন্য সংস্থার প্রধান সভায় আসবেন। কিন্তু না আসলে কি হবে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। তাই সভায় এমন লোককে পাঠানো হয়, যার সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা থাকে না।
শহরের প্রবেশমুখগুলোতে কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে। এসব টার্মিনালে ট্রেইলার, লরি দাঁড়িয়ে থাকে। তাই শহর থেকে বের হতে কয়েকঘণ্টা লেগে যায়। যদিও আইনে আছে চট্টগ্রাম শহরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কনটেইনার ইয়ার্ড হবে না, কিন্তু বন্দরের কোলের মধ্যেই কনটেইনার ইয়ার্ড বানিয়ে রাখা হয়েছে। বন্দর থেকে শহরের পশ্চিমে যে রেললাইন আছে তা যদি আরও আধুনিক করা হয় তাহলে অনেকটা চাপ কমবে।

মো. আবদুল করিম
সুজন সাহেবের উদ্দেশ্যে হলো প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশ^মানের বসবাসযোগ্য একটি শহর করা। তবে আমাদের সমস্যা অনেক। সিটি করপোরেশনের বিশ^মানের শহর করতে হলে আমাদের সুনিদিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত এবং সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে। কথায় বলে, সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা। আমাদেরও তাই। এখানে প্রধান সমস্যা অর্থের, উন্নয়ন কাজ পরে। তবে সুজন সাহেব চেষ্টা করছেন। তিনি আমাদের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন, যেসব অফিসারের উনার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা, তাঁদের কাছে উনি যাচ্ছেন শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনেরের স্বার্থে। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে তিনি প্রথমদিকে বলছিলেন সিটি করপোরেশনেও সমস্যা আছে, কর্মচারীদের মধ্যে স্বচ্ছতার সমস্যা আছে। তাই আমি আপনাকে বলতে চাই সরকার থেকে যারা সিটি করপোরেশনে ডেপুটেশনে আছে তাদের জন্য সরকারি চাকরি শৃঙ্খলাবিধি প্রযোজ্য, আর সিটি করপোরেশনে যারা কর্মরত আছেন তাদের জন্য সিটি করপোরেশনের সার্ভিস রুল প্রযোজ্য। দয়া করে এসব আইন প্রয়োগ করুন। এগুলো আপনার হাতকে শক্ত করবে।
শহরের উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি প্লান করতে হবে। আইন অনুযায়ী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সিটি করপোরেশেনের দায়িত্ব। আর উচ্চ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য যথাযথ যুক্তি দেখিয়ে সরকারের কাছে অর্থ চাইতে পারেন।
আমি বাণিজ্য সচিব থাকার সময় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার করার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বারকে অনুরোধ করেছিলাম। বহুদিন পর সেটি বাস্তবায়ন হয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলও হয়েছে। তবে উন্নতমানের হাসপাতাল হয়নি। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হয়ে সরকারের কাছে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য অনুরোধ করতে পারে। কারণ এটি বাণিজ্যিক রাজধানী সংক্রান্ত ঘোষণার বিষয়ে সরকারের যে সিদ্ধান্ত আছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা দেখেছি কোভিডকালে চট্টগ্রামে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই নেই। এর জন্য সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হতে পারে। সড়ক উন্নয়নের জন্য আপনি যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয়। তবে বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেডÑএদের কাছ থেকে আপনি ট্যাক্স আদায়ের যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেগুলো যাতে আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। কারণ আপনার যে আইন আছে সেখানে যদি একটি সাধারণ ধারা যোগ করতে পারেন; যেখানে উল্লেখ থাকবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঢাকা সিটি করপোরেশন বা অন্যান্য করপোরেশন থেকে ভিন্ন এ কারণে যে এখানে বন্দর, কাস্টমস সুবিধা আছে এবং এখানে সিটি করপোররেশনের যে সার্ভিসগুলো আছে যা অন্য সিটি করপোরেশনে নেই। এই ধারা করা গেলে প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর আপনি ট্যাক্স আদায় করতে পারবেন। তাহলে আপনার জন্য সুবিধাজনক হয়। তবে এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার, দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও আইনের মধ্যে সংশোধন করে ক্যাবিনেটে উঠাতে হবে। এরপর সংসদে যাবে। কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য আপনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে যদি অন্তত অন্তবর্তীকালীন আদেশ আানতে পারেন তাহলে আপনার জন্য অনেক উপকার হবে।
আমরা আকরাম খান ও তামিম ইকবালকে প্রডিউস করেছি। কিন্তু এখন আমাদের খেলার মাঠ নেই। খেলার মাঠ খুবই দরকার। তবে একাডেমিটা দরকার বেশি। চট্টগ্রামের উত্তরদিকে যদি একাডেমি করেন তাহলে আমি খুবই খুশি হবো। এই একাডেমি হলেই খেলোয়াড় তৈরি হয়।
বাংলাদেশের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর যাতে অন্যগুলোর চেয়ে সেরা হয়, সেটি নিশ্চিত করা দরকার। ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য আপনি সংগ্রাম করছেন। তবে ইজিবাইক বন্ধ করাটা দরকার। চট্টগ্রামে সুপেয় পানির সমস্যাও আছে, কিন্তু তা অনেকে অনুভব করতে চান না। স্কুল পরিবহন বিশেষ করে প্রাইভেট ও ইংরেজিমাধ্যমের স্কুলে একটি বাচ্চার জন্য একটা প্রাইভেট কার আসে, যার ফলে যানজট তৈরি হয়। তাই স্কুল পরিবহনের ব্যবস্থা যদি করতে পারি তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কার পার্কিং নিশ্চিতে পার্কিং করতে পারেন এবং সেখানে গাড়ি রাখতে বাধ্য করতে পারেন। তাহলে একটি ভালো আয়ও হবে। ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের মালামাল এখন চট্টগ্রাম শহর দিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে সামান্য ফি-ও যদি আপনি নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে ভালো হয়। শিক্ষক বেশি ছাত্র কম এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক কারণে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে সে বিষয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। এগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করে আপনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। যদিও আপনার সময় বেশি নেই। তবে এই পদক্ষেপ যদি আপনি শুরু করে দিতে পারেন তাহলে অনেক ভালো পদক্ষেপ হবে।

আকরাম খান
দুই দশক আগে যখন বাংলাদেশ জাতীয় দল গঠন করা হত, তখন চট্টগ্রাম থেকে ৭/৮ জন সুযোগ পেত। এখন তামিম ছাড়া কেউ নেই। তখন প্রচুর খেলার সুযোগ ছিল। বাচ্চারা যদি মাঠে খেলতে না পারে তারা স্বাভাবিকভাবেই নানা অনিয়ম এবং অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। আজকের শিশুরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত। চট্টগ্রাম থেকে যারা খেলেছে সবাই এক্সট্রাঅর্ডিনারি। বাংলাদেশ চট্টগ্রাম থেকে মেধাবী খেলোয়াড় পাচ্ছে না। এটা অনেক বেশি মিস করছি। মাঠ তৈরি বা সংস্কার কাজ এককভাবে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। আপনাদের যেকোন উদ্যোগের পাশে আমাকে পাবেন। অনেকেই স্পোর্টস একাডেমি করার কথা বলছেন। একাডেমি করার আগে আমাদের প্রথম কাজ হল সন্তানদের মাঠে খেলার সুযোগ করে দেয়া। মাঠে ভাল খেললে তাদেরকে একাডেমির জন্য তুলে নিতে পারে। ঢাকায় প্রতিটি এলাকায় মাঠ আছে। কিন্তু চট্টগ্রামে কোথাও মাঠ নেই।

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী
চসিকের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। বুঝতে হবে চসিকের মূল সেবাগুলো জনগণ পাচ্ছে কিনা। সিটি কর্পোরেশনের তিন হাজার ১৮০টি পদের জনবল কাঠামো রয়েছে। ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামোর বিপরীতে ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুমোদন হয়। এখন জনবল নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই শহরের জনগণ ৬০ লাখের অধিক। কিন্তু চসিকের জনবল সেই হারে বাড়েনি। আজ সুজন সাহেব ক্যারাভান কর্মসুচির মাধ্যমে সড়ক পরিস্কার করে যাচ্ছেন। কিন্তু জনবল থাকলে তা রক্ষা করা যেত। না থাকায় তা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। সুজন ভাইয়ের হাতকে শক্ত করতে হবে জনবল এবং অর্থ দিয়ে। বছরখানেক আগে শুনেছিলাম ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ছুটি দেয়ার ক্ষমতাও মেয়রের নেই। তাহলে এই শহর তিনি কিভাবে চালাবেন। তিনি রাস্তায় ঘুরে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করছেন। নালা, আবর্জনা, সড়ক মেরামত, আলোকায়ন ইত্যাদি সেবা শতভাগ দেয়ার পরই কেবল আমরা অন্যদিকে তাকাব। যদি চসিক স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় তাহলে ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও সফলভাবে এই প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন। প্রতিটি দেশে একটি লবিস্ট গ্রুপ থাকে। ঢাকা শহরে চট্টগ্রামের অনেকেই আছেন যারা অবসরপ্রাপ্ত। যারা ক্ষমতায় আছেন। চসিক তাদেরকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। তারা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অফিসে তদবির করবেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন অফিসে অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লবিস্ট হিসেবে মোটা অংকের বেতনে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকায় আমাদের আবদুল করিম, মুসলিম চৌধুরী, হোসেন জিল্লুর রহমানসহ অনেক বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আছেন। লবিস্টের কাজটি তাদেরকে নিয়েই করা যেতে পারে। তারা মন্ত্রণালয়ে কথা বললে বন্দর কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সারচার্জ পাওয়া অনেক সহজ হবে। চট্টগ্রামে সবকিছুই হবে যদি অর্থ আসে। এমন কিছু করে যেতে হবে, যাতে পরবর্তীতে যিনি আসবেন তিনি তা কন্টিনিউ করতে পারেন। এখানে অর্থ নেই, জনবল নেই। অস্থায়ীভাবে লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। একখাতের টাকা অন্যখাতে খরচ করে চালিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে পারে না। সাবেক মূখ্য সচিব আবদুল করিমকে সামনে রেখে ঢাকায় লবিং শুরু করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিশে^র সব কোস্টাল বেল্টের শহর উন্নত। অথচ চট্টগ্রাম থেকে সব বহুজাতিক কোম্পানি চলে গেছে। এখন কোন শিল্পপতির সন্তান শিল্পকারখানা গড়ার কথা ভাবছে না। রেস্টুরেন্ট দিচ্ছে। সবকিছুকে সংগঠিত করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। একসময় ঢাকায় গেলে বলত, চট্টগ্রামের শেঠ আসছে। এখন বলে না। কারণ সবাই ঢাকায় চলে গেছে।

এম এ সালাম
পৃথিবীর প্রতিটি দেশে অকট্রয় বলে একটি ট্যাক্স আছে। পাকিস্তান আমলেও ছিল। কাস্টমসের প্রতিটি বিল অব এন্ট্রির উপর যদি একটি ট্যাক্স নেয়া যায়। তাহলে সিটি কর্পোরেশন অনেক টাকা পাবে। বাংলাদেশে প্রথম ইপিজেড হয় চট্টগ্রামে। এতবড় প্রতিষ্ঠান। চসিককে কোন টাকা দেবে না তা কিভাবে হয়। টাকা না পেলে সিটি কর্পোরেশন কিভাবে চলবে। স্টেডিয়াম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বাকলিয়া না করে হাটহাজারীর পরে চলে যাই না কেন ? ফতেয়াবাদের পরে সিটি কর্পোরেশনের বড় জায়গা আছে। ওই জায়গায়ও স্টেডিয়াম করা যায়। মেমন হাসপাতালের অতীত সুনামের কথা তুলে ধরে বলেন, ওইসময়ে চট্টগ্রামের সেরা হাসপাতাল ছিল। এখন এর এই অবস্থা কেন। এটা চিন্তা করা উচিত। ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও দান করার জন্য তৈরি। যদি যথাযথভাবে বলা হয়। চসিকের আরো হাসপাতাল আছে। কিছুটা সার্ভিস চার্জ নিয়ে এগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায়, তাহলে আমরা গর্ব করে বলতে পারবো। রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে বছরশেষে কিছু টাকা বাঁচে। মানুষ সেবা নিয়েও সন্তুষ্ট। অর্থাভাবে সিটি কর্পোরেশনের এই সংস্থা যেন বন্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চসিক আয়ের আরো নতুন খাত খুঁজতে পারে। আমরা যদি একটি ব্রিজ পার হতে ৫০০ টাকা দিতে পারি, তাহলে একটি ২০ টনের গাড়ি চসিকের সড়ক দিয়ে নিয়ে যেতে ২০০ টাকা দিতে পারবো না কেন। টানেল এবং মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোন হলে গেলে চট্টগ্রাম হবে রিয়েল হাব। সুতরাং প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।

শ্যামল দত্ত
চট্টগ্রামে একটি ক্রিকেট একাডেমি হওয়া দরকার। এটা শহরের বাইরে বড় একটি জায়গা নিয়ে করা উচিত। বাকলিয়ার মাঠে কি করা যায় তা আকরাম খান একটা প্রস্তাব দিতে পারেন। পৃথিবীর প্রতিটি শহরে একটি সিটি ট্যাক্স আছে। বাংলাদেশে যদিও এটা প্রচলন নেই। ইপিজেড, বন্দর, কাস্টম থেকে সিটি ট্যাক্স নেয়া উচিত। কারণ তারা এই শহরের সুযোগ ভোগ করছে। বন্দর থেকে যে ভারী যানবাহনগুলো বের হবে তার লোড নেয়ার উপযোগী করে করা না হলে পিসি রোডের অবস্থা এক বছর পর আবারো খারাপ হয়ে যাবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিভাগ চালায় চসিক। এর জন্য আলাদা বাজেট যদি না থাকে তাহলে কেমনে চালাবে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা হাসপাতাল সংস্কারে এগিয়ে আসতে পারে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। আশা করি সিটি কর্পোরেশন প্রস্তুতি নেবে। প্রশাসক সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার সুফল পেতে হলে, চট্টগ্রামকে কোন জায়গায় আমরা দেখতে চাই তার একটা মাস্টারপ্ল্যান করা দরকার। কোন কোন সুবিধাগুলো নগরবাসী পাবে। তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। বিমান বন্দর থেকে শহরে প্রবেশ করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যে সংস্থা এই সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে তাদেরকে তা ম্যানেজমেন্ট করতে বাধ্য করা উচিত।

প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ
বিপিসি চট্টগ্রাম শহরকে ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকা আয় করছে। সেখান থেকে কিছু ট্যাক্স নিতে পারলে কয়েকশ কোটি টাকা চসিক পাবে। বিদেশে কার পার্কিংয়ের ট্যাক্স নেয় সিটি কর্পোরেশন। চসিকও নিতে পারে। দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বছরে অনেক বাজেট পায়। সেখান থেকে তারা কিছু চসিককে দিতে পারে। শিক্ষাখাত থেকেও বরাদ্দ পেতে পারে। মাঠে যাওয়ার জন্য আমাদের সন্তানদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। এখন তারা সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে আছে। একসময় আমরা বিকালে মাঠে চলে যেতাম। এখনকার ছেলেরা যায় না।

কমডোর (অব.) জোবায়ের আহমদ
পরামর্শক কমিটিতে যারা আছেন, তারা লবিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। আবদুল করিম সাহেব ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। আমাদের সাধ্যমত আমরা কাজ করবো। বন্দরকে নিয়ে যখন চিন্তা করবেন, তখন বন্দরের শহরকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বন্দরকে নিয়ে যখন চিন্তা করবেন, তখন বন্দর সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ মালামাল পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়েও চিন্তা করতে হবে। তারা সব মালামাল শহরের সড়ক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে কিভাবে রাজস্ব আদায় করা যায় তা চিন্তা করতে হবে। কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে। এর নীচে পলি এবং পলিথিন জমেছে। যে কারণে শহরে পানি জমছে। ড্রেজিংটা যথাযথভাবে করা গেলে শহরের উন্নয়ন হবে। একটি প্রতিষ্ঠানকে ড্রেজিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা পারেনি। ট্রান্সশিপমেন্ট তো আছেই। ট্রানজিট, যেটা ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যাচ্ছে সেখান থেকে বন্দর রাজস্ব পাচ্ছে। অথচ সড়ক বানাচ্ছে চসিক। সুতরাং চসিকও সেখান থেকে রাজস্ব পেতে পারে। সবাইকে মিলে লবিস্ট তৈরি করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা ছোট ছোট কমিটি করে দিয়ে চট্টগ্রামের জন্য কাজ করতে পারি। আগের মেয়ররা হয়তো এভাবে চিন্তা করেননি।

প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া
আমাদের টেকনোলজিক্যাল শিক্ষার বেশি প্রয়োজন। চসিকের স্কুল, কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ আছে। এই খাতে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বেশিরভাগ স্কুল হঠাৎ করে কলেজ হয়ে গেছে কোন ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া। যেখানে বসার জায়গা নেই। পরিবেশ নেই। আর্থিক, জায়গা সংকুলান না হওয়াসহ নানা সমস্যা আছে। একটা টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা যায়। যার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করা যায় কিনা তার সিদ্ধান্ত নিতে পারে চসিক। তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চাই চট্টগ্রাম হোক সিটি অব এডুকেশন, সিটি অব হেলথ।

স্থপতি আশিক ইমরান
চট্টগ্রাম একটি ইউনিক শহর। এই মুহুর্তে যে মেগাপ্রকল্পগুলো হচ্ছে তার কাজ সম্পন্ন হলে তখন চট্টগ্রাম এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ এই শহরে বাস করে। যা ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি। পরিকল্পিতভাবে শহরের সম্প্রসারণ করতে হবে। যে শহরকে আমরা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক হাব বলছি, সে শহরের সিটি কর্পোরেশন যদি আর্থিক দৈন্যতায় ভোগে তাহলে সেই স্বপ্নের শহর আমরা কোনদিনই পাব না। আমরা যদি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এই বার্তাটি দিতে হবে যে, চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। চসিককে একটি আর্থিক দৈন্যতামুক্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এবং সিডিএসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই ছাতার নিচে আনা গেলে এর সুফল মিলবে। অবশ্য এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রশাসক যদি সারাদিন ফান্ড কালেকশনে ব্যস্ত থাকে তাহলে তিনি কাজ করবেন কখন। সিডিএ ২০৪১ সালকে মাথায় রেখে একটি মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে। এখন এই শহর যে অবস্থায় আছে। সেটাকে মাথায় রেখেই ইনক্লুসিভ মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। বর্তমানে মেয়রের যে ক্ষমতা তা দিয়ে আমরা কখনোই কাক্সিক্ষত শহর গড়ে তুলতে পারবো না। তার ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। বিশে^র সব শহরেই এই সিস্টেম আছে। বসে থাকার সময় নেই। আমাদের কিছু সিস্টেমেও পরিবর্তন আনতে হবে। কোন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই সিস্টেমগুলোকে অবশ্যই আপডেট করার সময় এসেছে।

মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী
চট্টগ্রামকে নিয়ে প্রশাসক সাহেবের যে আগ্রহ তা চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের নজর কেড়েছে। তিনি চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবেন, চট্টগ্রামের মানুষদের জন্য কিছু করতে চান। কিন্তু উনি কি প্লেনে যাবেন, না ট্রেনে যাবেন, না বাসে যাবেন সেই দিকনির্দেশনা খুঁজছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের যে বিধিমালা সেখানে বলা আছে, ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কনটেইনার টার্মিনাল হবে না। আবার কাস্টমসের বিধিমালার মধ্যে বলা আছে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করতে হবে। অথচ বন্দর ও কাস্টমসের ভবন পাশাপাশি। এই যে সমন্বয়হীনতা তা যে কত বড় সমস্যা তা আমরা এখন বুঝতেছি। ট্যাক্সের বিষয়টি সংসদের অনুমোদন লাগবে। তাই আপনি এ বিষয়ে এখনি উদ্যোগ নিতে পারবেন না। হোল্ডিং ট্যাক্সের বাইরে আপনার যাওয়ার সুযোগ নেই। একটি সভা ডাকেন, সেখানে পরামর্শক কমিটিকে রাখুন। এলজিআরডি মন্ত্রীর সামনে আমরা কথা বলবো। চট্টগ্রাম সিট করপোরেশন অধ্যাদেশ ১৯৮২ কে যতদিন আপনি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, ততক্ষণ আপনি নগর সরকার পাবেন না। আমাদের সময় নগর সরকার ছিল। ঢাকা শহরে রাজউক কোনো মার্কেট পরিচালনা করে না, তারা মার্কেট বানায়; আর পরিচালনা করে সিটি করপোরেশন। সেই ভিত্তিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সমস্ত মার্কেট পরিচালনা করবে। এটা ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।

মো. নুরুল আলম
চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম অর্থনীতির লাইফলাইনÑএই স্লোগানগুলো আমরা চট্টগ্রাম সমিতি থেকে আশির দশক থেকে দিয়ে আসছি। আমাদের সেই নব্বই দশকের যে প্রস্তাবনা তার অনেক এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমাদের চট্টগ্রামের সমস্যাগুলো আপনারা বিভিন্নজন বিভিন্ন আঙ্গিকে সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন। এখন দরকার সেগুলোকে এগিয়ে নেওয়া ও পরিকল্পনামাফিক কাজ করার জন্য একটি গাইডলাইন করা। চট্টগ্রামকে স্বাস্থ্যসম্মত সিটি করতে চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের একত্রিত করে স্বাস্থ্যখাতে লগ্নি করার অনুরোধ করতে পারেন।

মোহাম্মদ আলী
অতীতে আমরা দেখেছি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের জন্য কথা বলতেন। আজকে প্রশাসক মহোদয়ও একইভাবে কথা বলছেন। সাবেক মূখ্য সচিব মোহাম্মদ আবদুল করিম এবং দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী সাহেবও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। চসিকের লোকবল সংকট, অপর্যাপ্ত ফান্ড ও লবিস্ট গ্রুপ নিয়োগের কথা বলেছেন। সর্বোপরি চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখন আমাদের চিন্তা করতে হবে।
চট্টগ্রাম শহরের পানির উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী থেকে বর্তমানে দৈনিক ৩২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও প্রায় ২০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। তাই এই দুটি নদী নিয়ে এখন থেকে আমাদের ভাবতে হবে। পাশাপাশি শহরের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হালদা এবং কর্ণফুলী নদীর পানি রক্ষা করতে হবে। হালদা থেকে পানি উত্তোলনের আরো একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হালদা থেকে নতুন করে পানি উত্তোলন কতটুকু যুক্তিযুক্ত-তা নতুন কোনো প্রকল্প প্রণয়নে চিন্তা করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে উন্নয়নের একটি সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি সরকারি টাকারও অপচয় হচ্ছে।

প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন
আমরা যদি মাঠ করতে পারি তাহলে আমাদের সন্তানরা অন্তত বন্দী প্রতিবন্ধী হবে না। কোন কাজ করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। চট্টগ্রামে এতগুলো বড় বড় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। তারা কোন অর্থ দিচ্ছে না। এটা হতে পারে না। হকাররা একবার উঠে যায়। কিছুদিন পর আবার বসে। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, রিকসা ইত্যাদি চলাচলে শৃঙ্খলা আনার আহবান জানান। বিদ্যুতের উন্নয়নে চট্টগ্রামে প্রথম পর্যায়ে ১৪টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩টি সাব স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে জায়গা পেতে সমস্যাও হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসকের সহযোগিতা কামনা করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট